।।হিমাদ্রী দেববর্মা।।
কৈয়াঢেপা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বিশালগড় ব্লকের একটি গ্রাম। কামথানা, সোনাইছড়ি, মাষ্টার পাড়া, হুসেন সর্দার পাড়া সহ মোট ১৪টি পাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে কৈয়াঢেপা গ্রাম পঞ্চায়েত। সংখ্যালঘু সহ সাধারন সম্প্রদায় মিলিয়ে ৭৪৯পরিবারের ৩৫৯৮জন মানুষের বসবাস এই গ্রামে। বিজয় নদ-্এর অববাহিকায় এই গ্রামের অবস্থান। দীর্ঘ বছর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি কৈয়াঢেপায়। এই গ্রামের জীবন জীবিকার মূল উৎস ধান চাষ। কিন্তু ছিলনা সেচ ব্যবস্থা। ফলে অনেক জমি অনাবাদী পড়ে থাকত। ছিলনা বিকল্প আয়ের কোন উৎস। অভাব অনটনে দিনপাত করতে হতো গ্রামের মানুষের। গ্রামের প্রবীন ব্যাক্তি প্রানবল্লভ দাস, আলি উদ্দীন-এর মতো আরও অনেক গ্রামবাসী জানান, সঠিক পরিকল্পনার অভিবে এ গ্রামের কোন উন্নয়ন হয়নি। কী করে, কিভাবে উন্নয়ন হবে সে ব্যাপারে কারও কোন চিন্তা ভাবনাই ছিল না। কিন্তু ১৯৭৮ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে বিভিন্ন বাস্তবমুখী পরিকল্পনা রূপায়নের ফলে জনগনের সার্বিক সহযোগিতায় আজ এই জনপদকে চেনা যায়। গ্রামের এই উন্নয়ন পথ চলতি যে কোন মানুষের চোখ জুড়িয়ে দেয়। উন্নয়নের পরশে টিলা ও সমতল ভূমি নিয়ে গড়ে উঠা এই জনপদে এখন নগর জীবনের ছোঁয়া।
কথা হচ্ছিল পঞ্চায়েতর প্রধান সারথী বালা দাসের সঙ্গে। তিনি দু:খের সাথে জানান, সীমান্তবর্তী এই গ্রামটি এক একসময় নানা ভাবে বঞ্চিত ছিল। ছিলনা চলাচলের জন্য ভাল রাস্তা, হাট-বাজার, বিদুৎ ও পানীয়জল এবং সেচের ব্যবস্থা। ছিল না শিশু থেকে কিশোর-কিশোরীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা। আজ এ গ্রামের মানুষের মতামত ও চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহনের মাধ্যমেই কৈয়াঢেপা ক্রমে ক্রমে সেজে উঠেছে। এক কথায় সমৃদ্ধ গ্রাম গড়েছেন গ্রামের মানুষ।আজ মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। এ গ্রামের অধিকাংশ রাস্তা এখন পাকা। চলছে গাড়ি। জ্বলছে বিদ্যুতের আলো। এলাকার মানুষ ঘরে ঘরে পাচ্ছেন পরিস্রুত পানীয়জল।অধিকাংশ জমি এখন সেচ সেবিত। গড়ে ওঠেছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিকাঠামো। উৎপাদিত পন্য সামগ্রী বাজারজাত করার জন্য তৈরি হয়েছে পাকা বাজার শেড। রূপায়িত হচ্ছে বনায়ন সহ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রকল্প।
মনোয়ারা বেগম, বিনোদ দেববর্মা, যমুনা রানী দাসের মতো গ্রামের অনেকে আলাপচারিতায় জানান, কৃষি জমি থাকলেও একমাত্র জলের অভাবে অনেক কষ্ট করে এক ফসল চাষ করা সম্ভব হতো। আজ গ্রামের ৪০০হেক্টর জমি চাষের আওতায়। এরমধ্যে ৩৫০ হে: জমিতে দু’টি ফসল চাষ হচ্ছে। এর জন্য গ্রামের ৫০টি ছোট এবং ১টি বড় জলাশয়কে জলসেচের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এই জলাশয়গুলি থেকে দু’টি এল আই স্কীমের মাধ্যমে কৃষি জমিতে জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, পানীয় জলের ব্যবস্থায় রয়েছে গভীর নলকূপ সহ নানা উৎস।
চলতি অর্থ বছরে এই কর্মসূচিতে আরও ৩টি গভীর নলকূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে গ্রাম প্রধান জানালেন। তিনি জানান, গ্রামের প্রতিটি বাড়ীঘরের পাশাপাশি এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ার রাস্তায়ও আজ বিদ্যুতের আলো জ্বলছে।যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাঁচা রাস্তা, ইট সলিং ও পিচঢালা মিলিয়ে ১৪কি মি রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। সাক্ষরতার দিক দিয়ে অন্য গ্রামের চেয়ে কৈয়াঢেপাও পিছিয়ে নেই। বর্তমানে এ গ্রামের ৯৭ শতাংশ মানুষ সাক্ষর। তবে সাক্ষরতার একশ শতাংশ সফলতা অর্জনে জোর প্রস্তুতি চলছে। উল্লেখ্য, এ গ্রামের ১৮০৪ জন মহিলার মধ্যে আজ ১৭৪৫ জন মহিলা সাক্ষর। শিশুদের শিক্ষায় রয়েছে ৭টি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র। বিদ্যালয় শিক্ষার উন্নয়ন গড়ে উঠেছে ২টি উচ্চ বিদ্যালয় এবং মাদ্রসা।