• Contact us
  • Advertising Policy
  • Cookie Policy
  • Disclaimer
  • Privacy Policy
  • Terms of Use
Saturday, June 28, 2025
27 °c
Agartala
enewstime
  • Home
  • News
    • Northeast
    • National
    • International
    • Tripura News
  • Sports
    AIU provisionally suspends Twinkle Chaudhary for use of prohibited substance

    AIU provisionally suspends Twinkle Chaudhary for use of prohibited substance

    Bazball Brilliance: England Chase 371 to Stun India in Anderson-Tendulkar Trophy

    Bazball Brilliance: England Chase 371 to Stun India in Anderson-Tendulkar Trophy

    Cricket World Mourns: Former India Spinner Dilip Doshi Passes Away at 77

    Cricket World Mourns: Former India Spinner Dilip Doshi Passes Away at 77

    Headingley Test: England Face 350-Run Chase as Rahul, Pant Centuries Set Up Thrilling Test Finish

    Headingley Test: England Face 350-Run Chase as Rahul, Pant Centuries Set Up Thrilling Test Finish

    Rishabh Pant Rewrites Records with Twin Tons at Headingley

    Ind vs Eng 1st Test: Rishabh Pant Rewrites Records with Twin Tons at Headingley

    Rahul takes India’s lead to 96 runs after Bumrah’s fifer keeps England to 465

    Ind vs Eng 1st Test: Rahul takes India’s lead to 96 runs after Bumrah’s fifer keeps England to 465

    Ind vs Eng Test 1: Josh Tongue Stars as India Crumble from 430/3 to 471 All Out

    Ind vs Eng Test 1: Josh Tongue Stars as India Crumble from 430/3 to 471 All Out

    Stokes’ Decision Right, Execution Wrong

    IND vs Eng 1st test: Stokes’ Decision Right, Execution Wrong, Says Broad After India’s Batting Blitz

    Anderson-Tendulkar Trophy: Gill, Jaiswal Lead India's Charge with Centuries at Headingley on Day 1

    Anderson-Tendulkar Trophy: Gill, Jaiswal Lead India’s Charge with Centuries at Headingley on Day 1

  • Business
  • Entertainment
  • Health
  • Features
  • TendersNew
No Result
View All Result
  • Home
  • News
    • Northeast
    • National
    • International
    • Tripura News
  • Sports
    AIU provisionally suspends Twinkle Chaudhary for use of prohibited substance

    AIU provisionally suspends Twinkle Chaudhary for use of prohibited substance

    Bazball Brilliance: England Chase 371 to Stun India in Anderson-Tendulkar Trophy

    Bazball Brilliance: England Chase 371 to Stun India in Anderson-Tendulkar Trophy

    Cricket World Mourns: Former India Spinner Dilip Doshi Passes Away at 77

    Cricket World Mourns: Former India Spinner Dilip Doshi Passes Away at 77

    Headingley Test: England Face 350-Run Chase as Rahul, Pant Centuries Set Up Thrilling Test Finish

    Headingley Test: England Face 350-Run Chase as Rahul, Pant Centuries Set Up Thrilling Test Finish

    Rishabh Pant Rewrites Records with Twin Tons at Headingley

    Ind vs Eng 1st Test: Rishabh Pant Rewrites Records with Twin Tons at Headingley

    Rahul takes India’s lead to 96 runs after Bumrah’s fifer keeps England to 465

    Ind vs Eng 1st Test: Rahul takes India’s lead to 96 runs after Bumrah’s fifer keeps England to 465

    Ind vs Eng Test 1: Josh Tongue Stars as India Crumble from 430/3 to 471 All Out

    Ind vs Eng Test 1: Josh Tongue Stars as India Crumble from 430/3 to 471 All Out

    Stokes’ Decision Right, Execution Wrong

    IND vs Eng 1st test: Stokes’ Decision Right, Execution Wrong, Says Broad After India’s Batting Blitz

