• Contact us
  • Advertising Policy
  • Cookie Policy
  • Disclaimer
  • Privacy Policy
  • Terms of Use
Friday, June 20, 2025
26 °c
Agartala
enewstime
  • Home
  • News
    • Northeast
    • National
    • International
    • Tripura News
  • Sports
    Crispin Chettri announces squad for AFC Women's Asian Cup 2026 Qualifiers in Thailand

    Crispin Chettri announces squad for AFC Women's Asian Cup 2026 Qualifiers in Thailand

    D. Deepesh and Naman Pushpak drafted into India U19 squad for England tour

    D. Deepesh and Naman Pushpak drafted into India U19 squad for England tour

    'Argentina one of the best, but India won’t go down without a fight,' says captain Salima ahead of FIH Pro League clash

    'Argentina one of the best, but India won’t go down without a fight,' says captain Salima ahead of FIH Pro League clash

    Washington Sundar has been my inspiration since I was young: Sai Sudharsan

    Washington Sundar has been my inspiration since I was young: Sai Sudharsan

    Madhya Pradesh League: Arshad lauds 'superhero of the match' Shivang as Bhopal Leopards beat Bundelkhand Bulls

    Madhya Pradesh League: Arshad lauds 'superhero of the match' Shivang as Bhopal Leopards beat Bundelkhand Bulls

    Club WC: Botafogo beat Sounders; Palmeiras and FC Porto play out goalless draw

    Club WC: Botafogo beat Sounders; Palmeiras and FC Porto play out goalless draw

    Markram’s 136 absolutely as good as any other WC final winning knocks: Ponting

    Markram’s 136 absolutely as good as any other WC final winning knocks: Ponting

    Club WC: PSG crush Atletico Madrid to get off to flying start

    Club WC: PSG crush Atletico Madrid to get off to flying start

    England Tests great chance for young Indian team to settle and challenge any side: Venkatapathy Raju

    England Tests great chance for young Indian team to settle and challenge any side: Venkatapathy Raju

  • Business
  • Entertainment
  • Health
  • Features
  • TendersNew
No Result
View All Result
  • Home
  • News
    • Northeast
    • National
    • International
    • Tripura News
  • Sports
    Crispin Chettri announces squad for AFC Women's Asian Cup 2026 Qualifiers in Thailand

    Crispin Chettri announces squad for AFC Women's Asian Cup 2026 Qualifiers in Thailand

    D. Deepesh and Naman Pushpak drafted into India U19 squad for England tour

    D. Deepesh and Naman Pushpak drafted into India U19 squad for England tour

    'Argentina one of the best, but India won’t go down without a fight,' says captain Salima ahead of FIH Pro League clash

    'Argentina one of the best, but India won’t go down without a fight,' says captain Salima ahead of FIH Pro League clash

    Washington Sundar has been my inspiration since I was young: Sai Sudharsan

    Washington Sundar has been my inspiration since I was young: Sai Sudharsan

    Madhya Pradesh League: Arshad lauds 'superhero of the match' Shivang as Bhopal Leopards beat Bundelkhand Bulls

    Madhya Pradesh League: Arshad lauds 'superhero of the match' Shivang as Bhopal Leopards beat Bundelkhand Bulls

    Club WC: Botafogo beat Sounders; Palmeiras and FC Porto play out goalless draw

    Club WC: Botafogo beat Sounders; Palmeiras and FC Porto play out goalless draw

    Markram’s 136 absolutely as good as any other WC final winning knocks: Ponting

    Markram’s 136 absolutely as good as any other WC final winning knocks: Ponting

    Club WC: PSG crush Atletico Madrid to get off to flying start

    Club WC: PSG crush Atletico Madrid to get off to flying start

    England Tests great chance for young Indian team to settle and challenge any side: Venkatapathy Raju

    England Tests great chance for young Indian team to settle and challenge any side: Venkatapathy Raju

  • Business
  • Entertainment
  • Health
  • Features
  • TendersNew
No Result
View All Result
enewstime
  • Home
  • News
  • Sports
  • Business
  • Entertainment
  • Health
  • Features
  • Tenders
Home Art & Culture

রাঙামাটির রাজকাহিনী

ENEWSTIME Desk by ENEWSTIME Desk
August 2, 2017 - Updated on August 3, 2017
in Art & Culture
রাঙামাটির রাজকাহিনী
36
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

Paramita Gharai

ADVERTISEMENT

শুক্লাষ্টমীর চাঁদ মুখ ঢেকেছে মেঘের আড়ালে।আষাঢ় মাসের ঝিরঝিরে বৃষ্টি গায়ে মেখে পাহাড়ের মাটি নরম।জোনাকি পোকার দলও আজ ঘুমিয়ে পড়েছে।মাটির সোঁদা গন্ধ উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছে রাজার হাতি,শূঁড় দিয়ে ডালপালা ভেঙে তৈরী করে নিচ্ছে চলার পথ।হাতির পিঠে স্বয়ং রাজা গোবিন্দমানিক্য। ওহো!ভুল হল। এখন আর তিনি রাজা নন। এখন তিনি সিংহাসন চ্যুত পলাতক। ভাই নক্ষত্ররায়ের ষড়যন্ত্রে প্রিয় উদয়পুর ছেড়ে চলে যেতে এই উৎসবের রাতেই।

উৎসবের রাত। জগন্নাথ দিঘির চারধার লক্ষপ্রদীপের আলোয় ঝলমল করছে। রিয়াং , ত্রিপুরী,জামাতিয়া , মগ ,হালুই
আর সকল উপজাতির মানুষেরা ভিড় জমিয়েছে চোদ্দ দেবতার মন্দিরে। নতুন পাছড়া রিসা  গায়ে জড়িয়ে আর রামকলা দানার গয়নায় সেজে মেয়েরা হাতে তুলে নিচ্ছে বিজুর পাত্র। পুরুষরাও মেতেছে সুরাপানে। এর মধ্যেই হাড়িকাঠের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া চ্যাটচ্যাটে  রক্তপ্রনালী থেকে  কেউবা প্রসাদী লহু মাথায় ঠেকিয়ে কপালে এঁকে নিচ্ছে রক্ততিলক। খার্চি পুজোয় মত্ত উপজাতিরা তখনো জানেনা তাদের রাজাবদলের গল্প।

