।।তিলক রবিদাস।।
Mar 17,2017: নাম তার জয়ন্ত দেবনাথ। নিতান্তই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অভাব অনটনে, দিন আনি দিন খাই-এই অবস্থার মধ্যেও কাজের প্রতি ছিল অবিচল। আগরতলা শহরের দক্ষিনে হাঁপানিয়ার দূর্গা পাড়া। এই পাড়ায় ১৫০টি পরিবারের বসবাস। এই পাড়ারই যুবক জয়ন্ত। পিতা ভবনন্দ দেবনাথ। জীবিত অবস্থায় তিনিও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সংসার প্রতিপালন করে গেছেন। প্রচন্ড অভাব-অনটনের মধ্যেও সে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে মা সহ ভাই বোন মিলিয়ে চার জনের সংসারে দি’মুঠো ডাল-ভাতের সংস্থান করার জন্য যোগালী সহ অন্যান্য কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরত।
কোন কোন সময় সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি গ্যাস সিলিন্ডার বয়ে নিয়ে রোজগারের চেষ্টা করতো। সারাদিন খাটুনির মধ্যেও সংবাদপত্রের মাধ্যমে কাজের সুযোগ সুবিধার খোঁজ করত। একদিন সংবাদপত্রের মাধ্যমেই জানতে পারল ও বি সি কর্পোরেশন থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋন দেওয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী জয়ন্ত কর্পোরেশনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। তারপর সরকারী নিয়ম অনুযায়ী অটো রিক্সার জন্য সে আবেদন করে। সময়টা ছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস। অটো রিক্সা ক্রয়ের জন্য কর্পোরেশন থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মঞ্জুরী দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২১,৭০০টাকা মার্জিন মানি টি ভি এস শো রুমে জমা দিয়ে অটো রিক্সা ক্রয় করে সে । আস্তে আস্তে দারিদ্র ঘুচিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলা শুরু হয় তার। সরকার পাশে থাকলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লড়াইটা অনেক সহজ হয়। যা জয়ন্তের ক্ষেত্রে ঘটেছে। এর মাধ্যমে চলতে থাকে তার জীবন সংগ্রামের নতুন লড়াই।
আজ জয়ন্তকে রাজ যোগালী বা অন্য কোন দোকান মালিকের ধমক খেয়ে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে হয় না। কথায় আছে- ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সেই ইচ্ছের জোর, মনের একাগ্রতায়, আয়ের পথ খুঁজে পেল বেকার জয়ন্ত। জয়ন্ত এখন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত। যাত্রী নিয়ে জয়ন্তের অটো ছুটছে সেকেরকোট থেকে ফুলতলী ভায়া মধুবন সড়কে। অতি সম্প্রতি হাঁপানিয়া চৌমুহনীতে জয়ন্তের সাথে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের। তার অমায়িক ব্যবহারে সকলেই খুশি। একটু কাছে গিয়ে জিজ্ঞস করলাম কেমন চলছে আয়-রোজগার? সহাস্যে জয়ন্তের জবাব-এখন খুব ভাল আছি। প্রতিদিন ৫০০-৭০০ টাকা রোজগার হচ্ছে। তারমধ্যে ব্যাংকের কিস্তি সহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে ৩০০-৪০০ টাকা হাতে থাকে।
আত্মবিশ্বাসই মানুষের মূল শক্তি। সেই আত্মবিশ্বাস মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তেমনি সাহসী ও করে তোলে। তার উদাহরন জয়ন্ত দেবনাথ। ব্যক্তি জয়ন্তের সামনের দিকে এগিয়ে যাবার সফলতা এলাকার সহদেব মালাকার, রাজু ভৌমিক,আপন দত্তের মতো বেকার যুবকদের প্রেরনা যোগায়। এ প্রসঙ্গে জয়ন্তের অভিমত –বেকার যুবক-যুবতীদের একটি চাকরীর জন্য হন্যে হয়ে না ঘুরে স্বাধীন ভাবে কিছু একটা করার মানসিকতা থাকলে, সফলতা আসবেই। আজ নিজের আত্মবিশ্বাসে ভর করে সব হতাশাকে দূরে সরিয়ে একাগ্রতা আর নিষ্ঠাকে পুঁজি করে জয়ন্ত পরিবারে নিয়ে এসেছে স্বচ্ছলতা।