    Anderson-Tendulkar Trophy: Gill, Jaiswal Lead India's Charge with Centuries at Headingley on Day 1

    Anderson-Tendulkar Trophy: Gill, Jaiswal Lead India’s Charge with Centuries at Headingley on Day 1

  • Business
  • Entertainment
  • Health
  • Features
  • TendersNew
No Result
View All Result
enewstime
  • Home
  • News
  • Sports
  • Business
  • Entertainment
  • Health
  • Features
  • Tenders
Home Art & Culture

ক্রুশ (Cross)

ENEWSTIME Desk by ENEWSTIME Desk
August 14, 2018
in Art & Culture
ক্রুশ (Cross)
30
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

পারমিতা ঘড়াই

August 14, 2018: 

1
গাড়ির লাইনে দাঁড়িয়ে ভীষণ রাগ ধরছিল রঘুর ওপর। কি দরকার ছিল মেয়েটাকে গাড়িতে তুলবার? চোরাচাঁদপুর পৌঁছাতে  সন্ধ্যে হয়ে যাবে এমনিতেই। রাস্তায় এভাবে আটকে গেলে তো আরো দেরী হবে। খামকা মেয়েটার জন্য এখনো গাড়ি স্টার্ট দেওয়া যাচ্ছে না । গাড়ি থেকে নেমে একটা বড় গাছের নীচে এসে দাঁড়ালাম। সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়ার রিং ছাড়তেই সকালের কথাগুলো পর পর  মনে এল।

ইম্ফল  থেকে একটা বিশেষ কাজে জিপ নিয়ে চোরাচাঁদপুর যাচ্ছি । রঘু  আমার অফিসের পিয়ন, স্থানীয় ছেলে বলে যেখানে যাই সেখানে ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই। অচেনা জায়গায় চলাচলের সুবিধা । আর মণিপুরী ভাষা থেকে হিন্দীতে অনুবাদ করে দেবার কাজটাও রঘু  ভালোই করে। এসব কারণে ওকে একটু আধটু প্রশ্রয় যে দিই না তা নয়, তবে আজকে বোধহয় বাড়াবাড়ি হয়ে গেল।

উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে পাহাড় কেটে রাস্তা হয়েছে অনেকদিন। কিন্তু কুড়ি বছর আগে যানচলাচল কমই ছিল। জাতীয় সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে সরকারি- বেসরকারি গাড়ি থামিয়ে ‘লিফট্’ চাওয়াটা পাহাড়ী মণিপুরীদের কাছে এক রকমের অভ্যেস(!)ই হয়ে গেছিল। এই মেয়েটিও হাত দেখিয়েছিল গাড়ি দাঁড় করানোর জন্য। আমি প্রথমে রাজি ছিলাম না। কিন্তু রঘুর আব্দারে থামতে হল। রঘু পেছনের সিটে থেকে  আমার দিকে সামান্য ঝুঁকে বলল,”লিফট্ মাঙ্ রাহি হ্যায় , মেরা পাস  লে লেতা হু।”

আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে ড্রাইভার কে চোখের ইশারায় নিজের পাশের সিটটা দেখিয়ে দিল। আমি আপত্তি জানালাম। ”কেয়া কর রাহে হো ? জান পহিচান নেহি  … কুছ হোগা তো কোম্পানি হামকো ছোড়েগা নেহি।”
আমার আপত্তির তোয়াক্কা  না করে রঘু  গাড়ির পেছনের দরজা খুলে মেয়েটাকে তুলে নিল।বলল,” আপ খামোখা ঘাবড়া রাহা হ্যায় , কুছ নেহি হোগা।”

আমি ড্রাইভারের পাশে, গাড়ির সামনের আসনে। রঘু আর মেয়েটা পেছনের সিটে।

মেয়েটার পরণে লাল রঙের ‘ফানুক ‘,লুঙ্গির মতো করে জড়ানো আর ব্লাউজের মতো ‘ইনফা’ , হাতাছাড়া । গায়ে একটা হালকা হলদে রঙের চাদর ।বাঁ-কাঁধের নীচে খোলা হাতে উল্কি করা ক্রুশচিহ্ন জানিয়ে দিচ্ছে মেয়েটার ধর্মীয় পরিচয়।

উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ী উপজাতিদের মধ্যে মিশনারিদের প্রভাবে এরা অনেকেই খ্রীষ্ট ধর্মীয়।

মণিপুরী ভাষার নিজেদের মধ্যে চাপাগলায় কথা বলছিল ওরা। মাঝে মাঝে ওদের টুকরো কথা আর হাসির শব্দ কানে আসছিল। আড্ডা ভালোই জমে উঠেছে। মেয়েটা বোধহয় রঘুর পূর্ব পরিচিত। হঠাৎ কানে এল মেয়েটি হেসে হেসে বলছে,’আলুদি বিয়ার পিথো কোন চিবু। ‘ ”বিয়ার” কথাটা আমার শুনে কপাল কুঁচকে গেল। রঘুও কি একটা বলতে যাচ্ছিল। ড্রাইভার এই সময় একটা হেয়ারপিন বাঁক ঘুরতে গিয়ে  খুব জোরে ব্রেক কষল। রঘু আর মেয়েটা হুমড়ি খেয়ে সামনের সিটে গিয়ে পড়ল। আমার সিট বেল্ট বাঁধা থাকায় নিজেকে সামলে নিলাম।

মেয়েটা গাড়িতে ওঠার পর প্রায় ঘন্টা দেড়েক কোথাও না থেমে অনেকটা রাস্তা এগিয়ে এসেছিলাম। উপত্যকা জুড়ে বিছানো  সবুজ ক্ষেত, বাঁশ-বেতের হলদেটে যুগলবন্দী , কাঁঠাল- অশ্বত্থ-সেগুনের গা বেয়ে জড়িয়ে থাকা নাম না জানা  অর্কিডের উঁকিঝুঁকিতে মনিপুর যৌবন মদে মত্তা। গাড়িতে যেতে যেতে আমি আকন্ঠ সেই মদিরা পান করছিলাম।

ব্রেকের চোটে নেশার ঘোর কাটল। দেখলাম হেয়ারপিন বাঁকের মুখেই লাইন দিয়ে সার সার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় বি.এস.এফ  অর্থাৎ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছে। এমনকি গাড়ির আরোহীদের ছাড় নেই। বিশ্বব্যাঙ্কের একটা প্রকল্পের কাজে চুক্তিবদ্ধ  হয়ে আমি মনিপুরে  এসেছি। সেই সূত্রে বিশ্বব্যাঙ্কের দেওয়া পরিচয়পত্র আমার পকেটে। রঘু আর ড্রাইভার ও একই প্রকল্পের কর্মী। তাই হালকা জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের ছাড় মিলল। কিন্তু মেয়েটাকে জওয়ানরা টেনে নিয়ে গেল একটা গাছের আড়ালে । তখনো দুপুরের খাবার পেটে পড়েনি। ঘড়ির কাঁটা দুটো পার হবার অপেক্ষায়। শেষ হওয়া সিগারেটের টুকরোটা আলগোছে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতে গিয়ে বাঁদিকে চোখ পড়ল। দেখি রঘু আর ড্রাইভার খোশগল্প করছে। ওদের দেখে বিরক্তি চেপে রাখতে পারলাম না। রঘুকে একটু উঁচু গলায় ধমকের সুরে বলে ফেললাম,  ‘দেখো, ইস লেড়কি কে লিয়ে কিতনা লেট হো গ্যায়া।”

রঘু শান্তভাবে  বলল,” আভি হো যায়েগা স্যর।”

জিজ্ঞাসাবাদ আর তল্লাশির পর্ব মিটতে আধঘন্টা লাগল। মেয়েটা গাড়িতে ফিরে এসে চুপচাপ রঘুর পাশে বসল। আমিও গাড়ির সামনের  সিটে গিয়ে বসলাম । ড্রাইভার গাড়িতে স্টার্ট দিল।

