First love, a Bengali love story highlighting the emotions of two adults
টগরপাতা ছুঁয়ে বৃষ্টির জল গড়িয়ে নামত টুপটাপ, ঝকঝকে সাদা ফুলগুলো ভেজা, সোদা মাটির গন্ধ ছাপিয়ে হাসনুহানার গন্ধ বুকে নিয়ে তুমি এসে দাঁড়াতে রাস্তার ওপারে, কিশোরী চোখের অপলক চাহুনী তোমাকে ছুঁতে চাইতো, এদিক-ওদিক ঘুরে তোমার আলগোছে দৃষ্টি ছুঁয়ে যেত আমাকে। ধীরে ধীরে তোমার বন্ধুরা এসে জড়ো হতো টগরগাছটার পাশে। বল হাতে ঢুকে যেতে ডানদিকের গলিতে।
– তোমার মনে আছে সেসব কথা?
-নেই আবার? তোমাকে দেখবার জন্য তপস্যা করতাম তো।
– তাহলে আমার ডাকে সাড়া দাও নি কেন?
-ভয়ে। বাবা মা দুজনেই তো বেদম পেটাবে।
-আজকে ভয় নেই?

মৃদু হাসল তানিয়া । ডাক্তার তানিয়া সেন। সুপ্রতিষ্ঠিতা কার্ডিওলজিস্ট। শহরের বিখ্যাত বেসরকারী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাত্রী। জীবনের যাবতীয় রোজগারের এক মোটা অংশ তিনি এই হাসপাতালের পেছনে ব্যয় করেছেন। নিম্নবিত্তদের জন্যে বিনা ব্যয়ে বা স্বল্প খরচেও চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে এখানে।
জয় এসেছিল মাকে নিয়ে । মায়ের বুকের কষ্টটা ইদানীং খুব বেড়েছে। নাম লিখিয়েছিল ডঃ ( মিসেস) টি সেনকে দেখানোর জন্য । ঘন্টা দেড়েক অপেক্ষা করার পর ডাক্তারের মুখোমুখি হল জয়। তানিয়া বসু যে ডঃ টি সেন হয়ে গেছে সেটা জয় কস্মিনকালেও ভাবেনি। তানিয়াও হতবাক । প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে তানিয়া ডাক্তার সুলভ আচরণে জয়ের মাকে দেখল , প্রেসক্রিপসান লিখল। এরপর বেশ কয়েকবার মুখোমুখি হল তারা এই একবছরে। জয়ের মায়ের বুকে পেসমেকারটা লাগাতেই হল। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে তিনি ফেরার পর তানিয়াই ফোন করল জয়কে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ অফিসার জয়। তানিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে আজ সন্ধ্যেবেলাতে অভিজাত কাফেতে। না, আজ আর ভয় নেই তানিয়ার। ভয় নেই জয়েরও। জীবনের অনেকটা পথ হেঁটে ওরা আজ অপরাহ্ন বেলায়। পেশা আর পরিবার নিয়ে ব্যস্ত জীবনে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই দেখা হয়ে গেল আবার, প্রায় তিরিশ বছর পরে।
– তিরিশ বছর পরে আবার কিসের ভয়?
– বর যদি জানতে পারে?
-জানবে।
-অশান্তি হবে না?
-তোমার বউ জানলেও তো দুঃখ পাবে।
হেসে ফেলে জয়,”দুঃখ পাবে,কাঁদবে ,কথা বন্ধ রাখবে। তারপর এসে বলবে , আমার কাছেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে।”
– ঠিকই তো বলবে। আমার বরও জানে কুড়ি বছর পর তাকে ছেড়ে আমিও আর কোথাও গিয়ে শান্তি পাব না।
-তাহলে তিরিশ বছর আগের সেই আবেগ কি মিথ্যে ছিল তানু?
অনেক দিন পর জয়ের মুখে ‘তানু’ ডাকটা শুনে চমকে ওঠে ডাক্তার তানিয়া সেন । জয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মাথা নামিয়ে জলের গ্লাসটাকে দুটো আঙুল দিয়ে স্পর্শ করে তানিয়া , ”হাসনুহানার গন্ধ পেয়ে কত বর্ষার রাত জেগে থেকেছি , মনে হয়েছে কেউ বা ডাকবে এবার ‘তানুউউউ’। ”
– ‘চলো তবে, ন’টা বাজে । বাড়ি ফিরতে হবে তো।’ তাড়া দিয়ে উঠে পড়ল জয়।
-চলো।
তানিয়াকে গাড়ি অবধি এগিয়ে দিল জয়।
ড্রাইভারের পেছনের সিটে বসে আকাশ পাতাল ভাবছে তানিয়া । টিং টিং করে মেসেজ ঢুকল ফোনে,”রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।”