Nandita Datta
Agartala, October 09, 2019:
প্রথমেই থাকতো প্রভু বাড়ির দেবী, তার পর দুর্গা বাড়ির দেবী পর পর সার বেঁধে থাকতো কর্নেলবাড়ি, খাজাঞ্চি বাড়ি, অসিত দেববর্মনের বাড়ি এবং তারপর একের পর এক ক্লাবের পুজো, বাড়ির পুজোর দেবী। সবমুর্তি দুর্গা বাড়ির সামনে জড়ো হতো। পুলিশ ব্যান্ড সামনে নিয়ে শুরু হতো প্রতিমা নিরঞ্জনের পালা। কাঁধে করে নেওয়া হত অনেক বাড়ির ঠাকুর এবং খুব সম্ভবত দুর্গা বাড়ির ঠাকুর ও। পোষ্টঅফিস চৌমুহনীর সামনে কি ভিড়।। দাঁড়িয়ে মূর্তি গুনতাম। সে অনেক কাল আগের কথা বই কী – আমাদের ছোট্টবেলাকার। তখন দশমীতেই বেশিরভাগ নিরঞ্জন হত।
সময়ের নিয়মে আস্তে আস্তে শহরে বিগ বাজেটের পুজো শুরু হল। দশমীতে বড় ক্লাবের দেবীর নিরঞ্জন কমতে থাকে। এখন তো দশমীতে হাতে গোনা কয়েকটা ক্লাব, বাড়ির পুজো গুলো দশমীতে নিরঞ্জন করে। তবে অনেকে-ই এখন দুর্গা বাড়ির সামনে আর আসেনা। সরাসরি দশমীঘাটেই যায়।
আমাদের ছোটবেলায়, দেবী নিরঞ্জনের পালা দেখা শেষ করে যখন বাড়ি ফিরতাম, ঠাম্মা ধান দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করতেন। ঘিয়ের প্রদীপের আলো ছুঁইয়ে দিতেন। আর, নিরঞ্জন দেখে আসার সময় জিলিপি কিনে আনতেন বাবা। মা কুচোনিমকি, নারকেলের নাড়ু বানাতেন। প্রনামের পর মিষ্টি নোনতা মুখ।
সময়ের সাথে অনেক কিছু বাদ হয়ে যায়। মিস করি বাবার সাথে নিরঞ্জন এ কয়টা ঠাকুর দেখলাম, আঙ্গুলের কড়ে সেই হিসেব কষা। মিস করি ঠাম্মার ধান দুর্বা, ঘিয়ের আলোর ছোঁয়া।
অতীতের মত আজও দশমীতে দেবীকে বরন করতে যাই। কেন যাই? – মা ঠাকুমা কে দেখেছি বলে? না, ওই যে হাঁড়ির ভেতর দেবীর মুখের ছায়াটা পড়ে সেটা আর কখনো দেখা যায়না – শুধু মাত্র দশমীতেই সেটা দেখার সুযোগ আসে।আর দেবীর পুজার বেল পাতা এনে বইয়ের ভেতর রাখার লোভ। আসলে, ছোটবেলাটাকে এভাবেই ধরে রেখেছি।
**একবার কেরালায় ছিলাম-কোচিতে। দশমীতে মন খারাপ লাগছিল। হঠাৎ অবাক হয়ে দেখলাম একটা প্রতিমা এগিয়ে আসছে ভারতীয় নেভীর আবাসন থেকে – বিসর্জনের পালা। আমরা এগিয়ে গেলাম। প্রনাম করে ফিরে আসার সময় দেখলাম জিলিপি ভাজা হচ্ছে। কি যে আনন্দ হল। সাথে সাথে কেনা হলো। তবে স্বাদটা একটু যেন অন্য রকম। কে জানে, গিরিধারী মিষ্টান্ন ভান্ডার বা গোপালের নয় বলেই হয়তো। স্থান মাহাত্ম্য বলে ব্যাপার আর কি।
শুভ বিজয়া।