April 11, 2018:
টান – ১
ট্রেনের দুরন্ত গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জালনা গলে হুহু করে হাওয়া আসছে। হাওয়াটা যেন ঠান্ডাটাকে আরো আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে নিয়ে আসছে কামরার মধ্যে। গায়ে চাপানো মার্কিনী জ্যাকেট। আমেরিকা বাসী বান্ধবী উপহার দিয়েছিল । ভেবেছিলাম এদেশে এজিনিস কোনো কম্মে লাগবে না। আমার ধারনা ভুল প্রমাণ করে রুক্ষ রাঢ়ের প্রচন্ড ঠান্ডায় জ্যাকেটটা রক্ষয়িত্রীর ভূমিকায়। সত্যি কথা বলতে কি, এ তল্লাটে এই মাঘের শীত না কাটালে বুঝতেই পারতাম ভারতবর্ষে পাহাড়-পর্বত ছাড়াও এমন জায়গা আছে যেখানে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা পড়ে।এখন ফাল্গুন মাস ।তবুও শীত এখনো কামড় বসাচ্ছে।মাথার টুপি আর মাফলার টাকে ঠিক করে নিতে নিতে ভাঙা জানলার উল্টোদিকের আসনে বসা মেয়েটির দিকে চোখ গেল। মেয়ে বলবো? নাকি কিশোরী?ট্রেনের কামরার অল্প আলোতেও জ্বলজ্বল করছে কপালের মেটে রঙের টিপ,সিঁথিতে ঐ রঙেরই সিঁদুর। বেগুনী রঙা সালোয়ার কামিজের ওপর একটা শ্যাওলা রঙের সোয়েটার পরা,লাল চাদরে মাথা ঢেকে পাশে বসা একটা দশ-বারো বছরের ছেলের সাথে কথা বলে চলেছে। ফুলপ্যান্ট আর সোয়েটার পরা ছেলেটার কোমরে জড়ানো একটা বহু ব্যবহৃত গামছা , মাথায় উলের টুপি,গলায় মাফলার। কোন স্টেশন থেকে উঠলো এরা?
চাকরী সূত্রে ঝাড়খন্ডের এক প্রত্যন্ত গ্রামে রাস্তা তৈরীর ঠিকাদারির কাজ নিয়ে পড়ে আছি। শ্রমজীবি দেহাতী মানুষগুলোর সাথে দিন কাটে আর রাত কাটে আকাশের তারা গুনে। লাল পলাশ আর মহুয়ার গন্ধ জড়ানো এই গ্রামে সন্ধ্যে নামে আদিবাসীদের মাদলের বোলে।আমার কল্লোলিনী শহর তখন নিয়ন আলোর প্রসাধনী মেখে মায়াবিনী। দ্রিমি দ্রিমি মাদলের বোলের তালে তালে আমি মনে মনে চলে যাই ঐ মায়াবিনীর কাছে। চমক ফেরে সঙ্গে থাকা কাজের লোকটির ডাকে। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমোতে যেতে হয় তাড়াতাড়ি। ভোর থেকে কাজ শুরু করতে হবে যে!