বহু যুগ ধরেই ত্রিপুরার রাজপরিবার নরবলি দিয়ে আসছেন এই চোদ্দ দেবতার মন্দিরে।মহারাজা ধন্যমানিক্য আগেই ঘোষনা করেছিলেন কেবলমাত্র অপরাধী ও যুদ্ধবন্দী শত্রুদেরই  বলি দেওয়া হবে। মহারাজ গোবিন্দমানিক্য এগিয়ে এলেন আরও একধাপ। তিনি রাজ্যে নরবলি নিষিদ্ধ  করলেন। নিষিদ্ধ করলেন দেবতাকে উৎসর্গ করে সকল রকম প্রাণীহত্যা। রাজপুরোহিত বা চন্তাই আর তার সঙ্গীসাথীরা  গোবিন্দমানিক্যের এই ঘোষনাকে  ধর্মবিরোধী তকমা দিলেন। পিতা কল্যানমানিক্যের মৃত্যুর পর থেকেই  বিভিন্ন কৌশলে গোবিন্দমানিক্যের বিরোধিতা করে আসছিলেন বৈমাত্রেয় ভাই নক্ষত্র রায়। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ভুল হল না নক্ষত্রের। দাদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন নক্ষত্ররায়। ভ্রাতৃযুদ্ধে রক্তপাত করতে চাইলেন না মহারাজ গোবিন্দমানিক্য।  খার্চি পুজোর শুভ ক্ষণে উদয়পুর ছেড়ে রওনা দিলেন দক্ষিণের জঙ্গলভরা পাহাড়ের দিকে। বিনাযুদ্ধে রাজমুকুট শিরবদল করল। গোবিন্দমানিক্য রাতেই পার হয়ে যাবেন রাজনগর,পৌঁছবেন রিয়াং প্রজাদের গ্রামে।

গোবিন্দমানিক্যের প্রতিদিনের সূর্যপ্রণাম  গোমতীর জলে স্নান সেরে, সিক্ত বস্ত্রে, নদীর উত্তর তীরে দাঁড়িয়ে। জঙ্গল মধ্যস্থ এক পাহাড়ি ঝর্ণার তীরে মহারাজ সূর্য প্রণাম করলেন । আরো পথ চলতে হবে। হাতিটির শূঁড়ে হাত বুলিয়ে আদর করলেন গোবিন্দমানিক্য। পথশ্রমে ক্লান্ত হাতি সোঁ সোঁ করে পান করল ঝর্ণার জল। মহারাজ মাহুতকে আদেশ করলেন জলযোগ করে নেবার। নিজে রইলেন উপবাসী।ঝিরঝিরে বৃষ্টি মাখা পাহাড়িয়া ঘন জঙ্গলে চলার গতি খুবই ধীর।শেষ বিকেলের মেঘভাঙা পড়ন্ত সূর্যের আলো পাহাড়ের গা বেয়ে যখন লুকোচুরি খেলছে জঙ্গলের ওপর,তখন রাজা নির্দেশ দিলেন মাহুতকে,তাকে হাতি নিয়ে ফিরে যেতে হবে উদয়পুরে। এবার হেঁটেই বাকীটা পথ পাড়ি জমাবেন রাজ্যহীন পলাতক রাজা গোবিন্দদেব।  ”মানিক্য”উপাধি এখন নক্ষত্রের মুকুটে। হাতির পিঠ থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই জঙ্গলের মাটি  ফুঁড়ে বেরিয়ে এসে পথরোধ করে দাঁড়াল দুজন পুরুষ।একজনের হাতে বর্শা,অন্যজনের হাতে কুঠার। সাংকেতিক ভাষায় কথা বিনিময় হল রাজার সাথে। চর মারফত রিয়াং সর্দার আমন্ত্রন করেছিলেন  রাজাকে তাদের গ্রামে আশ্রয় নিতে। চোখের জলে  বিদায় নিল মাহুত। গোবিন্দদেব আদর করলেন তার প্রিয় হাতিটিকে।তারপর নতুন দুই দেহরক্ষীর সঙ্গে  রিয়াংদের গ্রামের দিকে এগিয়ে চললেন।

ADVERTISEMENT

খাঁজকাটা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে সর্দারের সঙ্গে বারান্দায় উঠে এলেন গোবিন্দদেব। মূলিবাঁশ আর বেতের বুননে মজবুত ছাউনিটি দাঁড়িয়ে আছে চারকোনয়ালা আয়তাকার কাঁঠাল কাঠের দেওয়ালের ওপর ,জমি থেকে ছ’সাত হাত উঁচুতে। ঘরের আসবাব বলতে বাঁশের মাদুর,হুঁকো,জল রাখার বাঁশের চোঙ্ আর কিছু কাপড়চোপড়। গোবিন্দদেবের খাবার আসবে সর্দারের বাড়ি থেকে ,তাই রান্নার ব্যবস্থা রাখা হয়নি মহারাজের বাড়িতে। হ্যাঁ মহারাজ। রিয়াংরা মেনে নেয়নি নক্ষত্র রায়ের অধীনতা। গোপনে ”গোবিন্দমানিক্য”কে আশ্রয় দিয়ে নিরাপদে পৌঁছে  দেবে রিয়াং সর্দার ত্রিপুরা রাজ্যের বাইরে। রাজার বিশ্রামের আয়োজন সেরে সর্দার নেমে এলেন ,প্রহরার ব্যবস্থা মজবুত করে ফিরলেন নিজের ঘরে।

গোবিন্দদেব পথশ্রমে ক্লান্ত হলেও নিশ্চিন্ত  হয়ে দুচোখের পাতা এক করতে পারছেন না। আগামীকাল এসে পৌঁছবেন মহারানী গুণবতী। মহারানীকে রিয়াং সর্দার ”মা” বলে সম্বোধন করেন আর সে কারনেই রাজ্যহীন মহারাজকে আশ্রয় দিয়েছেন তিনি। বেশ ক’মাস আগের ঘটনা। জঙ্গল থেকে কাটা বাঁশ  গোমতী নদীপথে ভাসিয়ে আনার সময় রিয়াং সম্প্রদায়ের কয়েক জন গঙ্গাপুজো উপলক্ষে বাঁধা দড়ি কেটে ফেলে।সরকারী কর্মচারীরা তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে অতিরিক্ত শুল্ক দাবী করলে রাজার বিরুদ্ধে রিয়াং রা বিদ্রোহ ঘোষনা করে। সেনা পাঠিয়ে বিদ্রোহীদের দমন করেন মহারাজা গোবিন্দমানিক্য। বিদ্রোহী সর্দারদের বন্দী করে উদয়পুরে নিয়ে এসে প্রাণদন্ডের আদেশ দেন তিনি। অবস্থার ভয়াবহতা কল্পনা করে ভবিষ্যতের অশান্তি রোধ করতে এগিয়ে আসেন মহারানী গুনবতী।নিজের স্তন্যদুগ্ধ একটি পাত্রে পূর্ণ করে পান করতে দেন রিয়াং সর্দারদের। প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেন মহারাজের বিরুদ্ধে কখনো অস্ত্র ধরবে না রিয়াং উপজাতিরা।

