
ProMASS Kolkata Circle: Paramita Gharai: Aug 30, 2016: তখন ১৯৭৭ সাল, প্রবল বন্যায় পশ্চিমবঙ্গ ভাসছে। সেসময় বামফ্রন্ট সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য। তিনি আবার কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপো। সরকারের পক্ষে বন্যাত্রানে সাতদিনের অনু্ষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে রবীন্দ্রসদনে। বুদ্ধবাবু নিজে এসে তাঁকে অনুরোধ করেছেন অন্ততঃ দুদিন যেন তিনি গান করেন। সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেলেন তিনি। বললেন প্রয়োজনে রোজই তিনি গাইতে পারেন যদি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে টিকিট বিক্রি না হয়। এই হলেন দেবব্রত বিশ্বাস।
গত ২২ শে আগষ্ট ছিল এই প্রবাদপ্রতিম রবীন্দ্রসংগীত গায়কের ১০৫ তম জন্মদিন। ময়মনসিংহের ব্রাহ্ম পরিবারে তাঁর জন্ম ১৯১১ সালে। ব্রাহ্ম সমাজের পরিবেশই তাঁকে শুরু থেকেই রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। ১৯২৭ সালে কিশোরগঞ্জ হাইস্কুল থেকে দেবব্রত বিশ্বাস ম্যাট্রিক পাশ করেন। ভর্তি হন আনন্দমোহন কলেজে। ১৯২৭ সালের শেষের দিকে ব্রাহ্মসমাজের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর বাবা তাঁকে পাঠিয়ে দেন কলকাতায়, ভর্তি হলেন সিটি কলেজে। এ সময় থেকেই ২১১ নং কর্ণওয়ালিশ ষ্ট্রীটের ব্রাহ্মসমাজের মন্দিরে যাতায়াত শুরু করেন তিনি। সেখানেই ১৯২৮ সালে ৬ই ভাদ্র রবীন্দ্রনাথকে দেখার সৌভাগ্য হয় তাঁর। ১৯২৯ এ আই এ পাশ করেন। ১৯৩৩ অর্থনীতিতে এম এ পাশ করেন। ১৯৩৪ এ যোগ দেন হিন্দুস্থান ইনসিওরেন্স কোম্পানীতে।তাঁর জীবনী, তাঁর গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত নয়, বরং তাকানো যাক তাঁর জীবনের স্বল্প আলোচিত দু একটা ঘটনার দিকে।
শিল্পীর নিজের কথায়, “১৯৩৮ সন থেকে আমার মনটি বেশ বাঁয়ে হেলে চলতে শুরু করল। কিন্তু তখনকার দিনে ইংরেজ সরকার ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে বেআইনী করে রেখেছিল, তাই গোপনে কাজ করতে হত”। ১৯৪২সালে ১লা আগষ্ট এই বেআইনী তকমা উঠে যায়। আর ৪৬নং ধর্মতলা স্ট্রীটের বাড়ির একটি ঘর হয়ে ওঠে বামপন্থীদের মিলনকেন্দ্র। দেবব্রত বিশ্বাসের নিয়মিত যাতায়াত ছিল সেখানে। ১৯৪৩ সালে বামপন্থীদের একটি দল যোগ দেয় বোম্বাই-এ কমিউনিস্ট পার্টির অধিবেশনে। সেই দলে ছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস। ওখান থেকে ফিরে এসে মেতে ওঠেন গণনাট্য সংঘ নিয়ে। বাম মতাদর্শকে হৃদয়ে আঁকড়ে ধরে শহরে গ্রামে গেয়ে বেড়াতেন গণনাট্যএর আর রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবোধক গান। ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের পরে শিল্পীর ঘরে বসেই জোতিরিন্দ্র মৈত্র রূপ দিলেন ‘নবজীবনের গান’-এর।
জীবনের শেষ পর্যায়ে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়েছিল যে,জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে, তাদের ভাষা শিখতে হবে, তাদের কাজ করতে হবে, তাদের সঙ্গে থেকে কাজ করতে হবে, তাইলে জনগণের চেতনা উদ্বুদ্ধ করতে হবে”। অনেকেরই হয়তো এটা অজানা যে, রবীন্দ্র সংগীতের কিংবদন্তি গায়ক দেবব্রত বিশ্বাস ওরফে জর্জদা অবিভক্ত কমিউনিষ্ট পার্টির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।