আমাদের সকলেরই আশু কর্তব্য হল, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য শান্তি, মর্যাদা এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এক জীবন সুনিশ্চিত করা। সংঘাতমুক্ত এক বিশ্ব গড়ে তোলার কাজ শুরু করা উচিত আমাদেরই। এই লক্ষ্যে বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের অবদান অনস্বীকার্য। আজ নয়া দিল্লিতে আয়োজিত তিন দিন ব্যাপী সংঘাত পরিহার এবং পরিবেশ সচেতনতার ওপর বিশ্ব হিন্দু-বৌদ্ধ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি একথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমস্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব। আগে মানুষ বিশ্বাস করতো যে, যার জোর বেশি, সেই বেশি ক্ষমতাশালী। কিন্তু আজকের দিনে চিন্তাভাবনা এবং ফলপ্রসূ আলাপ-আলোচনাই হল ক্ষমতার মূল উৎস। যুদ্ধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও ক্ষয়ক্ষতি আমরা লক্ষ্য করেছি। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে দুটি বিশ্ব যুদ্ধের ভয়ঙ্করতা মানুষ লক্ষ্য করেছে। সংঘাত পরিহারের জন্য আমরা যে সমস্ত প্রস্তাব গ্রহণ করে থাকি তার সীমাবদ্ধতা দিনদিনই প্রকট হয়ে পড়ছে। হিংসা ও রক্তপাত বন্ধে আমাদের প্রয়োজন সমবেতভাবে এক কৌশলগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। তাই, বিশ্ব যে আজ বৌদ্ধবাদের প্রতি বেশি করে আগ্রহী হয়ে উঠছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই, বরং এশিয়ার ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধেরই তা এক ধরণের স্বীকৃতি এবং এই পথ ধরেই সংঘাত পরিহার তথা আদর্শবাদ থেকে দার্শনিকতায় উত্তরণ সম্ভব।
পরিবেশ সচেতনতার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সমগ্র বিশ্বের কাছেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য প্রয়োজন মানুষের সমষ্টিগত উদ্যোগ এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ। ভারতে মানুষের বিশ্বাস ও প্রকৃতির মধ্যে সেই প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছে এক গভীর সম্পর্ক। পরিবেশ ও বৌদ্ধবাদ নিবিড়ভাবেই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত।
বৌদ্ধ ঐতিহ্যের যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়, তা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মবোধেরই নামান্তর মাত্র। কারণ, বৌদ্ধ ধর্মমত অনুসারে, কোনও কিছুরই অস্তিত্ব পৃথক নয়। পরিবেশের মধ্যে অপবিত্রতা থাকলে তা মানুষের মনকেও কলুষিত করে। একইভাবে মানুষের অশুদ্ধ মন পরিবেশ দূষণের কারণ ঘটায়। তাই, পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজন আত্মশুদ্ধি।
পরিবেশগত সমস্যা প্রকৃতপক্ষে মানুষের মনের ভারসাম্যহীনতারই এক ধরণের প্রতিফলন। ভগবান বুদ্ধ এই কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। জল সংরক্ষণের উপায় তিনি নির্দেশ করেছিলেন এবং জলসম্পদ দূষিত না করার উপদেশ দিয়েছিলেন ধর্মগুরুদের। প্রকৃতি, অরণ্য, গাছপালা এবং সব কিছুই ভালো রাখা ও ভালো থাকার এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে ভগবান বুদ্ধের শিক্ষাদর্শে।
বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী ব্যাখ্যা সম্মেলনে আগত বিভিন্ন দেশের প্রাজ্ঞ প্রতিনিধিদের প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারতে বৌদ্ধ ঐতিহ্যের বিকাশ ও উন্নয়নে আমার সরকার সম্ভাব্য সকল রকম প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এশিয়ায় বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে তুলে ধরার কাজে ভারত রয়েছে নেতৃত্বের ভূমিকায়। তিনদিনের এই সম্মেলন এই প্রচেষ্টারই একটি অঙ্গ। আমি আশা করি যে, আগামী তিনটি দিন মূল্যবান ও প্রাণবন্ত আলোচনায় মুখর হয়ে উঠবে, যাতে আমরা একত্রে বসে শান্তি, সংঘাত পরিহার এবং দূষণমুক্ত সবুজ পৃথিবীর অন্বেষণে সচেষ্ট থাকবো।