মায়ের দেখাশোনাতে একটু বড়ো হতেই ফুলো দেখলো সঙ্গের বাকি দুটো ভাইবোন হঠাৎই বেপাত্তা হয়ে গেল। প্রথম দুদিন ইটের পাঁজা আর বালি সিমেন্টের মধ্যে বসে ভেবেছিল ওরা কাছে পিঠেই কোথাও আছে । মাকে জিজ্ঞেস করেও কোনো সদুত্তর পাওয়া গেল না। কাজেই ব্যাপারটা কি দেখবার জন্য ফুলো গা ফুলিয়ে চারপা সামনে পেছনে ছড়িয়ে আলসেমি কাটিয়ে বের হবে বলে ঠিক করল।
ফুলোর জন্মস্থান কোথায় তা সে জানে না। চোখ ফোঁটার পরপরই মা সেখান থেকে তাকে আর তার ভাইবোনদের মুখে ঝুলিয়ে এই ইট সিমেন্ট বালির মধ্যে এনে রেখেছে । এটা একটা অর্ধেক তৈরী বাড়ি। মানুষ আর কুকুরের ভয় নেই। তাই ছেলেমেয়েদের একটু শান্তিতে বড়ো করতে পারবে। এসব ভেবেই ফুলোর মা এখানে ওদের লুকিয়ে রেখেছিল। তবুও ফুলো ছাড়া বাকিরা হারিয়ে গেল।
গুটিসুটি পায়ে রাস্তাতে একা একা নামল ফুলো। এর আগে ভাইবোনরা মিলে মাএর সঙ্গে দু-তিনবার রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করেছে। মা বারবার ঐ কুকুরগুলো সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়েছে । যেমন বিশ্রী দেখতে, তেমন বিশ্রী কথাবার্তা । আর ঐ হতচ্ছাড়া কাকগুলোকেও এড়িয়ে চলতে বলেছে। চারদিকে দেখতে দেখতে দুরুদুরু বুকে ফুলো ধীরে ধীরে পা ফেলে চলেছে। লোকজন, বাচ্চা ছেলেপিলেদের সামলে হাঁটছে সে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে রাস্তা পার হচ্ছিল ফুলো। হঠাৎই ‘ প্যাক প্যাক ‘ শব্দে চমকে উঠল।
ওরে বাব্বা! সে খেয়ালই করেনি ঘাড়ের কাছে একটা বড়োসড়ো গাড়ি এসে পড়েছে । ফুলো চোখ বন্ধ করে একছুট দিল। গাড়িটাও সাঁ সাঁ করে চলে গেল। কিছুক্ষণ হাঁপিয়ে ফুলো চোখ খুলল , নিজের গালে সামনের ডানপাটা দিয়ে এক চাপড় মারল। জোর বাঁচা বেঁচে গেছে সে।
ফুলো এবার চারদিকে ভালো করে দেখল। ভয়ের চোটে চোখ বুজে রাস্তা পার হয়ে সে একটা বাড়ির বারান্দার দরজার সামনে এসে বসে পড়েছে। আর ঐ বারান্দা থেকে তার দিকে তাকিয়ে আছে আরো দুটো বেড়ালছানা । আরে এ তো ফুলি আর হুলি,ফুলোর ভাই আর বোন! তিনজনে আনন্দে একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠে বলল, ”ম্যাঁও, ম্যাঁও, ম্যাঁও।”
*Paramita Gharai may be contacted at [email protected]