অনিকেত চক্রবর্ত্তী
May 01,2017: একদিকে বিদ্যুতের বিল কমিয়ে আনা, অন্যদিকে বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহারের পরিবেশ দূষণের মাত্রা হ্রাস করতে দেশে চালু হয়েছে এল ই ডি বাল্বের ব্যবহার। চিরাচরিত বৈদ্যুতিক বাল্ব বা টিউব লাইটে যে পরিমাণ বিদ্যুত খরচ হয়, এল ই ডি বাল্ব ব্যবহারে সেই পরিমাণ অনেকটা কমে যায় বলে বিদ্যুতের বিলও প্রায় ৫০% হ্রাস পায়। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যার কথা মাথায় রেখে, পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার উপর বেশ জোর দেওয়া হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেও, এল ই ডি বাল্ব পরিবেশ বান্ধব আলোক-বাতি।
আমাদের রাজ্যেও এল ই ডি বাল্ব ব্যবহারের মাত্রা ক্রমশ: বাড়ছে। এই ধরণের বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারি এবং পরিবেশবান্ধব বাল্বের ব্যবহার আরও বাড়াতে সম্প্রতি রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মানিক দে দুটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প – উজালা এবং পবন প্রকল্প চালু করেছেন। অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত এনার্জি এফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস (ই ই এস এল) ইতিমধ্যেই আগরতলা সহ সারা রাজ্যে এল ই ডি বাল্বের প্রচলনের জন্য কাজ শুরু করেছে। ই ই এস এল-র পরিকল্পনা অনুযায়ী পৌর এলাকা সহ নগর ও গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রাস্তার বাতিস্তম্ভ বা স্ট্রিটলাইটগুলিতে এল ই ডি বাল্ব লাগানো হবে। এরই পাশাপাশি ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য জনগণকে এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভূর্তকী মূল্যে এল ই ডি বাল্ব বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আপাতত: ই ই এস এল এই কাজ আগরতলা পৌর এলাকায় চালু করেছে। আগরতলা প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পুর পরিষদের ৪৯ ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় ৪৩টি ওয়ার্ডে রাস্তার বাতিস্তম্ভে এল ই ডি বাল্ব লাগানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আগরতলা পুর পরিষদের আধিকারিকদের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৩৪,২০০ টি এল ই ডি বাল্ব লাগানো হয়েছে এবং বাকী ওয়ার্ডগুলিতে আনুমানিক ৫০০০ টি এল ই ডি বাল্ব লাগানোর কাজ খুব শীঘ্রই শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য: প্রচলিত বাল্বের বদলে এল ই ডি স্ট্রিটলাইট বসানোর জন্য আপাতত আগরতলা পুর পরিষদকে কোন অর্থ খরচ করতে হয় নি। চুক্তি অনুযায়ী এল ই ডি বাল্ব ব্যবহারের ফলে বিদ্যুতের বিলে যে পরিমাণ অর্থ প্রতিবছর সাশ্রয় হবে, সেই অর্থ ই ই সি এল-কে দেবে পুর পরিষদ এবং এইভাবে পুরো প্রকল্পটি রূপায়নের অর্থ সংস্থাটি জোগাড় করবে। আগরতলা পুর পরিষদ ছাড়াও অন্যান্য স্থানীয় প্রশাসন এমনকী পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত এল ই ডি স্ট্রিট লাইট বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ই ই সি এল।
এছাড়া, ঘরোয়া এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এল ই ডি লাগানোর জন্য ই ই এস এল-র পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ অফিসের বিল প্রদান কেন্দ্রে একটি বিক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রাজ্যের ব্যুরো অব এনার্জি এফিসিয়েন্সি-র নোডাল আধিকারিক বিজয় রাঙ্খল জানিয়েছেন, সারা রাজ্যে মোট ৮৭টি এই ধরণের বিক্রয়কেন্দ্র খোলার চুক্তি ই ই সি এল-এর সঙ্গে হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যেই এই কেন্দ্রগুলি খোলা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বর্তমানে ই ই সি এল এইধরণের কেন্দ্র পরিচালনা ও সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য লোক নিযুক্তি করছে বলেও তিনি জানান।
ভুর্তকী মূল্যে ৯ ওয়াটের এল ই ডি বাল্ব ই ই সি এল-এর বিক্রয় কেন্দ্রে ৭০টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, সঙ্গে তিন বছরের গ্যারান্টি। অর্থাৎ তিন বছরের মধ্যে বাল্ব খারাপ হয়ে গেলে, ই ই সি এল বিনামূল্যে অকেজো বাল্বের বদলে নতুন বাল্ব দেবে। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতাদের অবশ্যই বাল্ব কেনার রসিদও দেখাতে হবে। ই ই সি এল সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত এরাজ্যে মোট ৮৫,১৩২টি এল ই ডি বাল্ব ঘরোয়া কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই সংখ্যক এল ই ডি বাল্ব ব্যবহারে বছরে ১১০৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ শাশ্রয় হবে এবং এর ফলশ্রুতিতে মোট চার কোটি টাকা বিদ্যুৎমাশুল কম খরচ হবে। তাছাড়া, অনেকাংশেই হ্রাস পাবে পরিবেশ দূষণকারী কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের মাত্রাও। রাজ্যের আট জেলার মধ্যে বর্তমানে পশ্চিম এবং সিপাহীজলা জেলায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় এল ই ডি বাল্ব ব্যবহৃত হচ্ছে। ই ই সি এল আরও বিক্রয়কেন্দ্র খুললে উত্তর, দক্ষিণ এবং গোমতী জেলায়ও এর ব্যবহার বাড়বে।
এল ই ডি বাল্ব কতটা দ্রুত রাজ্যে বিস্তার লাভ করবে, সেটা এখন নির্ভর করছে ই ই সি এল এবং স্থানীয় প্রশাসন কত দ্রুত চুক্তি সম্পাদিত করতে পারে এবং সংস্থাটি কত বেশি বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে পারবে। তবে প্রাথমিক স্তরে কাজের অগ্রগতি থেকে এটা ধারণা করা যায়, শ্যামলী ত্রিপুরার সর্বত্র কুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এল ই ডি’র পরিবেশবান্ধব দ্যুতি।