এইসব ভাবতে ভাবতেই  ঘুমিয়ে পড়েছিলেন গোবিন্দদেব। হঠাৎ কিসের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল । কাছেই রাখা তরোয়ালটা চোখের পলকে  হাতে তুলে নিলেন। এখনো কি অবিশ্বাস  দানা বেঁধে আছে মনের কোনো এক কোনে? আশ্রয়দাতাকে ভরসা করতে দ্বিধা বোধ করছেন? আবার শব্দ। খোলা তলোয়ার হাতে বের হয়ে এলেন বারান্দায়। পাহারাদাররা ঘুমে ঢুলছে , কেউ কোথাও নেই। কান সজাগ করে চারিদিকটা একবার দেখে নিলেন গোবিন্দদেব। না! কোথাও কিছু নেই।তাহলে ….। পেছনদিকের বারান্দায় গেলেন এবার।বাড়ির এদিকটায় আগে আসা হয়নি। একটা কাঁঠাল গাছের ডাল এসে পড়েছে এই বারান্দায়। গাছে বেয়ে  অতর্কিত আক্রমণের পথ তাহলে তৈরী হয়েই আছে। কিন্তু শব্দটার উৎস এখনো খুঁজে পাননি তিনি। আবার সেই শব্দ হতেই  চোখে পড়ল এবার। একটু দূরেই একটা বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এক শিয়াল। কিছুটা উঠেই আবার পিছলে পড়ে যাচ্ছে মাটির ওপর। শব্দটা তারই। বারান্দায় উঠে খাঁচায় রাখা মুরগী গুলোর নাগাল  হতভাগাটা কিছুতেই পেলো না।

খার্চি পুজোর রাত ভোর হতেই উপজাতি মেয়ে পুরুষ ফিরে চলল তাদের গ্রামে। ফিরতি পথেই কানাঘুষোয় জানতে পারলো রাজাবদলের গল্প। পরদিনই গ্রামে গ্রামে উপজাতি সর্দারদের কাছে খবর পৌঁছল – মহারাজা গোবিন্দমানিক্য পলাতক, ইতিমধ্যে উদয়পুর ছেড়ে জঙ্গলের পথে রওনা হয়েছেন মহারানী গুণবতী। মহারাজা হতে চলেছেন গোবিন্দমানিক্যের বৈমাত্রেয় ভাই নক্ষত্র রায়। কাল বাদে পরশু তাঁর অভিষেক ।সর্দারদের তাই নিমন্ত্রন। গোমতী নদীর তীরে চোদ্দো দেবতার মন্দিরে হল নক্ষত্র রায়ের অভিষেক ,নতুন নাম হল ছত্রমানিক্য। মহারাজা ছত্রমানিক্যের আদেশে শুরু হল পলাতক গোবিন্দদেবের  সন্ধান। ইতিমধ্যে খবর এল কুমিল্লা থেকে।গোবিন্দমানিক্যের প্রথম পুত্র রামদেব ঠাকুর যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন মহারাজ ছত্রমানিক্যের বিরুদ্ধে। আমতলি গ্রামে মুখোমুখি হলেন তাঁরা। বীরের লড়াই লড়েও হেরে গেলেন রামদেব ঠাকুর। ছত্রমানিক্যের রাজসিংহাসন নিরাপদ হল। নতুন রাজা হাত লাগালেন গোমতীর তীরে নতুন প্রাসাদ তৈরীর কাজে। মন্দিরে অবাধে চলতে লাগল নরবলি। সঙ্গে নরবলিও। শুধু খোঁজ পেলেন না পলাতক গোবিন্দ দেবের।

গোবিন্দদেবের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ভুল যে করেনি তার প্রমাণ মিলল ক’দিন পরেই। সর্দার একটা লোককে পিছমোড়া করে বেঁধে হাজির করল মহারাজার সামনে। ভিনগ্রামের লোকটি যথাযথভাবে বলতেই পারেনি তার সেখানে আসার কারন। লোকটার ব্যবস্থা সর্দারই করল।কিন্তু গোবিন্দমানিক্যের কপালের ভাঁজ গভীর হল। রিয়াংরা মহারানীর সম্মান রাখতে  অস্ত্র ধরবে না বটে, কিন্তু আনুগত্য প্রকাশে তাদের বাধা আছে এখনও। সর্দারকে আদেশ দিলেন গোবিন্দমানিক্য আরাকান রাজাকে খবর পাঠাতে। চর গেল পূর্বদিকের পাহাড়ে। কেটে গেল একপক্ষকাল। দুর্গম দুর্ভেদ্য পাহাড়ি জঙ্গল পার হয়ে কোন প্রত্যুত্তর এসে পৌঁছল না গোবিন্দদেবের কাছে। কিন্তু রিয়াং বসতি আর নিরাপদ নয়। গুপ্তঘাতক আবার ধরা পড়েছে  স্বয়ং গোবিন্দদেবের বাড়ির সামনে। রাতের  ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ঘুমের আমেজে চোখ জুড়িয়ে এসেছিল পাহারাদারদের , গোবিন্দদেব স্বয়ং ছিলেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।শুধু রানী গুণবতীই চোখের পাতা এক করতে পারেননি কি যেন এক অজানা আশঙ্কায়। রাত্রি তৃতীয় প্রহরে মোরগের ডাক—”কোঁকর কোঁক”। তার সঙ্গে ডানা ঝাঁপটানোর শব্দ। পাশের ঘর থেকে শব্দটা আসছে। মোরগটি পরিত্রাহি চিৎকার করে ডেকে চলেছে। ভাম বা শেয়াল এসে ধরলো নাকি অসহায় প্রাণীটাকে? না কি নাগদেবতা হানা দিল ওর খাঁচার ভেতর? মহারাজও চোখ খুলেছেন ইতিমধ্যে। ভেসে এল নীচে ধস্তাধস্তির শব্দ,মানুষের কন্ঠস্বর ,চিৎকার।তরোয়াল নিয়ে বেরিয়ে এলেন গোবিন্দমানিক্য।দেখে নিলেন ছত্রমানিক্যের চরটিকে। আর এক মুহূর্ত এখানে নয়। সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে নিলেন ভবিষ্যত কর্মসূচী।

বঙ্গোপোসাগরের তীরে চট্টগ্রাম মুঘল সম্রাট আরঙ্গজেবের অধীনে বাংলার  সুবেদার শাহ্ সুজার এক্তিয়ারে আর সুজা তখন প্রাণরক্ষার তাগিদে পলাতক। বাদশাহের তাম্রপত্র ইতিমধ্যেই নির্দেশ নিয়ে এসেছিল মহারাজা গোবিন্দমানিক্যের উদ্দেশ্যে— ” …….আমি সুনিশ্চিতভাবে অবগত হইয়াছি যে,আমার চিরশত্রু ,সুজা ভবদীয় রাজ্যে গোপনে অবস্থান করিতেছে।……..আমার লিখনানুসারে আপনি উক্ত শত্রু ধৃত করিয়া সত্বর আমাকে প্রেরণ করেন।….. নতুবা ইহা নিশ্চয় জানিবেন – আপনার রাজ্যে উক্ত অপরিণামদর্শীর অবস্থান করার জন্য ভবিষ্যতে আমাদিগের পরস্পরের মধ্যে বিবাদ ও মনোমালিন্য সংঘটিত হইবে।……”

