।।সিদ্ধার্থ শংকর পাল।। ProMASS: Sep 15, 2016: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে অনুপম ত্রিপুরার পশ্চিম বাচাইবাড়ি। পাশেই বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া, সবুজে ঘেরা প্রকৃতিকে নিয়েই পশ্চিম বাচাইবাড়ি এডিসি ভিলেজ এলাকার সহজ, সরল মানুষের জীবন জীবিকা। খোয়াই জেলার তুলাশিখর ব্লকের ১৭টি ভিলেজের মধ্যে পশ্চিম বাচাইবাড়ি একটি। চারিদিকে ছোট ছোট টিলা। নীচে সমতল উপত্যকা। ধানের ক্ষেত, ছোট বড় জলাশয়। সুন্দর ও শান্ত পরিবেশ। খোয়াই শহর থেকে প্রায় ১০/১২ কিমি। সেখান থেকে পূর্ব ও উত্তরে এগিয়ে গেলেই বেহালাবাড়ি ভিলেজ। আরও প্রায় ১২কিমি পূবে গেলেই আরেক প্রান্তিক শহর কমলপুর।

কোন এক সময় প্রত্যন্ত ও দুর্গম হিসেবেই খ্যাত ছিল পশ্চিম বাচাইবাড়ি। ভারত-বাংলাদেশ সীমানা ঘেঁসেই সোজা পিচ ঢালা রাস্তা চলে গেছে পশ্চিম বাচাইবাড়ি ভিলেজকে ভেদ করে। খোয়াই শহর থেকে সিঙ্গিছড়া এলাকা অতিক্রম করলেই পশ্চিম বাচাইবাড়ি ভীলেজের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলি জানান দেয়। এক কথায় বর্ধিষ্ণু গ্রাম বললে ভুল হবে না। এই গ্রামের কেউ-ই অলসভাবে বসে নেই। প্রত্যেকেই চাষাবাদ করে নিজেদের আর্থিক বুনিয়াদকে শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ভিলেজ কমিটির চেয়ারম্যান বিনয় দেববর্মা। তিনি কথা প্রসঙ্গে জানালেন এই ভিলেজে রয়েছে ৫টি ওয়ার্ড এবং ১৭টি পাড়া। জনসংখ্যা ২৬৯৩ জন। ভিলেজে রয়েছে ১৩৪টি বি পি এল এবং ৪০৭টি এ পি এল পরিবার। এখন পর্যন্ত এই ভিলেজে আবাসন প্রকল্পের জন্য ১৫৯টি দু:স্থ পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। এছাড়া বৃদ্ধ ভাতা পাচ্ছেন ১১৬ জন। উপজাতি অধ্যুষিত হলেও এই ভিলেজে তপশিলী জাতি ভুক্ত এবং সাধারণ পরিবারের মানুষও বসবাস করেন। মিশ্র জনবসতির এই গ্রামের প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। একে অপরের সুখে দু:খে হন অংশীদার। এই সামাজিক সংস্কৃতির চিত্র দেখা গেল ভিলেজের বিভিন্ন প্রান্তে। অথচ এক সময় বিভেদকামী শক্তির আষ্ফালনে এই বাচাইবাড়ীর কথা শুনলে মানুষ আঁতকে উঠতো। আজ এখানে শান্তি, সম্প্রীতির বাতাবরন।

ভিলেজের চেয়ারম্যান জানান, এই ভিলেজ এলাকার অধিকাংশই টিলাভুমি। এর পরিমান প্রায় ৬৫৫.৫৩ হে:। চাষযোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ২০হে:। স্বল্প পরিমান চাষযোগ্য জমি হলেও এই জমিগুলিতে সারা বছর ধরে যাতে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারেন তার জন্য কৃষি দপ্তর এগিয়ে এসেছে। বিজ্ঞান ভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য সময় মতো নানা পরামর্শ ছাড়াও উন্নতমানের বীজ, সার ও ঔষধ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। এর জন্য রয়েছে একটি সেক্টর অফিস। টিলাভূমিতে অর্থকরী ফল, সব্জী ও রাবারের বাগিচা রয়েছে। রয়েছে প্রতিটি পাড়ায় বিদ্যুৎ পরিসেবা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। আছে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচালয়। সেচ ও পানীয় জলের জন্য রয়েছে ১৫টি গ্রামীন জল সরবরাহ প্রকল্প। রয়েছে ১৬টি মিনি ডিপ টিউবওয়েল, ২১টি হ্যান্ড পাম্প ও ১০টি রিংওয়েল। বিনয় বাবু জানান, ভিলেজের বেশির ভাগ এলাকা টিলাভূমি হওয়ায় দুই টিলার মাঝখানে যে নীচু জায়গা রয়েছে তাকে বাঁধ দিয়ে কোথাও জলাশয় বা লেক তৈরী করা হয়েছে। এছাড়াও ছোট বড় কয়েকটি পুকুর খনন করা হয়েছে। এগুলি ভিলেজ কমিটির স্থায়ী সম্পদ হলেও এলাকায় যারা দরিদ্র মাছ চাষী রয়েছেন তারা যাতে মাছ চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন তার জন্য মৎস দপ্তর থেকে মাছের পোনা ছাড়াও মাছ চাষের বিভিন্ন সামগ্রি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় ঐসব মাছ চাষীদের মাছ চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষনও দেওয়া হয়।
মিশ্র জনবসতির এই গ্রাম শিক্ষা কর্মসূচিতেও পিছিয়ে নেই। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য রয়েছে ১৩টি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র। এই কেন্দ্রগুলির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্য দেওয়া হচ্ছে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫টি, এস বি স্কুল ২টি আর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১টি। এখানে স্বাস্থ্য পরিসেবার জন্য রয়েছে মঙ্গলচন্দ্র দেববর্মা স্মৃতি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। উৎপাদিত কৃষির ফসল বাজার জাত করা ছাড়াও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রির জন্য পশ্চিম বাচাইবাড়ি বাজারের উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাজার শেড নির্মান করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক বিনোদন, আলোচনা সভা ইত্যাদির জন্য নির্মিত হচ্ছে কমিউনিটি হল।
জনগণের অংশগ্রহন এবং রাজ্য সরকারের গৃহীত উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে পশ্চিম বাচাইবাড়ি ভিলেজ। এক কথায় সামগ্রিক উন্নয়নের ঘেরাটোপে সেজে উঠেছে নতুন রূপ। এক সময়ের বুলেটের আওয়াজের পরিবর্তে আজ শোনা যায় মেশিনের শব্দ। নজর কাড়ে মানুষের ব্যস্ততা। উন্নয়নের ছোঁয়ায় বাড়ছে মানুষের প্রত্যাশা।