Khawailalwng Village in Mizoram: An Ideal Example of Peace and Development
Agartala, Dec 26:
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সরকারের ভালো উদ্যোগগুলি জাতীয় গণমাধ্যমে তেমনভাবে প্রচার পায় না। সাধারণত, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিংসা অথবা কখনও কখনও সরকারের কোনও দপ্তরের শান্তি ও উন্নয়নের নির্দিষ্ট কিছু উদ্যোগে বিতর্ক শেষ হয়ে যায়।
কিন্তু, ভালো অনেক কিছুই ঘটে চলে। ১৯৮৬ সালেই মিজোরামে বৈরিতার দিন শেষ হয়েছে। মিজো জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের কঠোর শ্রম ও উন্নয়নমূলক কাজ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বাস্তববাদী মানসিকতার জন্য পরিচিত।
সত্যি কথা বলতে, মিজোরামের মানুষের কাছে ‘উন্নয়ন ও শান্তি’ কেবলমাত্র দার্শনিক বা তাত্ত্বিক কোনও ধারনা নয়, এগুলি কোনও কাল্পনিক চিন্তাও নয়।
বৈরিতার পুরনো দিনগুলিকে পিছনে ফেলে এসে মিজোরা বিশ্বাস করেন, এই দুটি বিষয় তাদের সমাজের জন্য উপযোগী এবং সুন্দর জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর আকাশবাণীতে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে যেদিন প্রথম মিজোরামের চম্পাই জেলার অখ্যাত গ্রাম ‘খোওয়ালাইলং’-এর নাম উল্লেখ করেন, মিজোরামের অনেক মানুষ তা শুনে খুশি হয়েছিলেন।
রাজ্যের প্রায় সব মানুষ সমস্বরে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কালাও মেইন’ বা ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। অধিকাংশ মিজো গ্রামই গোষ্ঠী পরিচালিত। সুশৃঙ্খল এবং পরিচ্ছন্ন।
পর্যটকরা এক-একটি গ্রামের স্ব-শাসন ব্যবস্থা, প্রতীক দেখে অবাক হন। এইসব গ্রামে এমনকি কুকুর, গবাদী পশু, মুরগীর মতো প্রাণীর চলাচলের ক্ষেত্রেও সুষ্ঠু ব্যবস্থা মেনে চলা হয়।
নিয়মিতভাবে গোষ্ঠীভিত্তিক স্বেচ্ছাশ্রমে গ্রামগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় মাংসের জন্য পশুহত্যা ও বিক্রি গ্রামে নিষিদ্ধ।
কেবল কষাইখানার জন্য নির্দিষ্ট জায়গাতেই পশু হত্যা করা ও মাংসের বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। মাছ বিক্রির জন্যও পৃথক জায়গা নির্দিষ্ট করা থাকে।
মিজোরাম সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি এবং দেশের বাকি অংশে পরিচ্ছন্নতার জন্য একটি জাতীয় কর্মসূচি ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সূচনা করেছেন।
২০১৯ সালে জাতির জনক গান্ধীজীর জন্মের সার্ধশতবর্ষে সারা দেশে পরিচ্ছন্নতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
ভারতে এযাবৎকালের মধ্যে এই প্রথম এই ধরণের কর্মসূচিতে ৩০ লক্ষ সরকারি কর্মী স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এতে অংশ নিয়েছিল।
এই কর্মসূচিতে প্রত্যেক পরিবারে ও জনসাধারণের সুবিধার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক শৌচাগার নির্মাণ ও ব্যবহারের উদ্যোগের মাধ্যমে প্রকাশ্যে মলত্যাগ বন্ধ করা, হাতে করে আবর্জনা পরিস্কারের প্রথা বন্ধ করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
এছাড়া, কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য শহর ও নগরে আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে বেসরকারি অংশগ্রহণ, মানুষের মানসিকতা বদল প্রভৃতি বিষয়ের ওপরেও এতে জোর দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে মেয়েদের স্কুল সহ দেশে ১২ কোটি শৌচাগার নির্মাণের কথা ভাবা হয়েছে। এর জন্য প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
বর্তমানে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ এবং ‘সংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’ কর্মসূচিতে মিজোরামের খোওয়ালাইলুং গ্রাম সত্যিকারের এক আদর্শ গ্রাম হয়ে উঠেছে।
মিজোরামের একমাত্র লোকসভা সদস্য সি এল রুয়ালা ‘আদর্শ গ্রাম যোজনা’ কর্মসূচিতে এই গ্রামটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
গ্রামোন্নয়নের এই কর্মসূচিতে এক একটি গ্রামের সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক কাজকর্মে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়।
২০১৪’র ১১ অক্টোবর জয়প্রকাশ নারায়ণের জন্মবার্ষিকীতে এই কর্মসূচির সূচনা হয়েছিল। মিজোরামের খোওয়ালাইলুং গ্রামটিতে সাধারণ মানুষের স্বাক্ষরতার হারও রাজ্যের গড়ের তুলনায় অনেক বেশি।
১৯১১ সালে যেখানে মিজোরামের গড় স্বাক্ষরতার হার ছিল ৯১.৩৩ শতাংশ, তখন খোওয়ালাইলুং গ্রামের স্বাক্ষরতার হার ৯৭.০১ শতাংশ এবং মহিলাদের স্বাক্ষরতার হার ৯৩.১০ শতাংশ।
আদর্শ গ্রাম কর্মসূচিতে ৫২০ জন মানুষের এই গ্রামটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাদক এবং মদ্যপান সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে গ্রামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
একাধিকবার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে গ্রামবাসীদের নিয়ে আলোচনায় বসা হয়েছে এবং কর্মীগোষ্ঠী গড়ে তোলা হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রামের ২২টি পরিবারকে আখ পেষাই মেশিন দেওয়া হয়েছে।
এই যন্ত্র ব্যবহার করে গ্রামের আখচাষীরা সহজে গুড় উৎপাদন করতে পারে। এছাড়া, গ্রামে পুকুর কাটানোর জন্য ‘বর্জ্যভূমি উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় বেশ কিছু পরিবারকে চিহ্নিত করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
‘রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা’ কর্মসূচিতে গ্রামের অনেকগুলি পরিবারকে শূকরচাষে উৎসাহিত করতে একটি করে শূকর ছানা দেওয়া হয়েছে।
এইসব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে গ্রামটি যেভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ড এবং ছত্তিশগড়ের রাজ্যগুলিতে এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
অত্যন্ত প্রাচীন অর্থনৈতিক প্রথায় বিশ্বাসী মিজোরামে উচ্চ সাক্ষরতার হার, ইংরাজি মাধ্যমে শিক্ষা, উচ্চমানের হস্তশিল্প, তাঁতশিল্প এবং কৃষির উন্নয়ন সমাজকে আধুনিকতার পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
মিজোরামে উন্নয়নের ধারা দেখে প্রয়াত বৈরী নেতা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালডেঙা এক সময় বলেছিলেন, ‘শান্তি এবং স্থিতিশীলতা এরাজ্যে উন্নয়নে জাদুর মতো পরিবর্তন আনতে পারে’।
তাঁর বক্তব্যের মূল সুরটিকে মাথায় রেখে এই অঞ্চলের মানুষকে সমস্তরকম হিংসার বিরুদ্ধে জনমতকে সংগঠিত করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্থায়ী শান্তি আনার কাজ করে যেতে হবে।















