গোপাল হামা দিতে শিখেছে বলে রক্ষা । নাড়ু, মাখন , তালের বড়া দিয়ে ভুলিয়ে মা যশোদা বাছাকে ঘরে আটকে রাখতে পেরেছে। কিন্তু দুর্গার কি আর সে কপাল আছে? বাংলা নববর্ষে হালখাতা করতে গণশা মামাবাড়ি গেছিল বটে, কিন্তু করোনাসুরের জন্য লাড্ডু তো দূরের কথা, কলাটা মুলোটা পর্যন্ত ঠিক করে জোটেনি । তাই গণেশ পুজোয় এবার সেটা পুষিয়ে নিতে হবে বলে মনে মনে ভেবে রেখেছে । অবশ্য বাহন মূষিকটিকে সেকথা জানিয়ে অনেক শলা পরামর্শ করে চলেছে। কিন্তু মাদুর্গাকে রাজি করানো কি চাট্টিখানি কথা! কোনো মতলবই জুতসই লাগছে না। অনেক ভেবে চিন্তে গণেশ আর মূষিক বাবা মহাদেবের কাছে হাজির হল।
– সামনে গণেশ চতুর্থী। আর মা বলছে যেতে হবে না।
-কেন? , দেবাদিদেব হুঙ্কার দিলেন ।
– করোনার জন্য ।
-হুমম , দেবাদিদেবের সব তেজ নিস্তেজ হয়ে গেল।
দুর্গার কথা না শুনেই গাজনের মাঙন আনতে মর্ত্যে নেমেছিলেন মহাদেব। ভক্তরা নিজেই খেতে পারছে না । তা মাঙন আর কি দেবে! মন্দিরের দরজা পর্যন্ত বন্ধ! নিত্যপুজো নমঃ নমঃ করে হচ্ছে । তারপর এই শ্রাবণ মাসে দুধপুকুরও ভরেনি। তারকনাথের সেবাতে করোনাসুর ভাগ বসিয়েছে।
ছেলেকে আশ্বাস দিয়ে বললেন,”বলছি তোর মাকে। কিন্তু মনে হয় না রাজি হবে। ”
গণেশ মহাদেবের সামনে থেকে চলে যেতেই নন্দী ভৃঙ্গীকে ফোন করলেন তিনি । ওদের আবার সদর দরজার চৌকাঠ পেরোনো বারন। শ্মশানে মশানে পড়ে থাকে। করোনা নিয়ে ঘরে ঢুকলেই মুশকিল । তাই ফোন ভরসা। কিন্তু নন্দী ভৃঙ্গীর সাথে পরামর্শ করেও দুর্গাকে যে কিভাবে কথাটা বলবেন ভেবে পেলেন না।
সামনে আশ্বিন মাস । মা দুর্গার মনটাও কেমন কেমন করছে। করোনাসুরের দাপটে কি এবার বাপের বাড়ি যাওয়া যাবে না? আগের থেকে পরিস্থিতি কি একটুও ভালো হবে না? গণশাটা গণেশচতুর্থী তে মর্ত্যে যাবে বলে উশখুশ করছে। মূষিকের সাথে দিনরাত গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর চলছে । ছেলে বাবার ঘরে গেছিল মূষিক কে নিয়ে । বাপ ছেলের কথাও যে হয়েছে সেটাও দুর্গা মা বুঝেছেন। কিন্তু মহাদেব যে তাকে সহজে বলবেন না সেটাও দুর্গা জানে। কারণ গাজন সেরে ফেরার পরে দুর্গা মহাদেবকে যেভাবে সাফসুতরো করে ঘরে তুলেছিল, তা মহাদেব হাড়ে হাড়ে মনে রেখেছেন ।
দুর্গা গণেশকে ডাক দিলেন,” শোন তো বাবা গণেশ! শুনে যা।”
মূষিক কে সঙ্গে নিয়ে গণেশ হাজির হল পার্বতী সামনে । মাথা নীচু করে লক্ষীছেলের মতো অল্প অল্প শুঁড় দোলাতে লাগলো।
-”কি রে তোর ইচ্ছেটা কি?” দুর্গা দুটো মাছের টুকরো কড়াই এর তেলে ছেড়ে আড়চোখে ছেলের দিকে তাকালো।
গণেশ আর মূষিক একে অপরের দিকে তাকিয়ে চুপ থাকলো।
দুর্গা বলতে লাগলেন, ” বড় হয়ে গেছো। তোমার সব ইচ্ছে তে তো বাধা দিতে পারিনা, যেতে চাইছো যাও , তবে সারাদিন দুজনে মিলে টো টো করে প্যান্ডেলে , প্যান্ডেলে ঘুরে লাড্ডু খেয়ে বেড়িও না। ”
গণেশ শুঁড় দ্রুত গতিতে দুলতে শুরু করল। মূষিকের চোখদুটো চকচক করে উঠল। উচ্ছ্বাস সংযত রাখতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠল, ‘কিচির কিচির।’
দুর্গা বললেন,” স্যানিটাইজার , মাস্ক আর সাবান বেশ করে নিয়ে যেও। সাবধানে থেকো। সবকিছু গপাগপ খেও না দুজনে । বেশী দিন থাকবে না। একদিন থেকেই ফিরে আসবে।”
গণেশ আর মূষিক দুজনে রওনা হল। মহাদেব রান্নাঘরে ঢুকে একটু হেসে দুর্গাকে বললেন,” তুমিও তাহলে যাবার যোগাড় শুরু করো। ছেলেকে যেতে দিয়ে নিজের বাপের বাড়ি যাবার রাস্তাটা বেশ খোলা রাখলে !”
মহাদেবের হাসি ঠাট্টা দুর্গার কানে গেল না। তিনি একটু বেশী শব্দ করেই কড়াইতে মাছ ভাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।