ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বাজার আলো করে শীতের রঙবেরঙের সব্জি। টুকটুকে লাল টমেটো,কমলা গাজর,সবুজ সিম–বিন–মটরশুঁটি–ক্যাপসিকাম,কালচে লাল বিট ,ফুলকপি ,বাঁধাকপি,পালংশাক শীতের বাজার মাতিয়ে রাখে।পাশাপাশি সবেদা ,আপেল আর কমলালেবুর আকর্ষণ। জম্পুই এর কমলার সম্ভার অবশ্য শেষ হয়ে যায় শীতের শুরুতেই। তাতে কি? দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে কমলা চলে আসে আমাদের রাজ্যে।
Courtesy: Flickr.com
তবে শীতকালে মিষ্টি স্বাদে আমাদেরকে মজিয়ে রাখে খেজুর রস, পাটালি গুড় । শহর ছেড়ে যদি গ্রামের পথে যাওয়া যায় দেখা যাবে খেজুর গাছগুলোর গলায় মাটির হাড়ি বাঁধা। আসলে গাছগুলোর বক্ষবিদীর্ণ করে হাড়িগুলোকে ঝুলিয়ে রাখা হয় সারা রাত। শীতের রাতে অশ্রুর মতো টপটপ করে বুকফাটা রসে ভরে ওঠে মাটির হাড়ি। রাত ভোর হবার আগেই নামিয়ে আনা হয় এই রস। আহা ! কি তার স্বাদ ! একেই কি বলে অমৃত? হাড়ি থেকে নামিয়ে মুখে ঢালামাত্র হিমশীতল সুধারস জিভকে তৃপ্ত করে গলায় যখন গড়িয়ে পড়ে কি তার অনুভূতি!প্রাকৃতিক ‘কোল্ডড্রিংক’। ততক্ষণে অস্থায়ী উনুন থেকে গলগল করে ধোঁয়া বের হচ্ছে। বড় পাত্রে সংগৃহীত হাড়িগুলো থেকে ঢেলে নেওয়া হয় রস। ক্রমাগত জ্বাল দিতে দিতে তৈরী হয় খেজুর গুড়। তরল অবস্থায় যা নলেন গুড়,জমাট অবস্থায় তা পাটালি। তারপর আর কিছু নয়, শুধু খাওয়া….দুধে–ভাতে,রুটি দিয়ে ,মুড়ির সাথে অথবা শুধু এক টুকরো মুখে ফেলে–যেন মুখশুদ্ধি! অঘ্রাণের ধান গোলায় উঠে গেছে। হয়ে গেছে নবান্ন। সূর্য থেকে চলকে পড়া আলতো রোদে তখন পায়েস–পিঠের সুগন্ধ। সেখানে নলেন–পাটালির সদর্প উপস্থিতি। মিষ্টির দোকানে রসগোল্লা,সন্দেশ সবেতেই চলতে থাকে ছানা–গুড়ের যুগলবন্দী।
পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা কেবল মাত্র শীতেই জিভের নাগালে পায় ‘জয়নগরের মোয়া’।দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার জয়নগর ও তার সংলগ্ন অঞ্চল জুড়ে তৈরী হয় এই বিশেষ মোয়া। এখানেও সেই নলেন গুড়। কনকচূড় খইকে নলেনগুড়ে জারিত করে কোন বিশেষ উপায়ে এই মিষ্টির আবির্ভাব কবে থেকে তা জানা নেই বটে,তবে সারা শীতকালে ‘জয়নগরের মোয়া’কে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে এমন মিষ্টি ভূ–ভারতে নেই।
অঘ্রাণের শিশির ভেজা ভোর এখন ক্রমাগত কুয়াশাঘন হবে।পৌষের রাত যত হাড়কাঁপানো হবে হাড়ি ততই উৎকৃষ্ট খেজুর রসে ভরে উঠবে। রসনাকে রসেবশে রাখার জন্য তাই এখন শীতের অপেক্ষায়।