আর একদিন পরেই আদিবাসীদের বাহা পরব। তিনদিন ধরে চলবে ওদের উৎসব। সঙ্গে পাওনা একটা রবিবার। দ্বিতীয়বার ভাবার অবকাশ দিলাম না নিজেকে। সন্ধ্যেবেলায় কাজ শেষ হতেই জিপের ড্রাইভারকে বললাম স্টেশনে পৌঁছে দিতে। রাতের হাওড়াগামী ট্রেনে চেপে বসলাম।
বাড়ি ফেরতা স্থানীয় লোকেদের ভিড়ে ঠাসা ছিল কামরাটা। রাত বাড়তেই ভিড় পাতলা হয়ে এলো। সারা কামরার এখন সংরক্ষিত আসনের যাত্রী। তারা সকলেই নৈশ আহার সেরে ঘুমের আয়োজন করছে। চেকারকে ম্যানেজ করে একটা শোবার বাঙ্কের ব্যবস্থা করেছি ঠিকই, কিন্তু কূপের ভাঙা জালনা দিয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়া কে কিভাবে সামলাবো সেটাই ভাবছিলাম। তখনই চোখ পড়ল ঐ কিশোরী আর বাচ্চা ছেলেটার দিকে। ভিড়ভাট্টার মধ্যে দেখতে পাইনি আগে।
টান-২
প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনা রুটিতরকারী আর ডিমসেদ্ধ খেয়ে শুয়ে পড়লাম । যাওয়াআসার পথের ধারে দুটো বাঙ্কের মধ্যে নীচেরটাই আমার বরাতে জুটেছে। সারারাত লোকজনের হাঁটাচলা আর হকারের হাঁকডাক সঙ্গে নিয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করতে হবে। পাশের কূপের আসা আলো থেকে চোখ ঢাকতে টুপি টাকে টেনে নামালাম নাকের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ছেলেমেয়ে দুটো তখনো কথা বলে চলেছে। বোধহয় শোবার জায়গা জোটাতে পারেনি। কিন্তু মধ্যম বিছানার অধিকারী তাড়া দিলো ওদের। কিশোরীটি সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়ল নীচের বাঙ্কেই। মাথা আমার দিকে। ছেলেটি গুটিশুটি মেরে বসল ওর দিদির মাথার কাছে। দিদিই বোধ হয়। কারণ ছেলেমেয়ে দুটোকে দেখে এছাড়া আর কোনো ভাবনা আমার মাথায় এল না।চলন্ত ট্রেনের ঝিকিঝিকি শব্দ আর দুলুনিতে চোখ বুজে এল। শান্ত হয়ে এল যাত্রীদের কথাবার্তাও। আধো অন্ধকার কামরাগুলোকে বুকে নিয়ে দুরন্ত ইঞ্জিন রাতের অন্ধকার চিরে হুইসেল বাজিয়ে ছুটে চলেছে গন্তব্যের দিকে। কাঁচের জানালা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পরে পরে তীরবেগে সরে যাচ্ছে আবছায়া আলোর ঝলক।
সারাদিনের ক্লান্তি ঠান্ডা হাওয়া মেখে বিশ্রাম চাইল, চোখ বুজে এল। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে কিসের যেন এক অবিরাম গুণগুণানি আমার মস্তিষ্ককে সচল করতে চাইছে। ঘুমন্ত চোখ আর অবসন্ন দেহকেও ভরে দিচ্ছে অস্বস্তিতে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কান পাতলাম।একটু পরে বুঝলাম ঐ ছেলেমেয়েদুটোর চাপা গলার কথোপকথনই এই গুণগুণানির কারণ। যখন থেকে ওদেরকে দেখছি তখন থেকেই দুজনে কথা বলে চলেছে। এখনো শেষ হলো না!সারারাত কি দুজনের কথা চলতেই থাকবে? ভাই বোনের মধ্যে কি এমন কথা থাকতে পারে যে থামাই যাচ্ছে না। খাওয়া হয়ে গেছে। এখন শুয়ে পড়লেই পারে। বাকি কথা না হয় কাল সকালে উঠেই হবে। ভাবা কথা গুলো বলা ঠিক হবে কিনা এই নিয়ে যখন দ্বন্দ্বে আছি তখন খেয়াল হল ওরা খেয়েছে তো! দেখলাম না তো! সঙ্গে তো ব্যাগ ও চোখে পড়ছে না। একটা ছোট কাপড়ের পোঁটলা, মেয়েটা সেটাকে মাথায় দিয়ে শুয়েছে। তাহলে বোধ হয় কাছাকাছিই কোথাও নেমে যাবে…। যাক! সাতপাঁচ ভেবে কাজ নেই। আমি ঘুমোনোর চেষ্টায় চোখ বন্ধ করলাম।
না! ঘুম এলো না । বন্ধ চোখ আর খোলা কানে ভেসে এল ছেলেমেয়েদুটোর টুকরো কথা।

– তু ঠিক চিনিয়ে লিতে পারবি তো সন্তোষ?
