ProMASS Feature Service: Jan 18, 2016:
$$ য়িসে দোমা
সিকিমে চালু বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের সংখ্যা ১১টি এবং রাজ্যের প্রায় সর্বত্র এই ব্যাঙ্কগুলির শাখা ছড়িয়ে রয়েছে। রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করলেও মোট ৬ লক্ষ ১০ হাজার ৫৭৭ জনের সংখ্যা ছোট্ট এই রাজ্যটির অধিকাংশ মানুষই ব্যাঙ্কের পরিষেবার আওতায় রয়েছেন। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ব্যাঙ্কের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের প্রথম কারণ হল, রাজ্যের সাক্ষরতার হার জাতীয় গড় ৭৩ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি ৮১.৪ শতাংশ। আর দ্বিতীয় কারণ হল, ছাত্রছাত্রীদের জন্য মেধাবৃত্তি ও গ্রামীণ কর্মসংস্থান কর্মসূচির মতো বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের কার্যকর রূপায়ণ।
উপরি পাওনা হিসেবে ২০১৪-এর ২৩ আগস্ট থেকে ‘প্রধানমন্ত্রীর জন ধন যোজনা’ শুরু হওয়ার পর সিকিমে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। যোজনায় জীবন বিমা, ঋণ ও মোবাইল ব্যাঙ্কিং-এর সুযোগ-সুবিধা মেলায় সারা দেশেই সাধারণ মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক অর্থ সাহায্য পাওয়ার সুযোগ নিতে পারছেন। এমনকি, সুদখোর অসাধু ব্যক্তিদের লোভ থেকেও সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনায় পরিবারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যেখানে ৫ হাজার টাকার ওপর ড্রাফটের সুবিধা সহ নিখরচায় নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগও রয়েছে। এছাড়াও, রুপে ডেবিট কার্ড ও ১ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমার সুবিধা পাওয়ার সংস্থানও যোজনায় রয়েছে। অ্যাকাউন্টধারী কৃষকদের রুপে কিষাণ কার্ড দেওয়া হচ্ছে।
সিকিমে প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা শুরু হওয়ার পর রাজ্যের ৯৮৯টি ওয়ার্ডের ১ লক্ষ ২২ হাজার ২৩৮টি পরিবারের মধ্যে ১ লক্ষ ২ হাজার ৩৪৪টি পরিবার ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সুবিধা পাচ্ছেন। গ্যাংটকে রাজ্যের অগ্রণী ব্যাঙ্কের কার্যালয় থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এই প্রকল্পের আওতায় ৩৪ হাজার ২৭৯টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতে যোজনার আওতায় খোলা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কম হলেও অ্যাকাউন্ট খোলার দিক থেকে অগ্রগতির হার ৯৮.৪৫ শতাংশ, যা প্রমাণ করছে হিমালয় সংলগ্ন ছোট্ট এই রাজ্য ব্যাঙ্কিং পরিষেবার দিকে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। রাজ্যের ১১টি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের মধ্যে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক (এস বি আই) ৫৭ হাজার ৫২৬টি পরিবারকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতায় নিয়ে এসেছে। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পরিষেবাধীন পরিবারের সংখ্যা ২৫ হাজার ৫৭০। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ৩৪ হাজার ২৭৯টি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে স্টেট ব্যাঙ্ক ৯৮.৪৫ শতাংশ সাফল্য অর্জন করেছে। এ থেকেই স্পষ্ট প্রতিফলিত হয় যে, ব্যাঙ্কিং পরিষেবার দিক থেকে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট এই রাজ্যটি অন্যদের তুলনায় বেশ এগিয়ে রয়েছে।