পাকদণ্ডী ঘুরে গাড়ি এখন উৎরাই এর পথে। মাঝারি গতিতে দুপাশের পাহাড়ী খাদের হাতছানিকে কে আলগোছে সরিয়ে দিয়ে সোজা রাস্তা বেয়ে ছুটে চলেছে ঝড়ের গতিতে। দুপাশে এখন সেগুন-অশ্বত্থ-জলপাই এর সাথে আরো নাম না জানা মহীরূহ গা ঘেষাঘেষি  করে ঘন জঙ্গলের চেহারা নিয়েছে। তাদের বিস্তৃত ডালপালা তে রাস্তার ওপর আর্চের মতো হয়ে গেছে। পাঁকে পাঁকে জড়ানো স্বর্ণলতার আভরণে বনভূমি সুসজ্জিত । আলো-আঁধারি রাস্তার পাশে গাছের ডালে শাখামৃগদের অবাধ আনাগোনা । রাস্তা থেকে জঙ্গলের দিকে ছুটে যাওয়া বনমোরগেরও দেখা মিলল। আমি আয়না দিয়ে রঘু আর মেয়েটার প্রতিবিম্ব আমার চোখে পড়ছে।  ওদের টুকরো কথা , হাসি আর ঘনিষ্ঠ  আচরণের টুকরো টুকরো ছবি আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে অবাঞ্ছিত একটা ইঙ্গিত দিচ্ছিল। না চাইলেও গাড়ির সামনের আয়নায় মাঝে মধ্যে চোখ চলে যাচ্ছে। হঠাৎই  রঘু ড্রাইভারকে বলল,” লোকতাক মায়াদা খোমরা বিয়ার লেইখিদোইনি।” রঘুর মুখে আবার ”বিয়ার ” শব্দটা শুনে মনের মধ্যে একটা খটকা লাগলো ।

বেশ কিছুটা যাবার পর ড্রাইভার  হাইওয়ে থেকে একটা সরু গলির মধ্যে গাড়ি ঢুকিয়ে দিল।  বাগান ঘেরা একটা রেস্তোরাঁ সামনে গাড়ি থামল।

– স্যর ! ইধারই লাঞ্চ করিয়ে।
– চ্যলো। বলে গাড়ি থেকে নামলাম।

খাবারের অর্ডার দিচ্ছি, সেসময় রঘু দু’বোতল বিয়ার চেয়ে বসল। একে  অফিসের কাজে যাচ্ছি , ডিউটি আওয়ার, দিনদুপুরে রঘুর আব্দার টাকে বাড়াবাড়ি মনে হল। আমি আপত্তি জানালাম । রঘু মেয়েটাকে দেখিয়ে বলল , ”উ ভি পিয়েগি ।”

আমার খটকাটা তাহলে ভুল নয়। কি আর বলব? বুঝলাম  এ মুহূর্তে রঘুকে নিষেধ করে কিছু  লাভ হবে না।  দুজনে দুটো বোতল নিয়ে উধাও হয়ে গেল। ড্রাইভার সাহেবই বা আর বাদ যায় কেন? সেও একটা বিয়ারের বোতল বগলে নিয়ে আমার চোখের আড়ালে চলে গেল। আমি কাঁচের জানালা ঘেরা রেস্তোরাঁয় একা একা বসে প্রকৃতিকে দেখতে লাগলাম।