– আশাদিদি ,ট্রেনে উঠার পর থিকে তুমি কত্তবার জিজ্ঞাস করলে বোলো তো কতাটা?
-আসলে তুর মোতো এক ছোটো ছিলার কতায় পালায় এলাম ঘর থিকা। তাই ভাবছি..
-আরে আমি তো ঠিক শুনেছি ঐ বাবুর কাছে। রাজেশ ভাইয়া বঢ়াবাজারে একটা গুদামেই কাজ করে গো। কোলকাতায়।
-হুউউ..
আনমনে উত্তর দেয় কিশোরীটি।
সন্তোষ বলেই চলে, ” হাওড়া ইস্টেশন থিকা একটা বাস লিবো। বঢ়া বাজার লামবো। তারপর ইখানে রাজেশ ভাইয়ার নাম বললে যে কেউ দেখিয়ে দিবে”।
নবীনের কথায় ঘুম আমার চোখ থেকে পালিয়ে গেল। কি বলে রে ছোড়াটা! এ কি তোদের হদ্য গ্রাম?সবাই সবাইকে চেনে?নাম বললেই দেখিয়ে দেবে?
কিশোরী বধূঁটির নাম আশা। বয়স ষোলো-সতেরো হবে। হতদরিদ্র পরিবারের পাঁচটা ভাইবোনের মধ্যে সবথেকে বড়ো সে। বাপ অন্যের জমিতে মুনিষ খাটে। মাও যায় বাবার সাথে। জমি চষে বাপ যা পায় মা পায় তার অর্ধেক। তাও সারাবছর কাজ থাকে না। পাঁচটা ছেলেমেয়ের রুটির যোগানও তাই প্রয়োজনের তুলনায় কম আর অনিয়মিত। আশা আর আশার দু’বছরের ছোটো ভাই নবীন গাঁয়ের মেজযাদবদের ছাগল আর মোষ চড়ানোর কাজ করে কিছুটা বাড়তি রোজগারের আশায়। ভোর বেলা ছাগল আর মোষগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় নদীর ধারে। শুধু ওরা দুজন নয়, আরো তিনটে ছেলেমেয়েও যায় ওদের সাথে। সেখানে একটা বড়সড় জারুল গাছের নীচে ওরা পাঁচজন বসে। নবীন দাগ কেটে বাঘবন্দী খেলার ছক আঁকে মাটির ওপর। এরপর কোমরে বাঁধা গামছা থেকে অতি যত্নে রাখা ঘুঁটি গুলো সাজাতে থাকে ছকের ওপর। দুজন খেলে আর বাকীরা ঘিরে বসে দেখতে থাকে।
টান ৪
দিনগুলো এভাবেই চলছিল। একঘেয়ে ,ছন্দহীন। জীবনের গতি তবুও থেমে থাকে না। সময় থামতে দেয় না। নাবালিকা আশার দেহে বাহা পরবের মাদল সবে দ্রিমি দ্রিমি বাজতে শুরু করেছে। সে সময়ই সোরেন কাকা একদিন আশার বাবাকে ডাক দিলো-”হা রে হিমু , তুর বড়ো বেটিটাতো পুঁইডগার মতো লকলকিয়ে বেড়ে উটেচে রে! বিয়া দে ইবার”। হিমু হাতজোড় করে বলে,”পয়সা কুথায় যে বিয়া দিমু কাকা? তাছাড়া বিটা কুথায় পাবো? কে লেবে মোর বেটি কে?” সোরেনকাকাই দায়িত্ব নিয়ে নেয় সেদিন আশার বর খোঁজার আর মাস তিনেকের মধ্যে জুটিয়েও দেয় বর। সেই-ই রাজেশ। রাজেশ মান্ডি। কলকাতার বড়বাজারের এক কাটরায় কাজ করে। কাপড়ের গুদামের পাহারাদারি। বিয়ের সময় বরের মুখটা এক-দুবার দেখেছিল বারো বছরের আশা। বিয়ের দুদিন পরে ওকে রেখে বর চলে গেল কলকাতায়। ছুটি নাকি নেই আর। তখনই ফেরত না গেলে চাকরী চলে যাবে। তাই…।
এরপর ছ’বছর ধরে বাহা পরব আসে যায়, বসন্তের নতুন পাতার মতো দিনে দিনে পল্লবিত হয়ে ওঠে আশা, কিন্তু তার আশা মেটে না। রাজেশ আর এমুখো হয়নি,কিন্তু বারো বছরের কিশোরীর হৃদয়ে সযতনে রাখা স্বামীর মুখখানি দিনে দিনে উজ্জ্বলতর হয়েছে।-এই আশা! তুই ঘরে আছিস? কুথায় রে…
পারির গলা শুনে বেরিয়ে আসে আশা।
-কি হয়েচে?