এই চিঠি গোবিন্দমানিক্যের কাছে পৌঁছানোর আগেই সুজা ত্রিপুরা ছেড়ে চলে যান আর আরঙ্গজেবকে তুষ্ট করতে বছরে হস্তীকর দেবেন বলে স্বীকৃত হন রাজা । কিন্তু সুজা আর তাঁর পরিবারের হদিশ বাদশাহ পেলেন না। উদয়পুরের রাজসিংহাসনের পাশা ওল্টানোতেও হাত দিলেন না মুঘলসম্রাট। ছত্রমানিক্যের ওপর দায়িত্ব পড়ল সুজাকে খুঁজে বের করবার।রিয়াং বসতিতে গুপ্ত ঘাতক হানা দেবার দুদিন পরেই গোবিন্দদেব রওনা দিলেন  চট্টগ্রামের পথে। সঙ্গে মহারানী গুনবতী। ভোরের আলো ফোটার আগেই সর্দারের থেকে বিদায় নিলেন সস্ত্রীক গোবিন্দদেব। সঙ্গে দুজন রক্ষীর ব্যবস্থা করলেন সর্দার,পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে তারাই। গোবিন্দদেব চললেন হেঁটে , রানির পালকির পাশে পাশে। রাজপোষাক ছেড়ে তিনি তখন গোবিন্দদেব, সাধারন এক ত্রিপুরী । হাতে বাঁশের লাঠি আর মাথায় সাধারন পাগড়ি , চড়াইএর পথে চলেছেন জঙ্গল ভেঙে। মৃগয়া করতে বহুবার জঙ্গলে গিয়েছেন তিনি ,তবে তা উদয়পুরের উত্তরদিকে। পার্বত্য এলাকার গভীর জঙ্গলে  প্রথম পা রাখলেন গোবিন্দদেব। লালমাটির উদয়পুর থেকে ক্রমশ পাথুরে মাটির দিকে এগিয়ে চলেছেন তাঁরা। মূলিবাঁশের ঝাড় যেখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে। তার পাশেই  করে কোমর দোলাচ্ছে লিকলিকে বেতগাছ। হনুমান আর কালোচোখো বাঁদরের দল লাফিয়ে বেড়াচ্ছে কলাবনে। সেগুনের বড় বড় পাতায় ফাঁকে মৌমাছিরা আগলে রেখেছে মধুভরা চাক। মাটিতে নেমে আসা বটের ঝুরির সঙ্গে মিলেমিশে বেড়ে ওঠা বুনো ঘাসের মাথায় মাথায় নাচে ব্যস্ত গঙ্গাফড়িং।অজানা অতিথিদের সাড়া পেয়ে গর্তে মুখ লুকোচ্ছে  সজারু,সরসর করে গা ঘেষে লাফিয়ে ছুট লাগালো খরগোস। ইতিউতি ফুটে থাকা টুকটুকে লাল জবাফুলের সাথে মিলেমিলে এক হয়ে গেছে জঙ্গলের লাল মুনিয়াকে। পাহাড়ের মাথার ওপরে মেঘলা আকাশের ছাউনির নীচ দিয়ে ”টি টি” করে ডাকতে ডাকতে উড়ে যাচ্ছে সবুজ টিয়ার দল। পাহাড়ের কোনো কোনা থেকে নেমে আসা ঝোরায় জল খেতে আসা হরিণের দল চমক লাগে অচেনা গন্ধে। দূর থেকে ভেসে আসা হাতির বৃংহণে দৌড়ে পালাল গাউরের দল। পাশের বিশাল মোটা  সুন্দিগাছের ডালে বসে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠল সোনালী রঙা বাঁদরের দল। হাসির সাথে সুর মিলিয়ে ভেসে এল ”হুপু,হুপু”- উল্লুকের ডাক।  রানি গুণবতী দুচোখ ভরে মিটিয়ে নিচ্ছেন মনের তৃষ্ণা। এই ত্রিপুরা তাঁর সম্পূর্ণ অচেনা ,অজানা। গোবিন্দদেবই বা কতটুকু চিনতেন এই পাহাড়ি জংলী ত্রিপুরাকে?

দশদিনের দুর্গম পথে কখনো সঙ্গী হয়েছে ঝিরঝিরে বৃষ্টি ,মুখোমোখি হয়েছেন বাজ-বিদ্যুৎ-প্রবল বৃষ্টি। রাত কাটিয়েছেন বড় পাথরের তলায় বা গুহার মধ্যে ,কখনো বা বট-অশ্বত্থ আশ্রয়ে।বালিমেশানো ভিজে মাটিতে হড়কে গিয়ে পড়ে গেছেন পাথরের ওপর, মাটিতে বিছানো লতায় জড়িয় গেছে পালকিবাহকদের পা,গাছের ডাল থেকে কপালে চুম্বন করতে মুখ তুলে চেয়েছে লাউডগা।উদয়পুরের রাজপ্রাসাদে গোবিন্দমানিক্যের ঘরের কোনে কোনে ধাক্কা খেয়ে  রাজলক্ষী আছড়ে পড়ছে সুন্দিকাঠের পালঙ্কে ।এবার বিদায় দেবার পালা রিয়াং দেহরক্ষীদের। রক্ষীরা আড়াল হতেই  গোবিন্দমানিক্য পা চালালেন উৎরাইএর দিকে।

চন্তাইকে সন্তুষ্ট রেখে স্বাধীনভাবেই রাজ্য চালনা করছিলেন ছত্রমানিক্য। দিচ্ছিলেন যোগ্যতার পরিচয়ও। রিয়াং প্রজারা সানন্দে সমর্থন করেছিল নতুন রাজাকে। সিংহাসনে বসবার আগেই বাংলার নবাবের সঙ্গে  বন্ধুত্ব করছিলেন ছত্রমানিক্য। উদ্দেশ্য ছিল একটাই , গোবিন্দমানিক্যকে সরিয়ে ত্রিপুরার রাজসিংহাসন দখলের ষড়যন্ত্রে নবাবকে সঙ্গী করা।পরিবর্তে নবাবকে দিতে হবে বাৎসরিক শর্তের ভিত্তিতে ত্রিপুরার জঙ্গলের হাতি। শর্তের ভিত মজবুত করতে বাংলায় রাজবংশীয় জামিনদার রাখার নবাবী আবদার ও মেনে নেন ছত্রমানিক্য।