চারপাশে নীল পাহাড়কে পেছনে রেখে বাগানটা ক্যানভাসে আঁকা একটুকরো ল্যান্ডস্কেপ। । পাহাড়ের পায়ের তলায় গাঢ়-হালকা নানারকমের সবুজের বুনন, বুনট কোথাও ঘন , কোথাও পাতলা। সেখানে যেমন আছে খেজুর-সুপুরির আটপৌরে আনাগোনা , বোগেনভিলা-মাসুন্ডার রঙিন হাতছানি আবার সেগুন-বট-আমলকির গম্ভীর উপস্থিতি। মাঝে মধ্যেই চোখে পড়ছে  দলবদ্ধ কলাগাছ । মূলিবাঁশেরও ঝাড়ের অভাব নেই । নানারকমের অর্কিড আর লিলির যুগলবন্দী তে সাজানো বাগান। ছোট-বড় নানারঙের গোলাপের ওপর হলুদ-লাল-কমলা প্রজাপতিদের আনাগোনা।  নাম না জানা সানাই আকৃতির ফুলের গভীরে ঠোঁট ডুবিয়ে দিচ্ছে মৌটুসি। কাঠবাদাম গাছের গা বেয়ে লেজ উঁচিয়ে নেমে আসছে কাঠবেড়ালি। গাছের ডাল বেয়ে অচেনা গোলাপীফুল মালার মতো ঝুলে পড়েছে। বাগানের আর্দ্র মাটিতে ফার্ণের দেখাও মিলল। কুসুমরঙা সূর্যের রঙ মেখে বসন্ত নিশ্চিন্তে স্থায়ী বাসা বেঁধেছে এই বাগানে। বাগান যেখানে শেষ, লেকের শুরু সেখান থেকেই । লেকের অপর পাড় দৃষ্টির অগোচরে , এতটাই এই হ্রদের বিশালতা। তাছাড়া ঘন কুয়াশার আচ্ছাদনে লেকের অপর পাড় অস্পষ্ট। লেকের জলে ভাসমান স্থলভাগ, স্থানীয় ভাষায় চাপড়া। নদীর চর বা সমুদ্রের দ্বীপের মতো চাপড়াগুলো কিন্তু স্থাবর নয়। বেশ কিছুদিন পরপর নজর করলে বোঝা যায় এই চাপড়াগুলো আগের জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে এসেছে। সে যাই হোক,  এই সবুজ ভাসমান চাপড়াগুলো  পিকনিক পার্টি দের খুব পছন্দ । কাজের দিন বলে আজ ভিড় কম। তবুও সামনের দুটো চাপড়া তে শীতের সোনালী রোদ গায়ে মেখে কয়েকটি ছেলেমেয়ে হুল্লোড় করছে। ওদের রান্নাবান্নার ব্যস্ততা আর শরীর বাঁকানো নাচ রেস্তোরা তে বসেই চোখে পড়ছিল। সাউন্ড বক্সে তারস্বরে হিন্দি গান  বাজছিল , ”দিল তো পাগল হ্যায়, দিল দিবানা হ্যায়…”।

একা একা বসেই লাঞ্চ সারলাম। দাম চুকিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি রঘু , ড্রাইভার  আর মেয়েটা আগেই এসে গেছে। মনে মনে আশ্বস্ত হলাম। যাক্,ওদের জন্যে অপেক্ষা করতে হল না তবে। ড্রাইভার এর দিকে তাকিয়ে মনে হল ঠিকই আছে । গাড়ি ছুটল চোরাচাঁদপুরের পথে। পশ্চিম পাহাড়ের পেছনে ঝুপ করে সূর্য ডুবল । আমরা যখন  গন্তব্যে পৌঁছলাম তখন পৌষালি আকাশে তারাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি।
পাহাড়ী ছোট শহর হালকা শীতের চাদর মুড়ি দিয়ে সাত তাড়াতাড়ি ঘুমের আয়োজন করছে। একটা চার্চে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হল। ব্যবস্থা করল রঘু। দুটো ঘরের একটাতে আমি। আর অন্যটাতে রঘু আর ড্রাইভার।

–  ইয়ে লেড়কি কাহা শোয়েগি?

