Manabendra Nag: Agartala: Sep 28, 2016: পূজো আসে, পূজো যায়। বছর বছর ভোট আসে, ভোট শেষ হয়। কিন্তু একাংশ আদিমজাতি রিয়াংদের জীবন যাত্রার মানের যেন কোন পরিবর্তন নেই। এক দশক আগে যেমন ছিল, আজও তেমনই দুর্বিষহ জীবন, জানালেন রাইহামছা পাড়ার দলপতি রিয়াং। তেলিয়ামুড়া মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের অন্তর্গত রাইহামছা পাড়া, বিলাইহামপাড়া, হাজরাপাড়া, প্রজাবাহাদুর মলসমপাড়া, কাকড়াছড়া, নোনাছড়া ইত্যাদি এলাকায় বসবাসরত রিয়াং জনজাতীদের জীবন যাত্রার মান কেমন জানতে চাইলে রাগত সুরে ধনীরাম রিয়াং পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, রিয়াং জাতীগোষ্ঠীর উন্নতিকল্পে কোথায় আছে P. G. P দপ্তর?
কেমন ধরণের জীবন যাপন করছে এইসব এলাকার রিয়াং জনজাতীরা? দলপতি রিয়াং-এর কথায়, এখানে নেই চিকিৎসা ব্যবস্থা। ম্যালেরিয়া, আন্ত্রিক ডায়রিয়া প্রতি মাসেই থাবায় বসায় এইসব পাহাড়ি গ্রামগুলিতে। শিশু, বৃদ্ধ, মহিলা – কেউই রেহাই পায় না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া যায় না বলে, রিয়াং জনগোষ্ঠি ঝাড়ফুঁক, ওঝাদের উপর বেশি নির্ভরশীল।
“হাসপাতালে গিয়ে কী হবে? ডাক্তার থাকে তো, ওষুধ নেই। আবার ডাক্তারও অনেক সময় পাওয়া যায় না। ওঝাদের হাতের কাছেই পাওয়া যায়, সবসময়। কাজেই সহজ, সরল রিয়াংদের কাছে সরকারি চিকিৎসকের চাইতে ওঝারা বেশি আপনজন”, মন্তব্য করলেন ধনীরাম।
আপন খেয়ালে ধনীরাম বলে চলেন, “সবচাইতেই বেশি মুশকিল শুকরগুলিকে নিয়ে। শুকর অসুস্থ হলে ওঝারা কিছু করতে পারে না। অথচ তল্লাটে কোথাও কোন পশু চিকিৎসক নেই। ফলে সামান্য রোগ হলেই বেমৎ মারা পড়ছে শুকরগুলি। জুম চাষের পাশাপাশি, শুকর পালনের উপরই রিয়াং জনগোষ্ঠির উপার্জন অনেকটা নির্ভর করে।
তেলিয়ামুড়া মহকুমার মুঙ্গিয়াব্লকের অন্তর 18 মুড়া, 43 মাইল, রাইহামছাপাড়া, হাজরাপাড়া, প্রজাবাহাদুর মলসমপাড়া, কাকরাছড়া, নোনাছড়া ইত্যাদি প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলিতে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া রিয়াং জনজাতীদের বসবাস রয়েছে। পাহাড়ের উপরে বাঁশবেতের তৈরী টং ঘরেই এদের সপরিবারে আশ্রয়স্থল।
আদিম জনগোষ্ঠির অন্তর্গত রিয়াং জনজাতীরা জীবনে আছে শুধু ‘নেই’-এর আধিক্য। ১৮ মুড়া ও তার বিস্তৃর্ণ এলাকায় বসবাসরত রিয়াংরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাষাবাদ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ সমস্ত রকম প্র্শাসনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ধারে-কাছে কোন রেশন দোকান নেই।
পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের উন্নতিকল্পে সরকারী ভাবে রয়েছে আদিম জাতির পুনর্বাসন (পি জি পি) দপ্তর রয়েছে। এই দপ্তরের মন্ত্রী মনীন্দ্র রিয়াং। মন্ত্রী নিজেই রিয়াং জনগোষ্ঠিভুক্ত, তবুও রিয়াং জনজাতী কেন পিছিয়ে?
কেনই বা তারা প্রকৃত শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ রেশনিং ব্যবস্থা, শৌচাগার ব্যবস্থা সবধরণের পরিসেবা কেন আজও এদের নাগালের বাইরে?
কেন-ই বা স্বাধীনতার এত বছর পরেও তাদের জীবনযাত্রার মানের তেমন কোন ইতিবাচক পরিবর্তন আসে নি – এইসব বিষয় নিয়ে পি জি পি দপ্তরকে ভাবতে হবে। আদিবাসীদের উন্নতির জন্য রাজ্য সরকারের গৃহীত সুনির্দিষ্ট নীতিগুলি রূপায়নে দপ্তরকে আরও বেশি সংবেদনশীল ও কার্যকরী হওয়ার আহ্বান জানালেন দলপতি রিয়াং।