রাজসভায় এসে সিংহাসনে সবে বসেছেন ছত্রমানিক্য। রাজ সিংহাসনের ডানদিকে রাখা রাজবংশীয় প্রতীক চন্দ্রধ্বজ আর বীরত্বের চিহ্নস্বরূপ শ্বেতপতাকা। সিংহাসনের বাঁদিকে রজতশুভ্র অভয়মুদ্রা।ষোলোটি সিংহবাহিনী আটকোন বিশিষ্ট সিংহাসনে বসতেই জবাবদিহি চাইলেন  ছোটভাই জগন্নাথ রায় । দরবারের সভাসদ ও বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীর সর্দাররাও রাজার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। ”কোন অধিকারে ত্রিপুরার বনজ সম্পদকে বার্ষিক খাজনা হিসেবে পাঠানোর চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন মহারাজ?’ ”কেনই বা রাজবংশীয় কেউ বাংলার নবাবের জামিনদার হবার অপমান সহ্য করবে?”বিদ্রোহের আশঙ্কায় কেঁপে উঠল নতুন রাজার বুক।সিংহাসন বিপদমুক্ত করতে  গোবিন্দদেবের স্নেহভাজন জগন্নাথ কে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করবার সুযোগ খুঁজছিলেন ছত্রমানিক্য। রাজদরবারে রাজদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে ত্রিপুরা ছাড়ার নির্দেশ দিলেন রাজা ছত্রমানিক্য। প্রকাশ্যে অপমান করলেন সম্মানীয় সভাসদদের।  গোবিন্দমানিক্যকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন  শপথ করে জগন্নাথ রায় উদয়পুর ছাড়লেন ।

উৎরাইএর পথ ধরে ফেনীনদীকে পেছনে ফেলে আরো এগিয়ে চললেন গোবিন্দদেব। ”কোথায় চলেছি আমরা?” মহারানি গুনবতীর ধৈর্যের বাঁধ এবার ভাঙতে চলেছে। গোবিন্দদেব আশ্বস্ত করলেন-”আর মাত্র দুদিন রানি,তারপরই আমরা পৌঁছবো”। কৌতুহলে আগল দিয়ে রানি পালকির গায়ে হেলান দিয়ে চোখ বুজলেন। প্রথম ক’দিন তিনি মন ভরে নিয়েছেন ত্রিপুরার সবুজ পাহাড়কে দেখে । কিন্তু যতদিন এগিয়েছে মনের গভীরে জায়গা করে নিচ্ছে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। কুমিল্লা থেকে এখনো পুত্র রামদেব ঠাকুরের কোনো খবর আসেনি। জানেন না স্নেহের দেবর জগন্নাথ রায় নক্ষত্রের সাথে আপোষ করলেন কিনা। কেমনই বা আছে ত্রিপুরার প্রজারা? গোবিন্দদেবের ডাকে সম্বিত ফিরল রানির। ”ঐ যে দূরে দেখা যাচ্ছে  প্রাসাদ,আমরা সেখানেই যাব”। রাজার তর্জনীর নির্দেশ বরাবর চোখ রাখলেন রানী। পাহাড় জঙ্গল ভেদ করে দৃষ্টি আটকালো এক ভগ্নপ্রায় প্রাসাদের চুড়োয়।প্রাসাদের পেছনে মাথা তুলে আছে পর্বতশ্রেণী,সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে কাসলং নদীর একটা শাখা, মাইনী। ”এখানে প্রাসাদ!” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন রানি। জলদ গম্ভীর স্বরে গোবিন্দদেব জানালেন-”আমার পূর্বপুরুষ মহারাজ রত্নমানিক্যের বাসগৃহ”।

শাহজাহান যখন দিল্লীর মসনদে ছিলেন তখন মহম্মদ সুজার বিশেষ সমস্যা ছিলনা। বাংলার সুবেদার তখন ব্যস্ত ছিলেন রাজ্যের সীমানা পূর্বদিকে চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে আরো বাড়ানোর জন্য। সুলতান সুজাউদ্দিনের নজর পড়েছিল ত্রিপুরার সমতল ভূমি ছাড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আর আরাকানের দিকে। শুধুমাত্র মুঘল সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়িয়ে বাদশাহর বাহবা কুড়োনো একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলনা সুজার, আরাকানের শ্বেতহস্তীর কথা সুজার জানা ছিল। দিল্লীর দরবারে পালা বদলের দামামা যে শুরু হয়ে গিয়েছিল তাই নিয়ে বিশেষ মাথাব্যাথা বাংলার সুবেদারের ছিল না। বরং কল্যানমানিক্যের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন এক বিশাল সেনাবাহিনী,নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জানবেগ খান। গোবিন্দদেবের পিতা কল্যানমানিক্যের রাজত্বকালের আগে থেকেই মুঘলরা বারবার ত্রিপুরা দখলের চেষ্টা করেছে। যুবরাজ গোবিন্দদেব  একবছর  জানবেগ খানের বাহিনীকে  ঠেকিয়ে রাখলেন সাহস আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। মির্জাপুরের কয়েকটি জেলা মুঘলরা দখল করলেও ত্রিপুরার একটা দুর্গও দখল করতে পারলো না। দিল্লীর মসনদে ততদিনে লেগে গেছে ভ্রাতৃহত্যার রক্ত । বাদশাহ আরঙ্গজেব সুজাকে হত্যা করে নিষ্কন্টক করতে চান দিল্লীর সিংহাসন। বাংলার সুবেদার মহম্মদ সুজা তাই ত্রিপুরা রাজার আশ্রয়প্রার্থী। ভাগ্যের কি  নিষ্ঠুর পরিহাস! ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমানিক্যের কাছে এসে পৌঁছেছে বাদশাহ আলমগীরের সেই চিঠি। তারপর? তারপর উদয়পুরের সিংহাসনেও ঘটে গেল পালাবদল। গোবিন্দমানিক্য বিনা রক্তপাতে সিংহাসন ছাড়লেন । নতুন মহারাজা ছত্রমানিক্যের  আদেশে গুপ্তচর ছড়িয়ে পড়ল সারা রাজ্যে। খোঁজ চাই সুজার। ধরিয়ে দিতে পারলে মিলবে মুঘল বাদশাহের বন্ধুত্ব। ত্রিপুরা নিরাপদ থাকবে মুঘল সাম্রাজ্যের বাইরে স্বাধীন রাজ্য হয়েও। সুজা সপরিবারে রওনা দিলেন দক্ষিণদিকে, ছত্রমানিক্যের নাগালের বাইরে ।