-আপ চিন্তা মাত্ করিয়ে স্যর।

রঘুর চোখে হাসি খেলে গেল। রাতে খাবার ব্যবস্থা চার্চেই হল। ওরা তিনজন তিনটে বিয়ারের বোতল নিয়ে দ্বিতীয় ঘরে ঢুকে গেল। আমি আর কথা বাড়ালাম না। নিজের ঘরে ঢুকে বিছানায় শরীরটাকে ফেলে দিয়ে কম্বল টেনে নিলাম।

2

ঘুমভাঙা চোখে দেওয়ালের দিকে চোখ গেল। দেওয়ালের একপাশে আলতো আলোর মূর্ছনা । পাশ ফিরে দেখি কাঁচের জালনার ওপারের হালকা হলুদ রঙ পর্দার ফাঁক গলে এসে ভোরাই সুর গুনগুন করছে। বিছানা থেকে উঠে ভারী পর্দা সরিয়ে দিতেই বাসন্তী রঙা উপত্যকা প্রশান্তির হাসি ছড়িয়ে দিল আমার মনের কোনায়। ছোট্ট টিলার ওপর এই গির্জাটি। এই টিলা থেকে পাহাড় বেয়ে  উপত্যকায় গড়িয়ে পড়ে সবুজ ঢেউ দূর নীল পাহাড়ের পায়ের কাছে আছড়ে পড়েছে ।

তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম। কাজে বের হতে হবে তো। সরকারী কর্মকর্তার সাথে দেখাসাক্ষাত করতেই তো দুশ কিলোমিটার পথ ছুটে আসা। বাইরে এসে দেখি, পাকা পেঁপের রঙা নিয়ে সূর্য পুব আকাশে উঁকি দিচ্ছে । ড্রাইভার  আর রঘু তৈরী হয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। মেয়েটা কে দেখলাম না। জিজ্ঞেস করাতে রঘু বলল যে ও চলে গেছে। মনে মনে খুশিই হলাম। যাক্, আপদ বিদায় নিয়েছে। আমি কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
সব কাজকর্ম মিটিয়ে সেইদিনই ইম্ফলে ফিরে এসেছিলাম। প্রোজেক্টের  কাজে ব্যস্তও  হয়ে পড়েছিলাম। বেশ কয়েকমাস পরে আবার  চোরাচাঁদপুর যাবার দরকার পড়ল। রঘু কে এবার আর সঙ্গে পেলাম না। আগের ড্রাইভার কেও পেলাম না। কাজেই পাবলিক বাস ভরসা করে সকাল আটটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম। তাড়াতাড়ি গিয়ে যাতে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে পারি।

পাহাড় জুড়ে তখন বর্ষা নেমেছে। রকমারি সবুজ-হলুদের মিলিত রূপে প্রকৃতি মোহময়ী । বাসের জালনার কাঁচ বেয়ে নেমে আসা জলের রেখায় আমার প্রতিসারিত মন পাহাড়ের গায়ে বল্গাছাড়া হয়ে ধাক্কা খেয়ে ঘুরছে। আবলুস গাছের কালো গা বেয়ে আসা জলের ধারা মাটি স্পর্শ করছে। বড়সড় গাছের পায়ের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়া এলাচ গাছের পাতা বেয়ে টুপটাপ করে জলের ফোঁটা এসে পড়ছে ঘাপটি মেরে বসে থাকা  বুড়ো কোলাব্যাঙের গায়ে। বর্ষার জলে সদ্য তৈরী , রাস্তা বাওয়া  ঝোরার জলে চাকা ডুবিয়ে বাস ছুটে চোরাচাঁদপুর পরের দিকে। হাওয়ার দাপটে  রাস্তার ওপর লুটোপুটি খাওয়া বৃষ্টিভেজা  নাগকেশর ফুলে কেমন যেন মনখারাপ হাতছানি ।