– কইলকিতা থিকা অ্যাক বাবু এসেচে রে। বঢ়াবাজারে কাজ কোরে।
-তু.. ধড়মড়িয়ে ওঠে আশার বুক।”কুনো খোঁজ দিলো রে?” চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে জিজ্ঞেস করে আশা।
-তাই তো তুকে বলতে আসচি। আয় আমার সাথ্…। আশার হাত ধরে টানতে টানতে হাজির হয় পারি বুড়ো বটগাছটার তলায়। ”কিন্তু কুথায় গেল সেই বাবু?” সামনে দাঁড়ানো সন্তোষকে জিজ্ঞেস করে পারি, ”হা রে সন্তোষ, কইলকাত্তার বাবু লোকটা গেলো কুথায় রে?”
– সি তো কক্খন চলি গিছে।
-তু দাঁড়াতে বল্লিনি ক্যানো? রাজেশ জামাই এর কথা আশা নিজ্যের কানে সুনতো…
– বাবু তু বল্লো, রাজেশদাদা কইলকাত্তার বঢ়া বাজারের এক কাপ্পড়ের গুদামে কাজ কোরে। টেরেনে কোরে হাওড়া ইস্টেশনে নেমে বাসে করে গেলেই বঢ়াবাজার। ইতো খুবই সহজ পারিদিদি।আশা এতক্ষণ চুপ করে ওদের দুজনের কথা শুনছিল। এবার সন্তোষকে জিজ্ঞেস করলো ,”হারে সন্তোষ! পারবি মোরে লিয়া যেতে?”
-কিনো পারব না? টেরেনে কোরে হাওড়া ইস্টেশন। সিখান থিক্যা বাসে কোরে বঢ়াবাজার। উখানে রাজেশদাদার নাম বল্লেই হল।
পারির দিকে একবার তাকাল আশা। তারপর ছুট্টে বাড়ি চলে গেল। পারি চুপ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।
পরদিন সন্ধ্যেবেলা আশার মা পারির বাড়ি আসে। ”হা রে আশা ইখানে আছে রে?” সারা পাড়া তোলপাড় করে খোঁজে আশার বাপ-মা। সন্তোষের বাপ-মা ও হদিশ পায় না ছেলেটার। পারির কপালে ভাঁজ পরে,চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। ছুটে যায় মারংবুরুর মন্দিরে।
টান ৫
বিপরীতমুখী এক্সপ্রেস ট্রেনের কানফাটা হুইসেলে চমক ভাঙল।ঘুম আসছিল না । তাই ছোট্ট সন্তোষের সাথে ভাব জমিয়েছিলাম। সবেমাত্র ক্লাস ফাইভে উঠেছে সে। আশাদিদি খুব করে ধরেছিল ওকে রাজেশদাদার কাছে নিয়ে যাবার জন্য। বলেছে রাজেশদাদার কাছে পৌঁছে দিলেই রাজেশদাদাকে বলে একটা মোবাইল ফোন কিনে দেবে ওকে। তাই রাজি হল আসতে। নাহলে এখন বাহা পরবের সময়।আসতে ইচ্ছে করে নাকি!
রাত ভোর হয়ে আসছে। আনাগোনা বাড়ছে হকারদের। আর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ট্রেন হাওড়ায় ঢুকবে। নিষেধ করব ওদের? ফিরে যেতে বলবো ওদের নিজের গ্রামে? কিশোরীবঁধূর স্বপ্নকে কি বাস্তবের আঙিনায় আছড়ে ভাঙব?