রত্নফা ওরফে রত্নমানিক্যের প্রাসাদে দিন কাটতে লাগল গোবিন্দদেব আর গুণবতী দেবীর।বাংলার সুলতান রুকনউদ্দীন বরবকশাহর সাহায্যে ত্রিপুরাকে সংগঠিত করে নতুন রাজ্যের সূচনা করেন রত্নমানিক্য। বাংলা আর পার্সি ভাষার প্রচলন করেন ত্রিপুরার প্রসাশনিক কাজে। প্রশাসনকে সুলতানি শাসনের অনুকরণে সাজিয়ে তোলেন রত্নমানিক্য। উদয়পুরে হয় নতুন বাসগৃহ। গোবিন্দদেব আর গুনবতীর পায়ের ছোঁয়ায় মাইনী নদীর তীরে এই ছোটো রাঙ্গামাটি গ্রামে বড়সড় ঢেউ এসে লাগল। রাজধানী উদয়পুর থেকে পালাবদলের খবর এই গ্রামে এসে পৌঁছতে এখনো অনেক দেরী। তবু এরা যে রাজবংশেররই লোক সে বিষয়ে কারোর সন্দেহ রইল না। না হলে রাজবাড়িতে উঠবে কেন? তাছাড়া চেহারা ,কথাবার্তা ,আচরণে আভিজাত্যের ছাপ। গুণবতীদেবীর সুন্দর ব্যবহার আর বিভিন্নরকম সাহায্য গ্রামের নারীপুরুষ সবাইকে মুগ্ধ করল। তেমনি মুগ্ধ করল গোবিন্দদেবের আলাপচারিতায়। চাকমা ,ত্রিপুরী আর মগ গোষ্ঠীর মানুষেরা মিলেমিশে থাকে রাঙ্গামটিতে। গ্রামের ছোটখাট সমস্যা নিয়ে মাঝে মধ্যেই সাধারন গ্রামবাসীরা গোবিন্দদেবের শরনাপন্ন হয়। গোবিন্দদেব তাঁদের পাঠিয়ে দেন গোষ্ঠীর সর্দারদের কাছে। আবার দুই গোষ্ঠীর মধ্য সমস্যা তৈরী হলে সর্দাররা এসে হাজির হয় গোবিন্দদেবের কাছে। গোবিন্দদেব উদয়পুরের রাজদরবারে যাবার পরামর্শ দেন। কিন্তু অত দূরের পথ যাবে কি করে তারা?তাছাড়া এই কদিন খাবে কি তাঁর পরিবার? গোবিন্দদেব যখন রাজপরিবারেই লোক তাঁর বিচারই রাজার বিচার। একদিন এরকমই এক বিচারসভায় ভিনদেশী একটি লোককে এনে হাজির করে এক চাকমা যুবক। ভিনদেশীর মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা।দুহাত পিছমোড়া করে জংলী লতা জড়ানো। গোবিন্দ দেবের আদেশে মুখের কাপড় সরিয় ফেলল যুবক। আবেগ সামলে নিলেও চোখে মুখে ফুটে উঠল আনন্দের প্রকাশ। ”এক্ষুণি মুক্ত কর একে” স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বেরিয়ে এল আদেশ। বুকে জড়িয়ে ধরলেন পুত্র রামদেবকে।গোবিন্দদেবের গতিবিধি প্রথমদিন থেকেই অনুসরণ করছিলেন জগন্নাথ রায়।নির্দ্বিধায়  দক্ষিণদিকের জঙ্গল ভেঙে ভোর রাতে হাজির হলেন রিয়াংদের গ্রামে। মোরগের ডাকে সদ্য ঘুমভাঙা পাহাড়ি গ্রামে সূর্যদেব তখন আলপনা আঁকা শুরু করেছেন। রাতের পাহারা শেষ করে গ্রামে ফিরে এসেছে জুমিয়ারা। মেটে আলু, কন্দ, জ্বালানী কাঠ আনতে  ইতিমধ্যে জঙ্গলে চলে গেছে গ্রামের  কয়েকজন। সর্দারের মুখোমুখি হয়ে জগন্নাথ রায় জানালেন যে তিনি মহারাজ গোবিন্দমানিক্যের সাক্ষাৎপ্রার্থী। রাজ বিদ্রোহী জগন্নাথ রায় শেষের দিকে জড়িয়ে পড়েছিলেন ছত্রমানিক্যের বিছানো রাজনীতির কূটনৈতিক জালে । গোবিন্দমানিক্যের পার্বত্য চট্টগ্রাম চলে যাবার খবর তাঁর অগোচরে রয়ে গেছে সে কারনেই।পরদিন ভোরেই জগন্নাথ রায় বড়ভাই গোবিন্দদেবের পথেই পা বাড়ালেন।  সেই দুইজন রক্ষী কয়েক মাসের তফাতে আবার সঙ্গী হল রাজ পরিবারের সদস্যদের একত্রিত করার জন্য। রক্ষী দুজন গেল সেই পর্যন্তই সেখানে গোবিন্দদেব আর গুণবতী দেবী বিদায় জানিয়েছিলেন তাদের। রক্ষীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই পথ চলেছেন জগন্নাথ রায়।জেনে নিয়েছেন চারপাশের গাছগাছালি,পাহাড়, জাতিগোষ্ঠী আর গ্রামের খবর।সবশেষে পেলেন মাইনী নদীর তীরে ভেঙে যাওয়া এক রাজবাড়ির হদিশ । রাজপুরুষের চোখে  একচিলতে হাসি  খেলে গেল।
বাংলায় ফিরে যাবার পথ চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে এককালের বাংলার সুবেদার মহম্মদ সুজার।বাদশাহ আলমগীরের নির্দেশে ছত্রমানিক্যের তল্লাশি ত্রিপুরার সমতল বা  জঙ্গলভরা পাহাড়ও সুজাকে নিরাশ্রয় করল। খোলা রইল একমাত্র দক্ষিণের বন্দর চট্টগ্রাম। বাদশাহ শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র জীবনের প্রথমভাগ কাটিয়েছেন রাজধানী দিল্লীর বুকে। প্রশাসনিক প্রয়োজনে শিখেছেন যুদ্ধবিদ্যা ,বাদশাহী ঐতিহ্য অনুসরণ করে রপ্ত করেছেন বিলাসিতা।প্রাণ বাঁচাতে শাহ সুজা চড়াই পথে রওনা দিলেন দক্ষিণের অরণ্য ঘেরা শ্বাপদ সঙ্কুল পাহাড়ে।সঙ্গে স্ত্রী পিয়ারীবানু ,দুই ছেলে আর তিন মেয়ে। ছোটো আমিনার বয়স মাত্র দুই। দিনরাতের হিসেব এক করে চলতি পথে ঝর্ণা অথবা কোনো ছোটোনদীর জলে তৃষ্ণা মিটিয়ে নেওয়া অথবা গাছের ফলে পেটের জ্বালা দূর করা। তবে সজাগ থেকে গুপ্তচরের নজর এড়িয়ে চলাটাই প্রথম লক্ষ্য। মুঘল বাদশাহর চর সেখানে পৌঁছতে না পারলেও ছত্রমানিক্যের নাগাল এড়ানো সহজ কাজ নয়। তেরোদিন তেরোরাত পথ চলে চট্টগ্রামের ভুলুয়া বন্দর থেকে সপরিবারে পাড়ি জমালেন পূর্বের রাজ্য আরাকানে।