নিজের গতিতে বাস চলছে। কখনো দুপাশের পাহাড়গুলোকে তাচ্ছিল্য করে সোজা রাস্তা ধরে সামনের পাহাড়ের দিকে,কখনো বা পাকদণ্ডী বেয়ে পাহাড়কে আলিঙ্গন করে। তার মাঝেই যাত্রীদের ওঠানামার জন্য থামতে হচ্ছে। বাসে বোঝাই স্থানীয় লোকজনের বেশীরভাগই কৃষিজীবী। মহিলাদের সংখ্যাই বেশী। আমার পাশের আসনে বসে থাকা যুবতীটির বুকের ওপর কাপড়ে বিশেষভাবে বাঁধা তার সন্তানটি নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। এরকম আরো তিনজন মা বাসে আছে দেখতে পেলাম। এদের সবার পরনেই ফানুক আর ইনফা। পুরুষ-নারী সবার মুখেই তামাক-সুপুরি-গুয়া। কেউ কেউ বসে বসে ঝিমোচ্ছে। কয়েকজন নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছে । মনিপুরী ভাষা আমার বোধগম্য নয় বলে ওদের আলোচনার বিষয়বস্তু  আমি বুঝতে পারছিলাম না। উপত্যকা থেকে চড়াই বেয়ে কিছুটা উঠে বাস থেমে গেল। দাঁড়িয়ে থাকা তিন-চারজন যাত্রী ড্রাইভারের সিটের দিকে এগিয়ে গেল। জালনার কাঁচ সরিয়ে মুখ বাড়ালাম। দেখি বি.এস. এফ আর সি.আর.পি.এফ এর জওয়ানরা যৌথভাবে তল্লাশি চালাচ্ছে । বুঝলাম  আধঘন্টা -পঁয়তাল্লিশ মিনিটের ধাক্কা। বাস থেকে নামতে হল।

আগের বারের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বিশ্বব্যাঙ্কের দেওয়া আই. ডি. কার্ড বের করে দেখালাম। আমার আর বিশেষ তল্লাশি হল না। বাসের জনা পঞ্চাশেক যাত্রীর তল্লাশি হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। বাসটারও তল্লাশি হবে । আমি একটা কাঁঠালগাছ দেখে তার গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালাম । একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছিল। অনুমতি নেবার জন্য সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বি.এস.এফ এর এক জওয়ানকে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে চোখ পড়ল ওর নেমপ্লেটটার ওপর।প্রদীপ বসু। তার মানে বাঙালী । বলে বসলাম, ”কি হয়েছে মিঃ বাসু ? আজ তল্লাশি টা বেশি কড়া বলে মনে হচ্ছে… ”। লোকটা আমার মুখে বাংলা শুনে খুশী হল কিনা বুঝলাম না। তবে উত্তরটা বাংলাতেই দিল- ”হ্যাঁ, না করে উপায় কি?একটা গলাকাটা লাশ পাওয়া গেছে। ” আমি  সিগারেটটা ঠোঁটদুটো দিয়ে চেপে ধরে দেশলাই জ্বালতে যাচ্ছিলাম। শুনে কৌতূহল হল। সিগারেটটা  হাতে নিয়ে বললাম,”দেখা যাবে?” প্রদীপ বসু ডানহাতের তর্জনী বাঁদিকে উঁচিয়ে বললেন , ”ঐ সেগুন গাছটায়…..”।

আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম, উত্তেজনা আর কৌতূহল মিশিয়ে বুকের ধুকপুকানি একটু বেড়েছে গেছে বেশ অনুভব করছি।

সেগুন গাছের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো একটা কবন্ধ দেহ , পরণে আমার পরিচিত লাল ফানুক , হাতকাটা ইনফায় লেগে থাকা চাপ চাপ রক্তে এখনো কালচে রঙ ধরেনি , রক্তমাখা হলদে চাদরটা কাঁধ থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। ঘাসের সবুজে কালচে লালের পরত।  বাঁকাঁধের নীচে খোলা হাতে উল্কি করা ক্রুশচিহ্ন টায় কোনো রক্তের দাগ লাগেনি। বড়সড় সেগুন গাছটা। পাতাগুলো ও বড়ো। তাই ভোরে থেকে শুরু হওয়া ঝিরঝিরে বৃষ্টি ছুঁতে পারেনি ওর দেহটাকে ,রক্তের রঙে এখনো বহমান জীবনের লালিমা। মাথায় একটা ঝাঁকুনি লাগল মনে  হল।

