June 3, 2017: বাড়ির চাপে অবশেষে রাজি হল মলি।বাবা মজুরী খেটে ছ’জনের ভাত জোগার করে।ওর বিয়ে হলে একজন তো কমবে। বাবুদাকে বলেই দিল -”না,গো আমি আর দ্যাখা করতে আসব না”। বিয়ে হল জঙ্গীপুর, মুর্শিদাবাদ। গোচারণ থেকে অনেক দূরের পথ। সে যাই হোক। বড়লোক শ্বশুরবাড়ি, জমি-জায়গা আছে। খেয়ে-পরে তো ভালভাবে বাঁচতে পারবে মেয়েটা। মা আশ্বস্ত হয়েছিল। পেটের জ্বালা যে বড় জ্বালা। আর শরীরের জ্বালা? সে খবর তো বাপ-মাকে জানানোর উপায় নেই মলির। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খাটুনি। শ্বাশুড়ির পছন্দ না হলেই মারধোর। ননদও সঙ্গে আছে। আছে শ্বশুরের চাপা কামনা থেকে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা। আর, রাতের বিছানায় মশারি গোঁজার সাথে সাথেই শরীরে কালো সাপটাকে গুঁজে নিয়ে অক্টোপাশের বাঁধনে দমবন্ধ করে নিজেকে পেষন করা। বছর না ঘুরতেই ”মা” হল মলি। ছেলে বলে রক্ষা। দিনলিপি অবশ্য বিন্দুমাত্র বদল হল না। খাটাখাটনি আর মারধর একই অনুপাতে বাড়তে থাকল।
”দরকার হলে জানাস আমাকে মলি, পৌঁছে যাব। জান বাজি তোর জন্য।” – হাতের কালশিটে দাগটার দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল বাবুদার কথা। বলেছিল বিয়ের আগের দিন। লুকিয়ে দেখা করতে গিয়েছিল বাজারের পাশে বটগাছটার তলায়। অন্ধকারে ঠোঁটে একটা চুমুও খেয়েছিল বাবুদা। ডানহাতটা আলতো ছোঁয়ায় মলি ওর শুকনো ঠোঁটে। সাতপাঁচ ভেবে মোবাইল নং এর বোতাম টেপে মলি এক দুপুর বেলায়। ফিসফিসিয়ে কথা হয় বাবুদার সঙ্গে। শুক্রবার ভোর রাতে মলি ট্রেনে উঠল একবছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে। বর্ধমান যখন নামল তখন বেলা হয়ে গেছে। বাবুদাই খুঁজে বের করল ওকে। ”ইস্, কিছু খাস নি,মুখটা বড়ো শুকিয়ে গেছে। কি চেহারা করেছিস নিজের”। সস্তার হোটেলে ভাত খেলো ওরা। ছেলেকেও খাওয়ালো। ”কোথায় যাব বাবুদা?” মলির চোখে নতুন সংসার পাতার স্বপ্ন।
বাস ধরল ওরা বর্ধমান থেকে। তখন সন্ধ্যে হয় হয়। শহর ছেড়ে বাস দৌড়ল রাস্তার দুপাশের আলু আর সর্ষে ক্ষেতকে সাক্ষী রেখে। শীতের ছোঁয়া আর সারদিনের ধকলে মলি বাবুদার কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। ঘুমোচ্ছে ছেলেটাও। ”এই ,ওঠ, ওঠ,এসে গেছি”- ধড়মড়িয়ে উঠল মলি । নামল বাস থেকে। চারদিকে অন্ধকার। লোকজন নেই। ”কোথায় এলাম গো বাবুদা?” ”আধঘন্টা হাঁটলেই আমার পিসির বাড়ি। চল।”
পরদিন ভোরে প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে এসে থমকে দাঁড়ালো কানু। একে একে আরো অনেকে। তারপর গ্রামের প্রায় সবাই। আলের ধারে পড়ে আছে একটা অর্ধনগ্ন মেয়ের লাশ।রক্তে ভাসছে তার নিম্নাঙ্গ।বুকে মুখে আঁচড়ের দাগ। লাশের ওপরেই হুমড়ি খেয়ে স্তনপান করে যাচ্ছে এক দুধের শিশু।
—– পারমিতা ঘড়াই