কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সেপ্টেম্বর ১৬ তারিখে খরা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ এলাকার জব কার্ড ধারকদের জন্য মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন অনুসারে বছরে ১০০ দিনের অতিরিক্ত হিসেবে চলতি অর্থবর্ষে আরও ৫০ দিনের অ-দক্ষ কায়িক পরিশ্রমের কাজের কর্ম-উত্তর অনুমোদন মঞ্জুর করেছে। এর ফলে, রাজ্যগুলির পক্ষে খরাগ্রস্থ এলাকায় গ্রামীণ দরিদ্র জনসাধারণকে অতিরিক্ত মজুরি সংক্রান্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। দরিদ্রতম গ্রামীণ পরিবারগুলি এ থেকে উপকৃত হবে কেননা, গ্রামীণ মরশুমি কর্মহীনতা ঘোচানো এবং দুর্দশা কমানোর জন্য এটি বিশেষ কার্যকর হবে। চলতি খরিফ মরশুমে বর্ষার ঘাটতির দরুন কৃষকদের আশু প্রতিকারসাধনে ভারত সরকার ইতিমধ্যেই বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এইসব ব্যবস্থা সম্বলিত নির্দেশ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে যারা চাহিদার মূল্যায়নের ভিত্তিতে সেগুলি রূপায়ণ করবে। এ সম্পর্কে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তগুলি হল –
ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার কৃষকদের জন্য ডিজেলের ভর্তুকি যোগানোর প্রকল্প – খরাগ্রস্ত এলাকায় ডিজেলচালিত পাম্পসেটের সাহায্যে জীবনদায়ী সেচের কাজ চালিয়ে যেতে কৃষকদের ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জমির ফসল বাঁচাতে এবং এক্ষেত্রে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সহযোগিতায় এই প্রকল্প রূপায়িত হবে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকাকালীন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কৃষকদের এই সুবিধা দেওয়া হবে সেইসব এলাকায় যেখানে বৃষ্টির ঘাটতি ১৫ জুলাই ২০১৫ তারিখে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি। ডিজেলের মূল্যে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে আর এর অর্থমূল্য হবে হেক্টরপ্রতি ২০০০ টাকা। তবে, একজন কৃষককে সর্বোচ্চ ২ হেক্টর পর্যন্ত জমির জন্য ভর্তুকি দেওয়া হবে আর সহায়তার অর্থ ভারত সরকার ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে আধাআধি ভাগ হবে।
বীজ সংক্রান্ত ভর্তুকির ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি – খরাগ্রস্ত বলে ঘোষিত জেলাগুলিতে কৃষকদের বীজ বপন এবং খরা প্রতিরোধী উপযুক্ত মানের বীজ ক্রয়ের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বীজের ওপর বর্তমান ভর্তুকির ঊর্ধ্বসীমা ৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি চলতি বছরের শেষদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
বর্ষণসেবিত উদ্যান শস্য বাঁচানোর জন্য ব্যবস্থা – বর্ষণসেবিত উদ্যান শস্যের পুনরুজ্জীবনে অর্থসাহায্য আরও ১৫০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পটি দেশের সবক’টি খরাপীড়িত জেলা/ব্লকে রূপায়িত হবে। কৃষকদের এজন্য হেক্টরপ্রতি ৬০০০ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে, আর সর্বোচ্চ সহায়তা পাওয়া যাবে মাথাপিছু ২ হেক্টর জমির জন্য।
অতিরিক্ত পশুখাদ্য উন্নয়ন কর্মসূচি রূপায়ণ – গবাদি পশুর ক্ষেত্রে খরার ক্ষতিকারক প্রভাব কমাতে পশুখাদ্য উৎপাদনে বাড়তি সহায়তা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। খরাপীড়িত জেলা/ব্লকের এজন্য হেক্টরপিচু ৩,২০০ টাকার সহায়তা দেওয়া হবে মাথাপিছু ২ হেক্টর পর্যন্ত জমির জন্য।
রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল বরাদ্দ – রাজ্যগুলিকে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার আওতায় বরাদ্দ করা অর্থের মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ অর্থ সরিয়ে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যাতে করে ক্ষেত্রবিশেষে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায় পলাতক বর্ষার ক্ষতিকারক প্রভাব এড়াতে।
আপৎকালীন শস্য পরিকল্পনা – কৃষি মন্ত্রক দেশের ৬০০টি জেলার জন্য আপৎকালীন বিশদ শস্য পরিকল্পনা রচনা করেছে হায়দরাবাদের কেন্দ্রীয় শুষ্ক এলাকা কৃষি সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ক্রিডা)-এর সাহায্য নিয়ে। কেন্দ্রীয় কৃষি গবেষণা পর্ষদ (আই সি এ আর) ও ক্রিডা-র সঙ্গে পরামর্শ করে রাজ্যগুলিকে প্রতিটি জেলার জন্য এই ধরণের আপৎকালীন শস্য পরিকল্পনা রচনা করতে বলা হয়েছে।
রাজ্যগুলিকে পরামর্শ – রাজ্য সরকারগুলিকে ইতিমধ্যেই এম জি এন আর ই জি এ-এর আওতায় জল সংরক্ষণ কাঠামো তৈরি এবং অন্যান্য এ ধরণের প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে জল সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে এবং কম জল লাগে এমন ফসলের চাষ বাড়াতে, সেচ খালের পলি তুলে ফেলে এবং নলকূপগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে মোকাবিলার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চলতি খরিফ মরশুমের জন্য বীজ ও অন্যান্য উপাদানের যোগান – চলতি খরিফ মরশুমের জন্য বীজ ও অন্যান্য উপাদান পাওয়ার বিষয়টি সাপ্তাহিক শস্য আবহাওয়া নজরদারি গোষ্ঠীর বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে রাজ্যের তৈরি থাকার বিষয়টিও ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে সুনিশ্চিত করা হয়ে থাকে।
এসএমএস-এর মাধ্যমে পরামর্শ – মন্ত্রক ‘এম-কিষাণ’ পোর্টালের মাধ্যমে নথিভুক্ত কৃষকদের এসএমএস-এর মাধ্যমে পরামর্শ যুগিয়ে থাকে। এর মধ্যে যেমন আবহাওয়াভিত্তিক পূর্বাভাস ইত্যাদি থাকে, ঠিক তেমনই থাকে চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার ক্ষতিকারক প্রভাব কমানোর ব্যবস্থাও।
২০১৫-র খরা মোকাবিলায় সংকট ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা – খরার জন্য একটি সংকট মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা রয়েছে যা কৃষি ও সহযোগিতা দপ্তরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
এসডিআরএফ-এনডিআরএফ তহবিল – প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ত্রাণের সংস্থান করার প্রাথমিক দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। কেন্দ্র রাজ্য সরকারের প্রয়াসে পরিপূরক ভূমিকা নিয়ে থাকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে। ত্রাণ ব্যবস্থার জন্য রাজ্য বিপর্যয় প্রতিকার তহবিলের (এসডিআরএফ) রূপে রাজ্য সরকারের কাছে অর্থ গচ্ছিত থাকে। এর অতিরিক্ত হিসেবে জাতীয় বিপর্যয় প্রতিকার তহবিল থেকে অর্থ দেওয়া হয় বিশেষ রকমের অত্যধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য। এবারে এসডিআরএফ-এর প্রথম কিস্তির টাকা ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারগুলিকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।