মানস পাল
ভানুদা আগরতলার নামী দামী বিল্ডিং কনট্রাক্টার, কোটি কোটি টাকার মালিক। দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ানো শখ , দূর দেশে মধ্য সমুদ্রে গিয়ে কাচের বাক্সে ঢুকে গহীন জলে ডুব দিয়েছেন, নিজে না খেলে কি হবে ফ্রান্স না জার্মানির ওয়াইন কারখানায় গিয়ে কিভাবে ওসব অতিপ্রিয়, অতিদামি আসব তৈরী হয় দেখে এসেছেন ….. মাঝে মাঝেই বেরিয়ে পড়েন পুরো পরিবার নিয়ে। আর হল ওই এক প্রচন্ড ক্রিকেটের নেশা।
ভানুদার আরেকটি গুণ হলো হেসে হেসে গল্প বলেন খুব জমিয়ে। সেই ভানুদা এক লক্ষী পূজার রাতে হাঁসের মাংস দিয়ে জম্পেশ করে ভাত খেয়ে রাস্তায় আরাম করে সিগারেট ফুঁকতে বেরিয়েছেন। চারদিকে বাজি ফুটছে , হাউই উড়ছে আর ভানু দা আপন মনে চাঁদনী আকাশের দিকে তাকিয়ে ক্লাসিক ফুঁকে চলেছেন, বেশ একটা রোমান্টিকতা মনে আবেশ জড়িয়ে দিচ্ছে –এমন সময় পাড়ার বাড়ি থেকে এক বয়স্ক মহিলা এসে ভানুদাকে পাকড়াও করলেন,সঙ্গে দু তিনটে বাচ্চা – “বাবা তুমি আমাদের বাড়ির লক্ষ্মী পূজাটা করে দিয়ে যাও।” ভানুদার বাবা ছিলেন আগরতলার এক সর্বজন শ্রদ্ধেয় জ্ঞানী পন্ডিত। প্রচন্ড প্রতিপত্তিশালী এবং অসম্ভব কঠোর ব্রাহ্মন। কিন্তু ভানুদা হলেন পুরো অপজিট , হাসি খুসি ইজি গোয়িং লোক., পুজো আচ্চা যা সব বৌদির ব্যাপার , ভানুদা এসবে নেই – খেলা আর ইট,বালু, সিমেন্ট, রড – এতেই দিনগত পাপক্ষয়।
কিন্তু বামুন মানুষ , তার উপরে নামী পন্ডিতের ছেলে ফলে, তিনি যতই বলেন আরে মাসিমা আমি পূজা দিতে জানি না , মন্ত্র ফন্ত্র কিছুই জানি না – মাসিমা তো আর বিশ্বাস করেন না। “না বাবা তুমি এত বড় পন্ডিতের ছেলে , তুমি জানো না , এটা হয় না। তাছাড়া, এটা তো লক্ষ্মী পূজা, সহজেই হবে, কালী পূজা নাহলে বরঞ্চ কথা ছিল। দেখো না বাবা , একজনও পুরুত ঠাকুর পাচ্ছিনা, তুমি এসো। ” ..
মাসিমা বলার ফাঁকেই কাচ্চা বাচ্চারা এসে ভানু দার হাতে ধরে টান — জেঠু চল চল , পূজা দেবে চল। তোমার তো পৈতে আছে দেখছি , চল চল। শেষ পর্যন্ত মাসিমা – আর ততক্ষণে মাসিমার কথা বার্তা শুনে আরো দু একজন যাঁরা বেরিয়ে এসেছিলেন তাঁরা- সবাই মিলে ভানুদাকে জোর করে টেনে টুনে ধরে নিয়ে গিয়ে লক্ষ্মী পূজাতে বসিয়ে দিলেন।
ভানুদা-র হাঁসের মাংসের মজা, সিগারেটের আমেজ, রোমান্টিকতার আবেশ সব লাটে, ঘুমানোর জন্য রেডি হচ্ছিলেন সেটাও বরবাদ। তেতো মুখে, হাতে পায়ে জল দিয়ে গিয়ে লক্ষ্মীর সামনে বসলেন কুশের আসনে। বসলেন তো ঠিক, কিন্তু করবেন টা কি ? শেষ পর্যন্ত পৈতাটিকে আঙ্গুলে ধরে ‘ওম ভূর্ভভ : স্ব , তৎ সভিতুর বরণ্যম’ বলে গায়ত্রী মন্ত্র দিয়ে কাজ সেরে উঠে পড়লেন –‘দিন দিন সবাই মিলে উলু দিন’ । তবে, চক্ষুলজ্জার জন্য সম্ভবত দুবার গায়ত্রী বলে ছিলেন। মাসিমা থেকে বাড়ির সবাই খুশি। ভানুদার গল্প যতটুকু মনে আছে- পূজা শেষে তিনি কিছু চাল- এই ধরুন ২৫০/৩০০ গ্রাম , দুটো কলা , অল্প সর্ষের তেল পেয়েছিলেন, সঙ্গে ৫০ নয়া পয়সাও ছিল।