||সুকুমার গৌর||
Mar 06, 2017:
২০২০ সালে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা হতে পারে দিল্লি, মুম্বাই, জয়পুর, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোরের অনেকের, যাঁরা প্লেনের গতিতে প্রায় উড়তে পারে এমন এক সড়ক-রেল গাড়ির যাত্রী হতে পারেন| এরকমই পরিকল্পনার কথা জানাল নয়াদিল্লিতে ‘হাইপারলুপ ইন্ডিয়া ভিশন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, এবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী, জাতীয় বিজ্ঞান দিবসে| দেশি-বিদেশী একদল প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ পরিবহন মাধ্যমকে বৈপ্লবিক স্তরে নিয়ে যাবার পরিকল্পনার রেখাচিত্র উপস্থাপন করেছেন ওই সম্মেলনে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রী সুরেশ প্রভু, নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত|
তাঁদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্বপ্নের ওই যানে, দিল্লি থেকে জয়পুর-ইন্দোর হয়ে মুম্বাই পৌঁছতে ৫৫ মিনিট সময় লাগবে, মাঝখানে দুরত্ব পেরোনো হবে ১৩১৭ কিমি| চেন্নাই থেকে ব্যাঙ্গালোর ৩৩৪ কিমি ২০ মিনিটে; ব্যাঙ্গালোর থেকে তিরুবনন্তপুরমের ৭৩৬ কিমি ৪১ মিনিটে| দাবি করা হচ্ছে, প্রতি ৪০ সেকেন্ড অন্তর যে গাড়ি বিরতি নেবে যাত্রী ও পণ্য উঠা-নামার জন্য, তাতে ১.৫ লক্ষ যাত্রী বয়ে নেওয়া যাবে| তেমনি, প্রতি ৫০০ কিমি ভ্রমনে যাত্রী ভাড়া নাকি হবে মাত্র ২০০ টাকা |
ওই প্রকৌশলীদের মধ্যে রয়েছেন অসাধারণ প্রত্যয়ী বিটস পিলানির ২৫-৩০ জনের একদল সদ্য প্রাক্তনী ছাত্র, যাঁরা ইতিমধ্যেই হাইপারলুপ ইন্ডিয়া নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলে ২৮ ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মঞ্চে উপস্থাপন করেছে নতুন সড়ক-হাওয়াই-যানের প্রযুক্তি কৌশল, ও পরিকল্পনা| এই ইঞ্জিনিয়ার ছাত্ররা তাঁদের প্রজেক্টে দেখিয়েছেন, চেন্নাই-ব্যাঙ্গালোর-মুম্বাই এর ১১০২ কিমি পথ অতিক্রম করতে তাদের ‘হাইপারলুপ পড’ যান সময় নেবে ৫০ মিনিট|
স্পেস-এক্স এর প্রাণপুরুষ ও খ্যতনামা আর্কিটেক্ট এলান মাস্ক এর ২০১৩-তে উদ্ভাবিত এই পড গড়ে ১০ মিনিটে ১৫০-১৬০ কিমি দুরত্ব ভ্রমন করতে সক্ষম| এই স্বপ্নের যানের প্রকৌশল নিয়ে মূল প্রজেক্টটি সামনে এনেছে ২০১৪-তে, আন্তর্জাতিক সংস্থা হাইপারলুপ ট্রান্সপোর্টেশন টেকনোলজি (এইচটিটি)| এই পদ্ধতিতে সিম-আকৃতির-কামরার (পড) মাধ্যমে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করা হবে, আর এই সিম-আকৃতির কামরাকে চালানো হবে দীর্ঘ টিউবের মধ্য দিয়ে| এই টিউবের ভেতরটিতে বায়ু পরিবেশ থাকবে নিয়ন্ত্রিত| ঘর্ষণ বাধা দূর করতে চাকা ব্যবহার হবে না, তেমনি থাকবে, টিউবের ভেতরে বাতাস চলাচলে সৃষ্ট বাধা একদম শুন্য রাখার ব্যবস্থা| সাথে চৌম্বকীয় শক্তির ব্যবহার ও বায়ু শুন্যতার দরুন পডগুলি শুন্যে ভাসমান অবস্থা পাবে, যে ভাসমান যানকে ত্বরান্বিত গতি দিতে লিনিয়ার ইলেকট্রিক মোটর ব্যবহার করা হবে| এতে এরো-ডায়নামিক টান অত্যন্ত কম হবার ফলে পারস্পরিক স্পর্শজনিত বল না থাকায় ভাসমান অবস্থার দরুন এই যান মসৃন ও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ভেসে ভেসে যাবে| বিদ্যুতের ব্যবস্থার জন্য টিউবের ছাদে রাখা হবে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল| তবে, এই দীর্ঘ একরৈখিক টিউবকে ছুটতে হবে সরল পথে, বাঁক নেওয়া প্রায় যাবেইনা|

২০১৬তে হাইপারলুপ ট্রান্সপোর্টেশন টেকনোলজি ইনক ‘হাইপারলুপ ওয়ান গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ’ নামে সারা বিশ্বব্যাপী পার্টনার চেয়ে যে প্রতিযোগিতা আহ্বান করে, এতে ৯০ টি দেশ থেকে ২৬০০ সংস্থা অংশ নেয়| প্রাথমিক বাছাই পর্বের পর ১ম সেমি ফাইনালে ওঠে ৩৫ টি সংস্থা | তাদের নিয়ে ফাইনাল হচ্ছে তিন দেশে, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড-এ | এই তিন পর্ব শেষে চূড়ান্ত পাঁচ থেকে ১০ টি সংস্থাকে মনোনীত করা হবে, যাঁরা কার্যত এইচ টি টি-র প্রযুক্তি সাহায্য নিয়ে দেশে দেশে গড়ে তুলবে প্লেন-ট্রেনের সংকর জাতীয় ভাবীকালের যান পরিবহন ব্যবস্থা| তবে, এ গাড়ি চালানো যাবে না ভু-কম্প প্রবন এলাকা দিয়ে|