Paramita Gharai: Sep 24, 2016: নারীমুক্তি ,নারীস্বাধীনতা কথাগুলো বাংলা অভিধানে তখনও ঠাঁই পায়নি। শতাব্দীর সংস্কারের আবর্জনায় আর বিদেশী শাসনের বেড়াজালে আটকে অশিক্ষিত–অর্ধশিক্ষিত বাংলার মানুষ তখন নিজেদের অজান্তেই অস্তিত্বের সংকটে। ধনী শিক্ষিত শ্রেণী ব্রাহ্মধর্ম ও ব্রাহ্ম সমাজকে আশ্রয় করলেও অসংখ্য সাধারন মানুষের মুক্তির রাস্তা দেখালেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১৮২০ সালে ২৬শে সেপ্টেম্বর তাঁর জন্ম।

রাজা রামমোহন রায়ের হাত ধরে যে সামাজিক আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল বিদ্যাসাগরের হাতে তা প্রাণ পেয়েছিল। ১৮২৯ সালে রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আইন পাশ করিয়ে সেই আইনকে কার্যকরী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন পুরুষের বহুবিবাহ, কৌলিন্য বজায় রাখার জন্য গৌরীদান ও বৃদ্ধের সঙ্গে বিয়ের প্রথা রয়েই গিয়েছিল। এই বিধবাদের দুর্দশা দূর করতে এগিয়ে এলেন বিদ্যাসাগর। সংস্কৃতে অগাধ পান্ডিত্য,কলেজের অধ্যাপক ,উদার ,যুক্তিবাদী বিদ্যাসাগর ‘পরাশর সংহিতা’ কে হাতিয়ার করে সমাজ ও আইনের কাছে তুলে ধরলেন যে হিন্দু বিধবার আবার বিয়ে করবার স্বীকৃতি শাস্ত্রে আছে। ১৮৫৬ সালে পাশ হল বিধবা বিবাহ আইন। নানা বাধাবিপত্তির সাথে লড়াই করেছেন সারাজীবন এই আইনকে কার্যকরী করার জন্য। নিজের ছেলের বিয়ে দিয়েছেন একজন বিধবা মহিলার সঙ্গে। তাঁর নেতৃত্বেই বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। লড়াই করেছেন নারীশিক্ষার প্রচার ও প্রসারের জন্য। স্কুল ইন্সপেক্টরের পদে থাকাকালীন তাঁর উদ্যোগে জেলাগুলোতে মেয়েদের জন্য স্কুল তৈরী হয়।
১৮৩০সালে রামমোহন –বিদ্যাসাগরের হাত ধরে মেয়েদের ‘মানুষ’ হিসেবে সামাজিক স্বীকৃতি আদায় করার যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তা আজও অব্যাহত। আজও ভারতবর্ষের প্রতিটি মেয়েকে ‘মেয়ে’ হিসেবেই বাঁচতে হয়,কারণ বাল্যবিবাহ এখনও সমাজ থেকে পুরোপুরি নির্মূল হয়নি, বিধবা বিবাহ এখনও আলোচনার বিষয়,সর্বোপরি মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণের হার তুলনামূলক কম। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে সমাজের সমস্ত সুস্থ মনের মানুষের অবশ্যই ভাবা উচিত কোন পথে এগোলে এই মহাপুরুষের স্বপ্ন সফল হবে।