Paramita Gharai
January 08, 2018:
Click here for উত্তরপূর্ব ভারতের বিস্ময়কর এক শিল্পভূমি – পর্ব ১ And উত্তরপূর্ব ভারতের বিস্ময়কর এক শিল্পভূমি – পর্ব ২
কোটি সংখ্যক দেবতাকে সঙ্গে নিয়ে দেবাদিদেব চলেছেন বারাণসী। দিনের শেষে সূর্যদেব মুখ লুকোলেন রঘুনন্দন পাহাড়ের আড়ালে। দেবতারা রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত নিলেন পাহাড়ের কোলেই। পথশ্রমে ক্লান্ত দেবকূল সূর্যোদয়ের পরেও রইলেন নিদ্রিত। মহাদেব একাই রওনা হলেন বারাণসীর উদ্দেশ্যে। ঊনকোটি জন দেবতার ঘুম আজও ভাঙেনি। সেই কারনেই রঘুনন্দন পাহাড় দেবতীর্থ ”ঊনকোটি”। তবে প্রচলিত কাহিনীর বিরোধিতা করে ঊনকোটি পাহাড়ে দেবাদিদেবের অবয়বেরই আধিক্য।
দেশকালের সীমারেখার বাঁধন কেটে যদি উপস্থিত হই অষ্টম শতকে বাংলাদেশের শ্রীহট্টতে, যার প্রান্তরেখা থেকেই শুরু ঊনকোটির পাহাড়, দক্ষিণ ভারতীয় দেবতার দেখা পাব সেখানেই। তিনি আর কেউ নন, দক্ষিণ ভারতের তিরুভারু মন্দিরের মহাদেব ”হটকেশ্বর”, নাম পাল্টিয়ে শ্রীহট্টে ”হট্টনাথ”। সপ্তম-অষ্টক শতকে শ্রীহট্ট অঞ্চলটি কখনো ছিল হরিকেল রাজ্যের মধ্যে, কখনো বা সমতটের অধীনে। নবম শতকে আবার বঙ্গভূমির অধীনে। পাল রাজাদের হাত ধরে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির ঢেউ শ্রীহট্টের মাটি ছাপিয়ে ততদিনে আছড়ে পড়েছে উপজাতিদের সংস্কৃতির ধর্মবিশ্বাসে। মেঘালয়ের ফুলবাড়ি-তুরা রোডে ভৈটববাড়ী প্রত্নস্থলে আবিষ্কৃত হয়েছে বিরাট এক শহরের ভগ্নস্তূপ । শহরের ভগ্নস্তূপে ওয়া গেছে শিবলিঙ্গ,যোনিপীঠ ও বিভিন্ন মূর্তি, ফ্রেস্কো, টেরাকোটা মন্দিরের অংশসহ আরো অনেক কিছু। তবে সবচেয়ে আকর্ষনীয় সাতটি জলাশয়ের মধ্যে সাতটি মন্দির। সবথেকে বড় সরোবরে লিঙ্গরাজের মন্দির। দশম থেকে দ্বাদশ শতক সময়ের মধ্যে তৈরী স্থাপত্য ও ভাস্কর্যগুলো সাক্ষ্য দেয় সেইসময়কার দক্ষিণ ভারতীয় আর উত্তরপূর্ব ভারতীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধনের।পুরাতাত্ত্বিকরা মনে করেন, বৌদ্ধ ও শৈব দুধারারই মেলবন্ধন ঘটেছে এখানকার উপজাতিদের ভাস্কর্যে। তাহলে এই উপজাতীয় শিল্পীদের হাতেই সৃষ্টি হয়ে বৌদ্ধ-শৈব শিল্পকলার মিশ্রিত চিহ্নই কি বহন করে চলেছে ঊনকোটি?
নাকি মনখেমর গোষ্ঠীর উচ্চ মানের শিল্পকলার প্রতিফলনও ঘটেছে ঊনকোটির ভাস্কর্যে? কিন্তু কারা এই ”মনখেমর”?