কোন পথে যে চলি, তা-ই ভেবে ভেবে আকূল। আয়ের পরিমাণ বছরে ১.৫ লাখ টাকার লক্ষ্মণ রেখা পেরিয়ে গেছে। কর দিতে হবে। প্রযুক্তির দৌড় এতটাই, কর ফাঁকি দেওয়া খুব রিস্কি। অবশ্য ফাঁকি না দিয়েও কর সেভ করার উপায় আছে। জাতীয় সঞ্চয় সার্টিফিকেট (এন এস সি), প্রবীণ নাগরিক সঞ্চয় প্রকল্প. জীবনবিমার প্রিমিয়াম, পোষ্ট অফিসে ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয় ইত্যাদির মাধ্যমে অনেকেই কর সেভ করেন। এগুলি নিশ্চিত ও ফিক্সড রিটার্ণ দেয়। মুদ্রাষ্ফীতির কথা মাথায় রাখলে অবশ্য এইসব সঞ্চয়গুলির রিটার্ণ মোটেই আকর্ষণীয় নয়। বিভিন্ন জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাও আজকাল লোভনীয় অফার নিয়ে হাজির। এগুলিতে টাকা রাখলে, কর ছাড় পাওয়া যায়, আবার ভবিষ্যতও কিছুটা নিশ্চিত থাকে। ফিক্সড রিটার্ণ ও বিমা ছাড়া ইদানিং লোকমুখে খুব আলোচিত হচ্ছে, একটু ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগের রাস্তায় হাঁটা।
ফিক্সড রিটার্ণের হার প্রায় প্রতি বছরই নিয়ম করে কমছে। বিমা – তা সে জীবন বিমা বা স্বাস্থ্য বিমা-ই হোক – কত আর করা যায়? তার চাইতে বিনিয়োগ করলে যদি রিটার্ণ বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, মন্দ কী? মুদ্রাস্ফীতিকে ধরলে, ফিক্সড রিটার্ণ লাভজনক না বলেই বেশির ভাগ করদাতা মনে করেন। এই লাভজনক না হওয়ার জন্যই ইদানিং করদাতাদের অনেকে, ঝুঁকি থাকলেও, বিনিয়োগ করার পথে পা বাড়িয়েছেন। বিনিয়োগের জন্য আজকাল করদাতাদের পছন্দ – ইউনিট-লিঙ্কড বিমা পরিকল্পনা বা ইউলিপ এবং ইক্যুইটি লিঙ্কড সঞ্চয় প্রকল্প বা ই এল এস এস।
সঞ্চয়ের উপর সুদের হার যেমন কমছে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদি সময়রেখায় শেয়ার বাজারের সূচক বাড়ছে। সেনসেক্স কিছুকাল আগেও ১০ হাজারের নিচে ছিল, আজ তা বেড়ে ৩০ হাজার ছুঁই ছুঁই। এই দুটি বিষয় গুরুত্ব দিলে, ই এল এস এস-গুলিতে করযোগ্য আয়ের একটা অংশ বিনিয়োগ করা যেতে পারে। কম ঝুঁকিপূর্ণ থেকে বেশি ঝুঁকির ই এল এস এস এখন পাওয়া যায়। ই এল এস এস-গুলি আদতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং এতে জমা টাকার উপর ৮০সি অনুযায়ী কর ছাড়যোগ্য। সাধারণত: ৬৫% বা তার বেশি পরিমাণ অর্থ এই ফান্ডগুলি শেয়ারে বিনিয়োগ করে। যত বেশি পরিমাণ অর্থ ফান্ডগুলি শেয়ারে লগ্নী করে, ঝুঁকি তত বেশি কিন্তু রিটার্ণও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। ই এল এস এস তিন বছরের লক-ইন অর্থাৎ প্রথম তিনবছর ঐ ফান্ড ভাঙ্গা যাবে না। তুলনা করলে, যেসব প্রকল্পে ফিক্সড রিটার্ণ পাওয়া যায়, সেগুলির বেশির ভাগক্ষেত্রেই ন্যূনতম লক-ইন সময় ৫ বছর। তাছাড়া, ই এল এস এস থেকে লক-ইন সময়ের পর টাকা তুললে, তা করমুক্ত। বাজারে যেসব ই এল এস এস আছে, সেগুলির একটি হলো কানাড়া রোবেকো ইক্যুইটি ট্যাক্স সেভার।
তবে এও সত্যি কর বাঁচিয়ে প্রথমে বিমা প্রকল্প করে, পরিবারের ভবিষ্যত ও স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করে তবেই বিনিয়োগ করা শুরু করা উচিত।