ইতিহাসের চাকার অভিমুখ সত্যিই অজানা। পুত্র রামদেব ঠাকুর আর ভাই জগন্নাথ রায়ের সাথে আলাপচারিতা আর গুণবতী দেবীর পরামর্শে আরাকানের দিকে রওনা দেবেন বলে স্থির করলেন গোবিন্দদেব। সকলের নিরাপত্তা দিতে পারেন একমাত্র আরাকানরাজ সন্দৎসুধম্মা। এক কুয়াশাঢাকা রাতে ঘুমন্ত গ্রামকে পেছনে ফেলে রত্নফার প্রাসাদ ছেড়ে তিন রাজপুরুষ পূর্বদিকের পথ ধরলেন। পালকিতে রানি গুণবতীদেবী ।
ইতিহাসের এক মহাসন্ধিসন্ধিক্ষণে এক উপজাতি রাজার সাহায্য প্রার্থনা করলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা।গোবিন্দদেবের কাছে সাহায্য চাইলেন  বাংলার প্রাক্তন সুবেদার মহম্মদ সুজাউদ্দিন যার পাঠানো মুঘল সেনাবাহিনীকে যুবরাজ গোবিন্দদেব রুখে দিয়েছিলেন অসম সাহসে। ইতিহাসের কি নিষ্ঠুর উপহাস!গোবিন্দদেবের সাথে হৃদ্যতা থাকলেও মহম্মদ সুজার সাথে আরাকানরাজ সন্দৎসুধম্মার পরিচয় এই প্রথম। সন্দৎসুধম্মার সুজাকে সপরিবারে আশ্রয় দিতে রাজী হলেন গোবিন্দদেবের অনুরোধে , তবে শর্ত সাপেক্ষে।মৌরাঙে এক প্রাসাদে থাকার ব্যবস্থা হল শাহসুজা ও তার পরিবারের আরাকান রাজের কাছে অস্ত্রসমর্পন করে। শর্ত মেনে নিয়ে সুজা কেবলমাত্র প্রিয় ”নিমচা” তরবারিটা উপহার দিলেন ”মহারাজ গোবিন্দমানিক্য”কে। আর দিলেন হীরের আংটি। নিশ্চিন্ত হলেন নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে। ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে লাগল আরাকান রাজের ব্যবহার । প্রস্তাব পাঠালেন সুজাকে -”আপনার কন্যা শাহজাদী গুলরুখ বানুর পাণিগ্রহণ করতে চাই আমি”। আরাকান রাজের এই ঔদ্ধত্যে অহমিকায় আঘাত লাগল শাহজাহান পুত্রের। সঙ্গে সঙ্গে বলে পাঠালেন – ”গুলরুখের ধমনীতে বইছে নীলরঙের খানদানি বাদশাহী রক্ত। ভারতসম্রাট জালালদ্দিন মহম্মদ আকবরের উত্তরপুরুষ হবে কিনা এক ভিনদেশী উপজাতি রাজার বেগম!!” প্রমাদ গুনলেন সন্দৎসুধম্মা। মুঘল বাদশা আরঙ্গজেবের চিঠি এসে পৌঁছেছে ক’দিন আগেই। সুজাকে সপরিবারে প্রত্যার্পণ করার অনুরোধ করেছেন তিনি,জানিয়েছেন স্বহস্তেই নিজের ভাইএর মুন্ডচ্ছেদ করতে চান। সন্দৎসুধম্মা পরিকল্পনা পরিবর্তন করলেন। সুজার আনা যাবতীয় ঐশ্বর্যের দিকে চোখ পড়ল তাঁর ।একদিন পারিবারিক ভোজনপর্ব চলছিল শাহসুজার মহলে। সামনেই ইদ। সবেমাত্র সেদিনের রোজা ভেঙেছে পরিবারের সদস্যরা । রমজান মাসে সংযম রক্ষা করতে হারেমেও যাননা বাদশাহ ,অস্ত্র ধরাও নিষিদ্ধ।বেগম পিয়ারীবানু শাহসুজার রেকাবে সাজিয়ে দিয়েছেন রকমারি ফল। ঢাকার বাদশাহী মহলের সাথে ভিনদেশে এই  ইফতারের কোনো তুলনাই চলেনা।এক বাঁদী দৌড়ে এসে সেলাম জানালো জাঁহাপনাকে। আহার অসমাপ্ত রেখে ভোজনকক্ষ ছাড়লেন সুজা। মহলের চারপাশে রাতে অন্ধকারে ঘিরে ফেলেছে মশালধারী আরাকান সৈন্যরা।  কিছুক্ষণের মধ্যেই ফটক ভেঙে ঢুকে পড়ল সন্দৎসুধম্মার সেনারা। নিরস্ত্র প্রহরাহীন সুবেদারকে পিছমোড়া করে বেঁধে অবাধে চলল লুঠতরাজ। ঢাকা থেকে মূল্যবান সামগ্রী যা কিছু আনতে পেরেছিলেন সব হারিয়ে নিঃস্ব হলেন বাংলার এককালের নবাব মহম্মদ সুজাউদ্দিন। এরপরেও আরো কিছু অবশিষ্ট ছিল তাঁর জন্য। অন্দর মহলে ঢুকে দেখেন বেগম ছোট দুইমেয়ে রোশন আরা আর আমিনাকে জড়িয়ে কেঁদে চলেছেন। কোথায় গেল মেয়ে গুলরুখবানু? মেয়ের ঘরে ছুটে গেলেন সুজা। না সেখানে সে নেই। সারা মহল তন্ন তন্ন করে খুঁজতে শুরু করলেন তিনি। ভোজন কক্ষের মেঝের ওপর খুঁজে পেলেন দুই ছেলে জৈনুউদ্দিন আর জৈনালের লাশ। শুধু খুঁজে পেলেন না গুলরুখকে ।গুলরুখ মহলে ফিরেছিল গভীররাতে আরাকানরাজের কাছে  তার ইজ্জত খুইয়ে এসে। পিয়ারী একমুহূর্তও দেরী করেননি আংটি খুলে মেয়ের গলায় গরল টুকু ঢেলে দিতে। আম্মাজানের নির্দেশে  সদ্য কিশোরী রোশন আরাও অনামিকার অলঙ্কারে লুকিয়ে রাখা বস্তুটুকু মুখে নিল বিনা প্রশ্নে ,জল ভরা চোখে। এরপর পিয়ারী বানুর পালা।তিনটে লাশকে পেছনে ফেলে গভীররাতে মহম্মদ সুজা   ছোট্ট আমিনাকে কোলে নিয়ে আবার অজানা পথে পাড়ি জমালেন।

