।।মানস রঞ্জন দাস।।
Apr26,2017: শ্রীরামপুর। ছবির মতো গ্রাম। নীল আকাশের নীচে সবুজের সমারোহ গড়ে উঠা মিশ্র জনবসতির এই জনপদটি কৈলাশহর মহকুমার চন্ডীপুর ব্লকের একটি পঞ্চায়েত। রাতে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক, ভোরে বাহারী রঙের পাখিদের কলকাকলিতে ঘুম ভাঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এই শ্রীরামপুরের গ্রামবাসীদের। পঞ্চায়েতের ৬টি পাড়ায় তপশিলী জাতি, তপশিলী উপজাতি, ধর্মীয় সংখ্যালঘু , সাধারন সম্প্রদায়ভুক্ত ৩১৭৮ জন মানুষ পারস্পরিক সহযোগিতায় বসবাস করছেন। পূর্বে মনু নদীর লাগোয়া কৈলাশহর পুরপরিষদ, পশ্চিমে চন্ডীপুর পঞ্চায়েত, উত্তরে মনু নদী ও পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং দক্ষিনে হালাইপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত ।
অনেকের অভিমত, রাজ্যের চা শিল্পের উন্নয়নে চন্ডীপুর ব্লক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। ব্লক এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ১০টি চা বাগান। সবুজের গালিচায় আচ্ছাদিত এই জনপদটি আজ সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে চলেছে। ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গ্রাম পঞ্চায়েতর ক্ষমতা ও ভূমিকা যে কতখানি তা মনু নদী পাড়ের এই পঞ্চায়েতের সীমানায় পা রাখলেই বোঝা যায়। আজ মিশ্র জনবসতিপূর্ন এই গ্রামের মানুষই এখন পঞ্চায়েতের মাধ্যমে তাদের জীবনজীবিকার ভবিষৎ কর্মপন্থা নির্বাচন করে রূপায়ন করেছেন। তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। এই পঞ্চায়েতের বাসিন্দা তিনুলাল চক্রবর্তী ।তিনি চন্ডীপুর পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি। পঞ্চায়েত প্রধান বাসন্তী দাস এবং উপ প্রধান মিলন সিংহ রায়। সবাই জোর দিয়ে জানালেন জনগনের পরামর্শকে পাথেয় করে , তাদেরকে সাথে নিয়ে শ্রীরামপুরকে একটি সমৃদ্ধ পঞ্চায়েতে রূপান্তরিত করার প্রয়াস অব্যহত রয়েছে। কৃষি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি তিনুলাল চক্রবর্তীকে সাথে নিয়ে গোটা গ্রাম এলাকা ঘুরে অনুভব হলো উন্নয়নের মূল শর্তই হলো শান্তি। যেন সর্বত্র শান্তির পরশ। জনগনের সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রশ্নে গোটা এলাকায় কর্মযজ্ঞ চলছে।
আলাপচারিতায় পঞ্চায়েত প্রধান বাসন্তী দাস জানান, পঞ্চায়েতে মোট জমির পরিমান ৬৪৭.৪১ একর। এরমধ্যে চাষযোগ্য জমির পরিমান ২৭২ একর। সেচ সেবিত জমির পরিমান ৮৮.৮৮ একর। পঞ্চয়েতের ৬টি পাড়ায় পানীয় জলের সুবিধার্থে রয়েছে ১০টি মিনি ডিপ টিউবওয়েল, ৪টি শ্যালো টিউবওয়েল, ৩টি আর সি সি ওয়েল, ১০টি মার্ক-থ্রি, ৪টি মার্ক-টু, একটি ওভার ফ্লো, ১টি ওভার হেড ট্যাঙ্ক। ব্যবসার জন্য রয়েছে ১৫টি মার্কেট ষ্টল। মাছ চাষের সুবিধার্থে জলাশয় রয়েছে ১০.৬২ একর। গনবন্টন ব্যবস্থায় রয়েছে ৩টি ন্যায় মূল্যের দোকান। কৃষি কাজের পরামর্শের জন্য রয়েছে ১টি কৃষি সেক্টর অফিস। সংস্কৃতি চর্চা ও আলোচনা সভার জন্য গড়ে উঠেছে কমিউনিটি হল। গ্রামের কচিকাঁচা শিশুদের প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২টি, ১টি দ্বাদশ শ্রেনী বিদ্যালয় ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন পরিকাঠামো। প্রতিটি পাড়ায় বিদুৎ পরিষেবার পাশাপাশি রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। আবাসন যোজনায় ঘর পেয়েছেন ১৫টি দরিদ্র পরিবার। এদের মধ্যে রয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী রীতা দেবনাথ ছাড়াও মমতা খান, চন্দনা শব্দকর, দিলীপ দাস। তারা জানান,সরকার থেকে মাথার উপর স্থায়ী আচ্ছাদন পেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতে পারায় ভীষন খুশি। এছাড়া , সীতারুন বিবি, রামু দেবনাথ,খেলা রানী পাল সহ ২০ জনকে ছাগল পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য প্রত্যেককে ৩হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান বাসন্তী দাস । তিনি জানান, পঞ্চায়েত থেকে ৫টি সেচের নালা তৈরী ,পানীয় জলের পাইপ লাইন সম্প্রসারন ছাড়াও জল নিকাশি নালা ,অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র, স্কুল , টিউবওয়েল, রাস্তা ও পুকুর ইত্যাদি সংস্কার করে দেওয়া হয়েছে । এছাড়া ৩৮জন কৃষকের অনাবাদী জমি চাষযোগ্য করে দেওয়া হয়। প্রধান জানান ,চলতি অর্থ বছরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ২২টি নতুন রাস্তা,২১টি কাঁচা ও ১৫টি পাকা নালা, ১০টি কালভার্ট,৬২টি পুকুর খনন,২১টি ফল বাগিচা করার পাশাপাশি ৩০ কানি জমি শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষের আওতায় আনা হবে। ২১০টি পরিবারকে প্রানী পালনের সহায়তা দেওয়া হবে। এককথায় এই পঞ্চায়েতকে শহরের আদলে গড়ে তোলার জন্য হাতে হাত ধরে দলমত নির্বিশেষে সব অংশের মানুষের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। তাই প্রতিটি দপ্তরের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় সীমান্ত ঘেষা শ্রীরামপুর উন্নয়নের অভিমুখে এগিয়ে চলেছে।