অর্ঘ্য সেনের সাথে এভাবেই আমার আলাপ। সেদিন ট্রেনে আমাদের সাথেই ফিরেছিলেন তিনি।কলকাতায় আসার পর যোগাযোগটা রয়েও গেল।এরপর বোলপুরে যতবার গিয়েছি অর্ঘ্যদা সেখানে থাকলেই ধর্ণা দিয়েছি ওনার বাড়িতে।ঠিকানা দিয়ে বলেছিলেন ” দেখবি লেখা আছে ‘অর্ঘ্য সেনের খোঁয়াড়’।কালোবাড়ি লাল টিপ”। স্মৃতির সারণী বেয়ে পিছু হটে গেলাম ঊনিশ বছর।গায়ক অর্ঘ্য সেনের গান নিয়ে বলবার ধৃষ্টতা আমার নেই।আমি অবাক হয়েছি তাঁর যাপিত জীবন দেখে।নিরহংকার মানুষটা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছেন ব্যারাকপুরে, আমাদের বাড়িতে।বোলপুরে ‘খোয়াই লজ্’এ আমাদের ভাড়া করা ঘরে এসেছেন কয়েকবার। শুনিয়েছেন কত গান।সঙ্গে আনতেন বাড়ির বাগানে ফলানো সব্জি। একবার একটা বিশাল লাউ নিয়ে উপস্থিত হলেন সন্ধ্যেবেলায়।বললেন, “রান্না কর , খেয়ে ফিরব”।সবসময়ই সঙ্গে থাকত ছোট্ট কাঠের বাক্সটা।সেটা আসলে একটা মিনি হারমোনিয়াম – মিস্ত্রিকে দিয়ে বিশেষ ফরমায়েশ করে বানিয়েছেন যাতে হোমিওপ্যাথি বাক্সের মতো ঝুলিয়ে ওদিক সেদিক যাওয়া যায়। বোলপুরে অর্ঘ্যদার বাড়িতে আমার আড়াই বছরের ছেলে ঐ হারমোনিয়াম নিয়ে কম কসরৎ করেনি!আমরা কর্তা– গিন্নি ব্যস্ত হয়ে ‘হাহা’ করে উঠেছি।উনি বলেছেন,”ছেড়ে দে, ওর ফিংগারিংটা ভালো”।
আজ অর্ঘ্যদার তিরাশিতম জন্মদিন। সন্তোষপুরের ‘সপ্তডিঙা’ আবাসনে গিয়ে অসুস্থ গায়কের খোঁজ নেওয়া আর হয়ে ওঠে না একথা বলতেও লজ্জা করে। জর্জ বিশ্বাসের সুযোগ্য শিষ্য, সুচিত্রা মিত্রির স্নেহধন্য গায়ক অর্ঘ্য সেন কে যথাযোগ্য স্বীকৃতি আমরা কতটুকু দিয়েছি তা ভবিষ্যত বিচার করবে।তবে প্রকৃত শিল্পী সেসবের পরোয়া করেন না।তাই আমার মতো আনাড়ি গায়িকাকে অনায়াসে ডেকে নেন তাঁর সাথে গলা মেলানোর জন্য। দোলপূ্র্ণিমার সন্ধ্যেবেলাটা আজও চোখ বুজলে ভেসে ওঠে।বোলপুরে অর্ঘ্যদার বাড়িতে গাইছি , আমার দিকে অর্ঘ্যদার সস্নেহ দৃষ্টি — ” নিত্য তোমার যে ফুল ফোটে ফুল বনে , তারি মধু কেন মনমধুপে খাওয়াও না”। প্রণাম, তোমাকে আমার প্রণাম।