ত্রিপুরাকে সুরক্ষিত রাখতে ছত্রমানিক্য মোগল সম্রাট আরঙ্গজেবকে তুষ্ট রাখতে সুজার অনুসন্ধানে ত্রুটি রাখেননি। তেমনি পাশের রাজ্য মনিপুরের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করেছিলেন এক নারী ও হাতি উপহার পাঠিয়ে। কিন্তু ছত্রমানিক্যের শাসন, গণ্যমান্যদের প্রতি রূঢ়তা প্রজাদের অসন্তোষের কারন হয়ে উঠছিল। আরাকানে প্রায় সন্ন্যাস জীবন যাপন করছিলেন গোবিন্দদেব আর গুণবতীদেবী। নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন আর্তের সেবায় আর শিক্ষাদানের মহাব্রতে। ছত্রমানিক্যের অনিয়মিত কাজকর্ম ও ব্যবহারের খবর যে এসে একেবারে পৌঁছত না তা নয়। ত্রিপুরা থেকে মনিপুর হয়ে দুচার জন প্রজা  তাঁর কাছে আসত , দেশের খবর শুনে রানি চোখের জল বাধা মানত না, গোবিন্দদেব নির্লিপ্ত থেকে উত্তেজনা চেপে রাখতেন দীর্ঘশ্বাসের আবরণী দিয়ে। একটা হদিশই শুধু পেলেন না তিনি-”কোথায় গেলেন শাহ্ সুজা ছোট্টো মেয়েটিকে নিয়ে?” ঐটুকু দুশ্চিন্তা ছাড়া শান্তভাবেই যাপিত হচ্ছিল তাঁদের দিনগুলো। হয়তো এভাবেই চলত। কিন্তু ত্রিপুরার দূত খবর নিয়ে এল আরাকান রাজদরবারে। ”ফিরিয়ে নিতে চাই আমাদের রাজা গোবিন্দমানিক্য কে। ছত্রমানিক্য গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত”। সন্দৎসুধম্মা আটকালেন না গোবিন্দদেব কে। জানিয়ে দিলেন সুজার সন্ধান পেলে তার হাতেই যেন প্রত্যার্পণ করে মোঘল শাহজাদাকে। হেসে বিদায় নিলেন গোবিন্দদেব আর গুনবতীদেবী।

প্রজারা জয়ধ্বনিতে স্বাগত জানালো গোবিন্দদেবকে। পুণ্যতোয়া গোমতীর জলে স্নান করে দ্বিতীয়বার অভিষেক হল গোবিন্দদেবের।  ঘোষনা করলেন আবার , ”আমার রাজ্যে পশুবলি ,নরবলি সব নিষিদ্ধ। আমরা সবাই দেবতার সন্তান। তিনি কি কখনো সন্তানের রক্তে তৃপ্ত হন?”

গোমতীর উত্তরতীরে দাঁড়িয়ে সদ্যস্নাত রাজা গোবিন্দমানিক্য সূর্যদেবকে প্রণাম করে ধ্যানে বসেছেন। বেশ কিছু সময় পরে চোখ খুলে দেখলেন সামনে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং মন্ত্রী। খবর এসেছে মনিপুর থেকে। সুজা তাঁর ছোটমেয়ে আমিনাকে দিয়ে গেছেন বড়মেয়ে পাজির বেগম আর নাতি আজিম সাজুর হাতে।মনিপুর রাজ ফিরিয়ে দিয়েছেন আলমগীরের তিনজন প্রতিনিধিকে।সুজার মৃত্যু হয়েছে আরাকনে এই খবর নিয়ে দিল্লী ফিরে গেছেন তারা। মনিপুরের উখরুলের এক পাহাড়ি গুহায় দীনহীন সুজা বেঁচে আছেন সাধারণ মানুষ হয়ে। হয়তো ক’দিন পরেই এক পর্তুগীজ জাহাজে রওনা দেবেন মক্কার পথে। সূর্যদেবের দিকে আর একবার জোড়হাতে চাইলেন রাজা গোবিন্দমানিক্য।

Related Posts

Irrfan-Khan-passes-away
Art & Culture

Irrfan Khan had craving to act right from his childhood

April 29, 2020
Twinkling-but-faded-Star
Art & Culture

Springtime story: In quest of twinkling, yet faded star

March 4, 2020
এক অলীক প্রেমিক প্রেমিকার কথোপকথন ( A Bengali short story: Imaginary dialogues of a young couple)
Art & Culture

এক অলীক প্রেমিক প্রেমিকার কথোপকথন ( A Bengali short story: Imaginary dialogues of a young couple)

November 15, 2019 - Updated on March 28, 2020
Tripura
Art & Culture

Omnipotent Maa Kali Temples in Tripura

October 26, 2019
Reinterpreter of Mythologies
Art & Culture

Reinterpreter of Mythologies

October 22, 2019
Uncle walsh: Photo courtesy: iterlyfen.gq
Art & Culture

Ancient tales, take me home

October 12, 2019
ADVERTISEMENT
ADVERTISEMENT
ADVERTISEMENT
D-2050 D-2050 D-2050
ADVERTISEMENT
ADVERTISEMENT
ADVERTISEMENT

About us

Enewstime.in is run by an individual – a Journalist by profession of Tripura with the active help of several journos including senior journalists of the State. On top of that, Enewstime.in being a subscriber of IANS news agency, we have plenty of multi-choice topics to offer to our esteemed readers. Enewstime.in is a venture reach global audience from a tiny State Tripura.

Latest News

Honeymoon murder case: Meghalaya Police question over 20 people in Indore

Mussoorie schedule of Megastar Chiranjeevi's #Mega157 wrapped up

Protest erupts against vandalism of Tagore’s ancestral home in B’desh

Dhaka Police Arrest Ekushey Padak winning Economist Shamsul Alam

Award-winning economist arrested in Bangladesh

When Bollywood’s Bhidu revealed where he picked his language from

Contact us

ssss

  • Contact us
  • Advertising Policy
  • Cookie Policy
  • Disclaimer
  • Privacy Policy
  • Terms of Use

© 2025 Designed & Developed with ❤️ by Provibe Media LLP

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
No Result
View All Result
  • Home
  • News
    • Northeast
    • National
    • International
    • Tripura News
  • Sports
  • Business
  • Entertainment
  • Health
  • Features
  • Tenders

© 2025 Designed & Developed with ❤️ by Provibe Media LLP