ProMASS News Bureau: Agartala: Sep 21, 2016: বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন সড়ক-রেল-টেলি যোগাযোগ সংক্রান্ত পরিকাঠামোর ব্যাপক ও দ্রুত উন্নয়ন। এগুলি ছাড়া বিনিয়োগকারিরা কখনোই বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পি পি পি মডেল)-এ দেশে বিশেষত: পিছিয়ে থাকা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মজবুত পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আজ আগরতলায় এফআইসিসিআই (ফিকি) আয়োজিত ‘নর্থ-ইষ্ট কানেকটিভিটি সামিট’-এর তৃতীয় সম্মেলনে একথা বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। উল্লেখ্য ত্রিপুরা সরকার, ডোনার মন্ত্রক, উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্ষদ (এন ই সি) এবং ডিআইপিপি’র যৌথ ব্যবস্থাপনায় ফিকি তিনদিন ব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে। সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ, মায়ানমার, নেপাল, ভূটান, জাপান এবং রাশিয়া থেকে ৮০ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে ভারত সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা যথেষ্ঠ উৎসাহব্যঞ্জক। তবে এই সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ত্রিপুরায় বিনিয়োগ টেনে আনতে ভারত সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে তিনি মন্তব্য করেন। রাজ্যে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগকারিরা এরাজ্যে স্বাগত, কিন্তু রাজ্য সরকারের নীতি-আদর্শ মেনেই বিনিয়োগকারিদের সুবিধা দেওয়া হবে। ত্রিপুরা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহের উপর আলোকপাত করে তাঁর ভাষনে মুখ্যমন্ত্রী এই সমস্যাসমূহ নিরসনে ভারত সরকারকে পদক্ষেপ নিতে নিতি আয়োগের সদস্য বিবেক দেবরায়-এর প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বলেন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার বাণিজ্যের পরিমাণ সীমান্ত হাট এবং আগরতলার স্থলবন্দরের মানোন্নয়নের পর উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। খুব দ্রুত ত্রিপুরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় দেশগুলির ‘গেটওয়ে’ হয়ে উঠছে।
রাজ্যে বিনিয়োগের সুযোগ এবং সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে নীতি আয়োগের সদস্য বিবেক দেবরায় বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সড়ক এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে গড়ে উঠছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন রাজ্যকে বিনিয়োগের জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে তুলে ধরা কঠিন। দেবরায় এও বলেন, সড়ক ইত্যাদি পরিকাঠামোই যথেষ্ঠ নয়, বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন দক্ষ শ্রমিক ইত্যাদিরও প্রয়োজন। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় উচ্চ শিক্ষা, জটিল চিকিৎসা, বায়ো-টেকনোলজি, আইটি এবং পর্যটন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
আজকের প্রাক-সম্মেলন উদ্বোধনী পর্বের মূল ভাবনা ছিল “ত্রিপুরায় বিনিয়োগের সুবিধাসমূহ”। রাজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য “ভাইব্রেন্ট ত্রিপুরা” উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান সচিব মি. এম নাগারাজু। তিনি জানান, সাক্ষরতা, ই-গভর্নেন্স এবং উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ত্রিপুরা দেশে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে।
বিকাশমূলক কর্মসূচি রূপায়নে রাজ্যের সাফল্যে কথা উল্লেখ করে, রাজ্যের মুখ্য সচিব ওয়াই পি সিং আগত প্রতিনিধিদের রাজ্যে বিনিয়োগের আর্কষণ বাড়াতে আর কী কী করা দরকার, সে সম্পর্কে মতামত জানাতে আহ্বান জানান।
সমাপণী ভাষণে ‘নর্থ-ইষ্ট কানেকটিভিটি সামিট’-এর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে ফিকি উত্তরপূর্বাঞ্চল উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রনজিত বড়ঠাকুর বলেন, এই সম্মেলন কেবলমাত্র বাহ্যিক ব্যবস্থার মধ্যে যোগাযোগ নয়, বরং এই সম্মেলনে জনগনের সংগে জনগনের যোগাযোগ, সীমান্তের এপার-ওপারের মধ্যে বাণিজ্য এবং শক্তি বিষয়ক ক্ষেত্রে যোগাযোগের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই সম্পর্কে প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ সম্পর্কে মতামত প্রকাশের এবং জনগণের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ‘নর্থ-ইষ্ট কানেকটিভিটি সামিট’ একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে।
মধ্যহ্ন বিরতির পর শুরু হয় টেকনিক্যাল সেশন। প্রথমে পরিকাঠামো, আইটি এবং পর্যটন এবং পরে স্বাস্থ্য পরিষেবা, কৃষি, বাগিচা শস্য এবং বাঁশ নিয়ে বিশেষজ্ঞ বক্তারা আলোচনা করেন এবং উপস্থিত প্রতিনিধিদের সংগে মত বিনিময় করেন।