”ও বাবু ! উঠুন। হাওড়া ইস্টেশন যে এসে গেছে। এখনো ঘুমোবেন?”
ধড়মড়িয়ে উঠলাম।
আরে! ট্রেন কখন যে প্ল্যাটফর্মে ঢুকে গেছে খেয়ালই করিনি। আশার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখের পাতা এক হয়ে গেছিল…। সারদিনের ক্লান্তিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি সন্তোষের সাথে কথা বলতে বলতে। চা-ওলার ডাকে ঘুম ভাঙল।
চোখ খুলেই চমকে উঠলাম আমি। কামরা তো পুরো ফাঁকা। তার মানে ট্রেন অনেকক্ষণই প্ল্যাটফর্মে ঢুকেছে। কিন্তু ওরা কোথায়? বলেছিলাম যে হাওড়া থেকে বড় বাজারের বাসে তুলে দেব আমি। ঘুমোচ্ছি দেখে চলে গেলো?
মনে মনে ভেবেছিলাম ওদেরকে সঙ্গে নিয়েই বড়বাজারে যাব। খুঁজে দেখব রাজেশকে। পেলে নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়িমুখো হব। আর না পেলে ফিরতি ট্রেন ধরিয়ে দেবো ওদের। কিন্তু গেল কোথায় ওরা? একটানে আমার ব্যাগপ্যাকটাকে কাঁধে নিলাম। জুতোটা গলিয়েই কামরার দরজায় ছুটে এলাম। কোথায় ওরা? ট্রেন থেকে সদ্য নামা যাত্রীদের একমুখী গতি ঝাড়ুদারের ঝাড়ু সামলে, হকারদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলেছে বিরামহীন পায়ে। এইই জনসমুদ্রের মধ্যে আমার চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে বেগুনী সালোয়ার,লালাচাদর । ঐযে দূরে,বহুদূরে প্ল্যাটফর্মের শেষ বাঁকে ছোট্ট ছেলেটির হাত ধরে নিমেষের মধ্যে হারিয়ে গেল বেগুনী সালোয়ার ,লাল চাদর। দীর্ঘশ্বাস চেপে পা রাখলাম প্ল্যাটফর্মে।
ছুটি কাটিয়ে ফিরে গিয়েছিলাম নিজের কাজের জায়গায়। সেখান থেকে আশার গ্রাম জিপে করে বড়জোর একঘন্টা। কলকাতা থেকে এসেছি শুনে ভিড় করেছিল গ্রামের লোক। গল্প জমিয়েছিলাম। গল্প করতে করতে খোঁজ করেছিলাম আশা আর সন্তোষের। ওরা ফেরত আসেনি গ্রামে। গ্রামের লোকের ধারনা আশা সন্তোষকে ফুসলিয়ে নিয়ে গেছে কলকাতায় ঘর বাঁধবে বলে।
ফিরে এসেছিলাম নিজের ওপর ভীষণ রাগ আর মনের ভেতরে তীব্র যন্ত্রনা নিয়ে। আমার মুহূর্তের ভুলে কলকাতার অন্ধগলিতে দু-দুটো ফুলের বাহা পরবের আনন্দ চিরকালের মতো নষ্ট হয়ে গেছে। কালা ব্যবসায়ীর কাছে হয়তো বিকিয়ে গিয়ে ওরা এখন বেরঙা, পিষ্ট, নষ্ট। মাদলের দ্রিমি দ্রিমি শব্দ ভেসে আসছে। চেয়ার পেতে তারাভরা আকাশের নিচে বসে আছি ।কৃষ্ণপক্ষের চাঁদঢাকা পড়েছে টুকরো মেঘে। তার পাশেই আমি দেখতে পাচ্ছি বেগুনী সালোয়ার -লাল চাদর-কপালে মেটে রঙা সিঁদুরের টিপ ,ভাইএর হাত ধরে জলভরা চোখে আমাকে বলছে-”বাব্বু ,তু কেনো ঘুমায়ে পড়লি?”