সফল মৎস্য চাষী চরনজয় রিয়াং
।।শিবেন্দ্র দেববর্মা।।
Apr 06, 2017: একদিন স্বপ্ন ছিল, মাছ চাষ করব। সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে প্রচুর টাকা রোজগার করব। তা দিয়ে পরিবারের অভাব অনটন লাঘব করব।সবার মুখে হাসি ফোটাব। সন্তানদের ভালভাবে পড়াশোনা করাতে পারব। এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন দশদা ব্লকের পূর্ব সাতনালা ভিলেজের বাসিন্দা চরনজয় রিয়াং। আজ অবশ্য চরনজয়ের সেই স্বপ্ন পূরন হয়েছে। দশদা ব্লকের সাতনালা এ ডি সি ভিলেজের ফাল্গুনি পাড়ায় চরনজয় রিয়াংদের বাড়ি। মহকুমা সদর কাঞ্চনপুর শহর থেকে এ ভিলেজের দূরত্ব ১০ কিঃ মিঃ।ভিলেজে পরিবার রয়েছে ৩৮৬টি। চরনজয়রা ভাই-বোন মিলিয়ে সাত জন। এরমধ্যে চরনজয় তৃতীয়। বাস্তুভিটেটুকুই ছিল সম্বল। উপার্জন বলতে দিন মজুরী। ছোটবেলা থেকেই চরনজয়ের প্রবল ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। বাধ সাধে অভাব অনটন। অন্যের বাড়িঘরে,জমিতে দিন হাজিরার কাজ শুরু করেন। পরিবারের সদস্যদের দু’মুঠো খাওয়ার ব্যবস্থা করার মধ্যেও তিনি একটু একটু করে সঞ্চয় করতে থাকেন। কারন ছোটবেলা থেকেই বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবার অদম্য জেদ ছিল তার।সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি করে জমানো টাকা দিয়ে তিন কানি লুঙ্গা জমি ২০১৫ সালে লিজ হিসেবে নিয়েছেন। এই জমিকে মাছ চাষের উপযোগী করে তোলার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ভিলেজ কমিটির চেয়ারম্যান পটারুং রিয়াং এবং ভাইস চেয়ারম্যান নবীন চন্দ্র রিয়াং-এর সাথে চরনজয়বাবু কথা বলেন। তারপর ভিলেজ কমিটি থেকে ঐ লুঙ্গা জমিকে মাছ চাষের উপযোগী করে দেওয়া হয়। এই জলাশয়ে কি ধরনের মাছ চাষ করলে ভাল হবে সে ব্যাপারে তিনি দশদা মৎস্য কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। দপ্তর থেকে ঐ জলাশয় পর্যবেক্ষন করে প্রথমিক ভাবে মাছের রেনু চাষে সহায়তা করা হয়। দপ্তরের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে রেনু উৎপাদন শুরু করেন। এতে ভাল আয়ও হয়েছে। এই ব্যবসাকে আরও বিস্তৃত করার জন্য তিনি দশদা ত্রিপুরা গ্রামীন ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋন নেন। তারপর মৎস্য দপ্তরের সহায়তায় মাছের পোনা চাষের পদ্ধতিগত পরামর্শ নিয়ে চাষ শুরু করেন। গত বছরের এপ্রিল মাসে উৎপাদিত মাছ ধর্মনগর, পানিসাগর, পেঁচারথল ইত্যাদি বাজারে বিক্রি শুরু করেন। মাছ বিক্রি করে আজ চরনজয়বাবুর বাৎসরিক আয় ১২ লক্ষ টাকার মতো। পরবর্তী সময়ে তিনি ব্যাঙ্কের ঋনও পরিশোধ করেছেন। পাশাপাশি তিনি হেচারি করার জন্য মৎস্য দপ্তর থেকে জেলা শাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
এছাড়াও চরনজয়বাবু ২০১৫ সালে নিজ গ্রমের উৎসাহী নবজয়, দহিরুং,নবীনজয় রিয়াং সহ দশ জনকে নিয়ে একটি স্ব-সহায়ক দল গঠন করে আরও লুঙ্গা জমি লিজ নিয়ে জলাশয় তৈরী করেন। সেখানেও মৎস্য দপ্তরের সহায়তায় বিজ্ঞান ভিত্তিক মাছ চাষ করে দলের সদস্যরা আজ স্বনির্ভর। তবে কাজের প্রতি সততা, নিষ্ঠা ও ওকাগ্রতা থাকলে এবং সেই সাথে সরকারী সহায়তা ও উৎসাহ যুক্ত হলে একজন দরিদ্র ব্যক্তিও নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফাল্গুনি গ্রামের ৫৫ বছরের চরনজয় রিয়াং। এভাবে দরিদ্রতা ঘুচিয়ে তিনি আজ স্বাবলম্বী। দশদা এলাকায় সফল মাছ চাষী হিসেবে পরিচিত। আজ তাঁর সাফল্যে এই গ্রমের অন্য দরিদ্র পরিবার গুলিও অনুপ্রানিত। চরনজয়বাবু আলাপচারিতায় জানালেন, অভাব অনটনে নিজে পড়াশোনা করতে না পারলেও সন্তানদের ভালভাবে শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন। ছোট ছেলে কৃষি দপ্তরে কৃষি সহায়ক পদে চাকুরী করছে। বড় ছেলে মাছ ব্যবসায় সাহায্য করছে। দুই মেয়েও পড়াশোনা করছে। বর্তমানে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে চরনজয়বাবুর সচ্ছ সংসার।