– ঠাকুর্দা, ও ঠাকুর্দা !
– বলো অমল ।
– তুমি আর গল্প বলো না কেন?
-আর লিখতে পারি না তো।
– তাই কখনো হয় নাকি?
– হয় হয়, বুড়ো হয়ে গেছি তো… মাথা আর ভাবনাচিন্তা করতে পারেনা। তাই লিখতে পারি না।
– উঁহু । তা না। তুমি আমাকে ভোলাচ্ছো। তুমি লিখতে পারো না তা ঠিক নয়। তুমি আসলে লিখছো না।
– তুমি কি করে বঝুলে অমল! আমি তো কাউকে কিচ্ছুটি বলিনি।
– আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি। দেখি সবকিছু কেমন পাল্টে যাচ্ছে।
-পাল্টে যাচ্ছে !
– হ্যাঁ ঠাকুর্দা সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। ঠিক আগের মতো নেই।
– আগের মতো নেই!
– গাছের পাতা আগের মতো সবুজ নেই, বেলি ফুলে আগের মতো সুন্দর গন্ধ নেই।
– না না অমল, সুধা বোধ হয় তোমাকে এখন অন্য কোন বাগান থেকে ফুল এনে দিচ্ছে।
-না না ঠাকুর্দা। সুধাও বলে।
-কি বলে সুধা?
– বলে সব ফুলের রঙ কেমন যেন মলিন হয়ে গেছে। পাতাগুলোও মলিন। প্রজাপতির রঙ হারিয়ে শুধুমাত্র সাদা। পাখিরা গান গাইতে ভুলে গেছে।
– অমল সুধা আর কি বলে?
– বলে সুন্দর পৃথিবীটা পাল্টে যাচ্ছে ঠার্কুদা।
-অমল!
– ঠাকুর্দা , আমারও মনে হয়। ভারী বাতাস, বুক ভরে নিতে কষ্ট হয়। তৃষ্ণার জল বিস্বাদ। এমনকি সূর্যের লাল রঙটাও অনেক কম মনে হয়।
– ঠিক , ঠিক বলেছো অমল। আর এজন্যই আমি লিখি না।
– কিন্তু কেন ঠাকুর্দা?
– এটা আমার প্রতিবাদ অমল।
-প্রতিবাদ!
– মানষুকে বলেছিলাম মানষুকে ভালোবাসতে, বলেছিলাম প্রকৃতিকে ভালোবাসতে। শুনল কি? আমাকে কবির সম্মান দিয়ে আমার গান কবিতাকে বহন করল কেবলমাত্র। কিন্তু হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করল কি?
– তাই তুমি লেখা বন্ধ করেছো ঠাকুর্দা?
– আমার লেখা তো সমাজের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য। আমার লেখা তো অলঙ্কার না। প্রাত্যহিক জীবনে উপলব্ধির জন্য।
– রাগ কোরো না ঠাকুর্দা। তুমি লেখো। আরো লেখো। আমাদের জন্য লেখো। আমার মতো হাজার হাজার অমল তোমার লেখার মধ্যেই বাঁচতে শেখে। যাপিত জীবনকে উপলব্ধি করতে শেখে।
– তুমি, মানে তোমরা আমার লেখা এখনও পড়ো!
– পড়ি তো ঠাকুর্দা। তাই তো পৃথিবীতে এখনও পান্নার রঙ সবুজ , গোলাপ এখনও সুন্দর।
– অমল!
– যতদিন বাঙালী আর বাংলা ভাষা বেঁচে আছে, ততদিন তোমার লেখা চালিয়ে যেতে হবে ঠাকুর্দা, আমরা অমলরা স্বপ্ন দেখব আর হাঁটব সেই পথ ধরে যে পথে সূর্যের রঙ হবে টকটকে লাল।
#Paramita Gharai may be contacted at [email protected]