১১তম ‘মন কি বাত’ এপিসোডে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি কোন বিশেষ বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ না করে জনধন থেকে জমি বিল – বিভিন্ন বিষয় ছুঁয়ে গেছেন। গুজরাটে প্যাটেল সম্প্রদায়ের আন্দোলন সম্পর্কে মোদির ভাবনার বিস্তৃত প্রকাশ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে হবে বলে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু পুরাণো কথাই আউড়েছেন তিনি। গুজরাটের পরিস্থিতি নিয়ে শ্রী মোদি বলেছেন, কিছুদিন আগে গুজরাতের হিংসাত্মক ঘটনাবলী গোটা দেশকে বিচলিত করে তুলেছিল। আর এটা তো স্বাভাবিক যে গান্ধী এবং সর্দার প্যাটেলের রাজ্যে যদি তেমন কিছু ঘটে যায়, তাহলে সারা দেশ দুঃখ পায় – ব্যথিত হয়। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গুজরাতের বিচক্ষণ নাগরিক – আমার ভাই-বোনেরা পরিস্থিতিকে সামলে নিয়েছেন। পরিস্থিতির বেসামাল হওয়া আটকাতে তাঁরা সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন এবং গুজরাত আবার শান্তির পথ নিয়েছে। শান্তি, একতা ও ভ্রাতৃত্বের এই রাস্তাই ঠিক রাস্তা এবং উন্নতির জন্য আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। সমৃদ্ধিতেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান।
জনধন প্রকল্প তথা আর্থিক সংযুক্তিকরণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গত একবছরে সাফল্যের ফিরিস্তি শুনিয়েছেন। অবশ্য মোদি-সরকারের পাবলিসিটির জেরে গত ২৮ আগস্ট জনধন প্রকল্পের বর্ষপূর্তিতেই এই প্রকল্প নিয়ে যাবতীয় তথ্য বিভিন্ন সংবাদ-মাধ্যম ও সোশাল সাইটের মাধ্যমে জনগণের জানা হয়ে গেছে। তবুও প্রধানমন্ত্রী সুযোগ হাতছাড়া না করে জনধন প্রকল্পের জন্য অনেকটা সময় জুড়ে কথা বলেছেন। জনধন যোজনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত আমার কাছে যা তথ্য আছে সেই অনুসারে প্রায় পৌনে আঠারো কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে – সতেরো কোটি চুয়াত্তর লাখ! আমি দরিদ্র জনগণের ক্ষমতাও দেখলাম। যেখানে ‘জিরো ব্যালান্স’-এ খাতা খোলার কথা ছিল, সেখানে তাঁরা সঞ্চয়ের মাধ্যমে মোট বাইশ হাজার কোটি টাকা জমা করেছেন। অর্থব্যবস্থার মূল ধারা যে ব্যাঙ্কিং – তাকে দরিদ্র মানুষের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশে ‘ব্যাঙ্ক মিত্র যোজনার’ ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আজ এক লক্ষ পঁচিশ হাজারেরও বেশি ব্যাঙ্ক মিত্র সারা দেশে কাজ করছে। এর ফলে দেশের তরুণরাও কাজ পেয়েছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যে সব দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর ভাই ও বোনেরা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, তাঁদের অনুরোধ করছি, আপনারা ব্যাঙ্কের সঙ্গে এই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হতে দেবেন না। এই ব্যাঙ্ক আপনাদেরই, আপনারা আর একে ছাড়বেন না। আমি একে আপনাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি, এবার একে ধরে রাখার দায়িত্ব আপনাদের।

এছাড়া, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে কৃষকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, জমি বিল নিয়ে যেন কৃষকরা আতঙ্কিত না হয়। তাঁর কথায়, আমরা একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলাম, যার মেয়াদ আগামীকাল, ৩১শে অগাস্ট শেষ হচ্ছে। আমি ঠিক করেছি, এই মেয়াদ শেষ হতে দেওয়া হোক। অর্থাৎ, আমার সরকার তৈরি হওয়ার আগে যে অবস্থান ছিল, সেটাই আবার ফিরে এলো। কিন্তু তাতে একটা কাজ অসম্পূর্ণ ছিল। ১৩টি এমন বিষয় ছিল, যার কাজ এক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং সেইজন্য আমরা অধ্যাদেশেও সেগুলি এনেছিলাম, কিন্তু এই বিবাদের জেরে সে বিষয়টিও অসম্পূর্ণ থেকে গেল। অধ্যাদেশ তো শেষ হতে চলেছে। কিন্তু যাতে কৃষকদের সরাসরি লাভ হতে পারে, তাঁদের সরাসরি আর্থিক লাভ যার সঙ্গে যুক্ত, সেই তেরটা বিষয়কে আমরা নিয়মকানুনের আওতায় এনে আজই চালু করে দিচ্ছি। এতে কৃষকদের লোকসান হবে না, আর্থিক ক্ষতি হবে না, আর এইজন্য যে তেরটা বিষয়কে নিয়মের আওতায় এনে চালু করার কথা ছিল, তা আজই আমরা সম্পন্ন করছি আর আমি আমার কৃষক ভাই ও বোনেদের এই কথা বলতে চাই যে, আমাদের ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’ নিছক এক শ্লোগান নয়, এ আমাদের কাজের মন্ত্র। গ্রামে গরীব ও কৃষকদের কল্যাণ আমাদের পথ চলার মন্ত্র। তাই আমি ১৫ই অগাস্ট বলেছিলাম যে, শুধু কৃষি বিভাগ নয়, কৃষি ও কৃষক-কল্যাণ বিভাগও তৈরি করা হবে। এই সিদ্ধান্ত আমরা দ্রুত কাজে পরিনত করার চেষ্টা করছি। আমার কৃষক ভাই ও বোনেরা, এখন আর বিভ্রান্তির কোনও কারণ নেই, সংশয়ের কোন কারণ নেই। কেউ যদি আপনাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে তাহলে ভয় পাবেন না।
সম্প্রতি সুফি ধারার বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুফি পণ্ডিতদের শব্দচয়ন, তাঁদের কথা বলার ধরন, অর্থাৎ সুফি ধারায় যে শান্ত উদারতার ঐতিহ্য রয়েছে – তা যেন এক সঙ্গীতের লয়ের মতো আমার উপলব্ধিতে পৌঁছেছে। আমার খুবই ভালো লেগেছে। সম্ভবত ইসলামের এই সত্য স্বরূপটিকে তামাম দুনিয়ার কাছে ঠিকমতো পৌঁছে দেওয়াই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আমি অন্যদেরও বলি, আমরা ভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও সুফি ভাবধারাটি আমাদের বোঝা দরকার।