রাজ্যের ব্যাঙ্কগুলি কেবল নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেই সাফল্য পায়নি, সেইসঙ্গে, ঐ অ্যাকাউন্টগুলিতে এক বিশাল পরিমাণ টাকাও জমা পড়েছে। এই জমাকৃত টাকার পরিমাণ ২১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭৮৫। নতুন খোলা অ্যাকাউন্টগুলির মধ্যে ‘জিরো ব্যালান্স’ অ্যাকাউন্ট ১০ হাজার ৯৭১ এবং ‘আধার’ ভিত্তিক অ্যাকাউন্টের সংখ্য ১১ হাজার ৭১২। এছাড়াও, রাজ্যের ২১ হাজার ৬৮০ জন উপভোক্তা ইতিমধ্যেই রুপে কার্ড পেয়েছেন। এমনকি, তারা ১ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমার সুবিধা পাচ্ছেন। বৈধ উপভোক্তাদের ৩০ হাজার টাকার জীবন বিমাও দেওয়া হচ্ছে। গত বছর স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মদই ‘জন ধন যোজনা’র কথা ঘোষণা করেছিলেন। দেশ জুড়ে কর্মসূচিতে ১০ কোটি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার যে লক্ষ্য ছিল তা অতিক্রম করে ১১ কোটি ৫০ লক্ষতে পৌঁছেছে। ২০১৪-১৫-এর আর্থিক সমীক্ষা অনুযায়ী এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে আমানতের পরিমাণ ৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি।
এই যোজনায় সিকিমের ১০০ শতাংশ সাফল্য আসেনি কেন – এই প্রশ্নের জবাবে প্রধান ব্যাঙ্কগুলির আধিকারিকরা জানান, সমীক্ষায় দেখা গেছে কিছু কিছু বহু বাড়ি হয় তালাবন্ধ নয়তো স্কুলের ঠিকানাকে বাড়ির ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, যারা এখনও ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতায় আসেননি, তাদের কিভাবে পরিষেবার আওতায় নিয়ে আসা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে ব্যাঙ্ক আধিকারিক জানান।
প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনায় সিকিমের ৯৮.৪৫ শতাংশ সাফল্যের রহস্য কি? এই প্রশ্নের জবাবে ব্যাঙ্ক আধিকারিকরা জানান, মাত্র ৫ মাসের মধ্যে গ্রামাঞ্চল ও ব্যাঙ্কিং পরিষেবাহীন পরিবারগুলিকে এই যোজনায় নিয়ে আসার কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। এই যোজনার সুবিধা কি – ব্যাঙ্কিং পরিষেবাহীন পরিবারগুলিকে এটা বোঝানোই ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের কাজ। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সমস্ত ব্যাঙ্কের কর্মীরা সচেতনতা শিবির, সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার, বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালায়। জন ধন যোজনা সম্পর্কে সচেতনতা প্রসারে মুদ্রণমাধ্যম ও বেতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলেও ব্যাঙ্ক আধিকারিকরা জানান। এসব সত্ত্বেও রাজ্যের প্রত্যন্ত ও দুরুহ অঞ্চলগুলিতে এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলে তারা স্বীকার করে নেন।
অন্যদিকে অবশ্য, শহর ও গ্রামাঞ্চলের এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা এখনও জন ধন যোজনার সুফল থেকে বঞ্চিত। সচেতনতার অভাবকেই এক্ষেত্রে বড় কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে। সার্বিক সাফল্য পাওয়ার লক্ষ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির সাহায্য চাওয়া হয়েছে, যাতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর গ্রামসভা আয়োজন করে সাধারণ মানুষকে সচেতেন করে তোলা যায়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যের ব্যাঙ্কগুলি সকল গ্রাহকের কাছে ঋণ, বিমা ও পেনশনের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে সর্বাত্মক প্রয়াস নিয়েছে। ঘোষিত নীতি অনুযায়ী যোজনার পরবর্তী পর্যায়ে অনু বিমা ও পেনশন সংক্রান্ত উদ্যোগ চালু করা হবে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষ উপকৃত হবেন। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কিভাবে ব্যাঙ্কিং পরিষেবাহীন মানুষকে যোজনার আওতায় নিয়ে এসে সবরকম সুফল সহজেই পৌঁছে দেওয়া যায়। সর্বোপরি, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যেই এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।
- লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং রাষ্ট্রপতি ভবনের ‘আবাসিক’ কর্মসূচিতে একজন লেখক হিসেবে সিকিম থেকে অংশ নিয়েছিলেন।