August 07, 2018:
পারমিতা ঘড়াই
সুনয়নীর খোঁড়া হাঁস পরিযায়ী রাজহাঁসদের সাথে সন্দীপ-হাতিয়া নোয়াখালী বাখরগঞ্জ পার হয়ে মানস সরোবর রওনা দিল। দলনেতা ”কুঁকড়ো” চলল সবাইকে রাস্তা চেনাতে চেনাতে। খুব তাড়াতাড়ি ডানা নেড়ে উড়ে চলেছে হাঁসের দল। আর চলছে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব ,
”কোন ডিহি?” রাজসাই-খাসা ভাই।”
”কোন পুর? ” ”পেসাদপুর- পিঁপড়ে কাঁদে।” ”কার বাড়ি? ” ”ঠাকুর বাড়ি”।
”কোন ঠাকুর?” ” ওবিন ঠাকুর – ছবি লেখেন” ।
আজ সেই ”ওবিন ঠাকুর”এর জন্মদিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর আর সৌদামিনী দেবীর তৃতীয় সন্তান অবনীন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৭১ সালে। ভারতের চারুকলা জগতে তাঁর অবদান বৈপ্লবিক । বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় অবনীন্দ্রনাথের আঁকা ”বঙ্গমাতা”দেখে নিবেদিতা বললেন ”ভারতমাতা”। রবিকাকা সেই ”ভারতমাতা” কাঁধে করে নিয়ে গেয়ে বেড়ালেন ”বাংলার মাটি , বাংলার জল”। খোদাই নিয়ে অবনীন্দ্রনাথের ”কাটুমকুটুম” এর কথাও সবাই জানে। মধ্য জীবনে কলম তুলে নিয়ে ছিলেন শিল্পী । কলমের উৎসধারা থেকে জন্ম নিয়েছে ক্ষীরের পুতুলের, বুড়ো আংলা, রাজকাহিনী , খাজাঞ্চীর খাতা, নালক , শকুন্তলা র মতো বেশ কিছু বই । অবনীন্দ্রনাথ ছিলেন ভালো এস্রাজবাদকও।
আজ বলব অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিশেষ জন্মদিনের গল্প। দিনটা বাইশে শ্রাবণ। দুপুর বারোটা দশে মারা গেছেন প্রিয় রবিকাকা। জোড়াসাঁকোর পাঁচ নম্বর বাড়ির বারান্দা দাঁড়িয়ে অবনীন্দ্রনাথ। সামনের রাস্তায় মানুষের ভিড় উপছে পড়ছে । সেই ভিড়ের মধ্যে দিয়ে চলে যাচ্ছে কবিগুরুর নিষ্প্রাণ দেহ। পেন্সিল তুলে নিয়ে শিল্পী দ্রুত হাতে স্কেচ করে ছিলেন সেই দৃশ্য । ”প্রবাসী ”পত্রিকায় সেই ছবি ছাপা হয়েছিল । দ্বারকানাথের বাড়ির গলির ভিড় ফাঁকা হয়ে গেল। কবিগুরুর মরদেহ নিয়ে যখন কলকাতা শহর ঘোরা হচ্ছে তখন অবনীন্দ্রনাথ গিয়ে পৌঁছলেন নিমতলা মহাশ্মশানে।
১৯৪১ সালের ৭ ই অগস্ট ছিল অবনীন্দ্রনাথের সত্তরের জন্মদিন। যদিও ঠাকুর বাড়ির নিয়ম অনুসারে জন্মতিথির দিন পালন হতো শিল্পীর জন্মদিন । সেটা হল জন্মাষ্টমী । রবীন্দ্রনাথ মারা যাবার পর ঠাকুর বাড়ির চালচিত্র বদল হতে শুরু করেছিল। গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার জোড়াসাঁকো ছেড়ে উঠে আসে বরাহনগরের বাড়িতে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের শেষাংশ সেখানেই অতিবাহিত হয়।