Paramita Gharai
February 04, 2019: Click here to read কর্তা-গিন্নি উবাচ ১-২
বেড়াল পর্বের পর আর কোনো ঝামেলা হয়নি। শালিক দম্পতি বেশ ভালোই আছে। দিনের বেলা চা এর দোকানে বিস্কুটের টুকরো খেয়ে দুজনে ফুড়ুৎ করে উড়ে যায়। সারাদিন এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে কখনো গমের দানা , খুদকুটো জোটে। গাছগাছালি থেকে জোটে দু-চার টে পোকা মাকড়। আবার সন্ধ্যে হতে না হতেই গিয়ে ঢোকে চালু এর দোকানে । যতই শীত পড়ুক না ওদের আর ভয় নেই।
সেদিন সকালে নিয়মমাফিক দু-চার টুকরো বিস্কুট জুটলে ওদের। কর্তা-গিন্নি সেদিন আর শহরের দিকে উড়ল না। ওরা ডানা মেলল দক্ষিণদিকে । শীতের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে ডানা মেলে উড়তে উড়তে ওরা অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে দিল নিজেদের অজান্তেই। টের পেল কর্তা তখনই যখন গিন্নি বলল,”বড্ড খিদে পেয়েছে গো!আর পারছি না। এবার কোথাও বসি চলো।
” কোনো দ্বিমত পোষণ না করেই কর্তা-শালিক নীচের দিকে নামতে লাগল। গিন্নি- শালিক ও পেছন পেছন নামতে লাগল । দুজনে গিয়ে বসল একটা কাঁঠালগাছের ডালে। এই জায়গাটা শহরতলি। শহর কিন্তু প্রতিটি বাড়িতেই আম-কাঁঠাল-পেয়ারা-নারকেল-সুপুরি গাছ কমবেশি আছে। শালিক দম্পতি যে গাছটায় বসেছে তার সামনে একটা উঠোন । উঠোনের ওপারে একতলা বাড়ি । উঠোনে কয়েকটা বাচ্চা বল খেলছে। বাচ্চা গুলোকে ভয় পাবার কিছু নেই দেখে কর্তা-গিন্নি দুজনে উঠোনে ঘোরাঘুরি উড়োউড়ি করতে লাগল ,যদি খাবার দাবার কিছু জোটে। কর্তা শালিকের সাহস বেশি। সে একপা দুপা করে লাফিয়ে লাফিয়ে জালনার ওপরে গিয়ে বসল। জালনা তে বসতেই চোখ পড়ল ঘরের ভেতরে।
উল্টোদিকের দেওয়ালে চোখ পড়তেই খুশী হল কর্তা শালিক। আরে!উল্টো দিকের দেওয়ালে আর একটা শালিক। আনন্দে ডগমগ হয়ে কর্তা তো দু-ডানা মেলে সেদিকে শাঁ করে উড়ে গিয়ে ধাঁ করে করে খেলো ধাক্কা । ‘উফ্! ” পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিল শালিক কর্তা । ”কি হল ব্যাপারটা? ” ডানা ঝাঁপটিয়ে সোজাসুজি চোখ রাখল নতুন শালিকটার দিকে। ”ব্যাপারটা কি? তুই আমাকে ধাক্কা দিলি কেন?” নতুন শালিকটার ডানা ঝাপটে কর্তাকে একই প্রশ্ন করল। ”কি আমাকে ভ্যাঙানো! ” তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল কর্তা শালিক। নতুন শালিকের ঠোঁটে মারল একটা ঠোক্কর ।
”উহুহু..”আবার ব্যাথা পেল। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ফিরে এল আগের দেওয়ালে। এবার একটু একটু ভয়ও করতে শুরু করেছে । কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না তারই মতো একটা শালিকের এত জোর কোথা থেকে এল।
ওদিকে শালিক-গিন্নি কর্তাকে খুঁজতে এদিক সেদিক ঘুরে হাজির হল ঐ জালনায়। কর্তার এলোমেলো পালক আর ভয়ার্ত চোখ দেখে তাড়াতাড়ি করে ডানা নেড়ে এসে বসল তার পাশে। কর্তার মুখে সব শুনে তাকালো উল্টোদিকের দেওয়ালে । তারপর গিন্নির কি হাসি! ”আরে কর্তা ,তুমি নিজেকেই চিনতে পারলে না?ওটা তো একটা আয়না। আরেক আয়নায় তোমার ছবি। হা..হা..হা.. । ” শালিক-কর্তা তাকালো উল্টো দিকের দেওয়ালে । ঠিক তো এতো তার আর তার গিন্নির ছবি। নিজের বোকামির কথা ভেবে লজ্জা পেল সে। গিন্নির সাথে ফেরার পথ ধরল।