বুঝতে পারলাম আমি শুয়ে আছি একটা টেবিলের ওপর। জল ছিটিয়ে আমার মাথা-চোখ-মুখ ভিজিয়ে দেওয়া হয়েছে। উঠবার চেষ্টা করতেই শুনতে পেলাম, ”আর একটু শুয়ে থাকুন।” জওয়ান প্রদীপ বসু পাশে দাঁড়িয়ে । আমি উঠে বসলাম। অস্বস্তি লাগছিল।

বললাম, ”ঠিক আছি এখন। কেমন যেন মাথাটা….”।

সবাই ভাবছে ”একটা গলাকাটা দেখে লোকটা অজ্ঞান হয়ে গেল…কলকাতার বাঙালীরা এত ভীতু!” রুমাল বের করে চোখমুখ মুছলাম। প্রদীপ বসু বললেন, ”গ্রামের মেয়ে । গরীব।  কোনো  দলের সাথে হয়তো যোগাযোগ ছিল। ওদের ঘাঁটিতে যেত  খাবার  আর মদের লোভে। ওরাও মেয়েটাকে লুফে নিয়ে ছিল। ওকে নিয়ে ফূর্তি করত আর ওকে দিয়ে  খবর আনা নেওয়া করাত, হয়তো বা বেআইনি জিনিসপত্রও পাচার করাতো।”

আমি হাঁ হয়ে আমতা আমতা করে বললাম, ” বে-আ-ই-নী  জি-নি-স … মা- মা-নে …..!!

প্রদীপ বসু বললেন,”অবাক হবার কিছু নেই।সারা পৃথিবীর সাথে তুলনা করলে এখানের ছবি এতটুকু আলাদা পাবেন না। পেটের জ্বালা দূর করার জন্য গরীব মানুষ কি না করে বলুন তো?তার ওপর মেয়ে!”

হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ”ওকে মারল কেন? তাও এভাবে? ”

মিঃ বাসু কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে কি যেন ভাবলেন। তারপর বললেন ,”হয়তো মেয়েটা  অন্য কোন বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেদের চোখে পড়ে গেছে। অন্য সমস্যাও হতে পারে। তাই জীবন দিয়ে খেসারত দিতে হল।”

রঘু আর ড্রাইভার এই ঘটনা জেনেছিল কিনা জানি না। তবে মেয়েটা কে নিয়ে আমার সাথে ওদের কোনো আলোচনা হয়নি।

এই ঘটনার  প্রায় ছ’মাস কেটে গেছে। গাড়িতে চেপে আবার চোরাচাঁদপুর যেতে হল। সঙ্গে রঘু।  আধঘন্টা হল হাইওয়ের ওপর গাড়ি ছুটে চলেছে। ড্রাইভার গাড়ির টেপরেকর্ডারে একটা পুরোনো হিন্দী গান চালিয়েছে। পেছনের সিটে বসে রঘু সেই গানে গলা মিলিয়েছে-” মেরে স্বপ্নকে রানি …”। ঠিক সেই সময় গাড়ির সামনের কাঁচে দেখা গেল একটি  মনিপুরী মেয়েকে। সে হাত নেড়ে গাড়ির লিফট্  চাইছে। মুখটা এত দূর থেকে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। পরণে লাল ফানুক।

আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছিলাম। ভাবলাম রঘু যেন আবার মেয়েটাকে তুলে না নেয়। মাথা ঘুরিয়ে রঘু কে কিছু বলবার আগেই সে  গান থামিয়ে চেঁচিয়ে ড্রাইভারকে বলে উঠল,” চোরাচাঁদপুর আনে সে পহলে রোকিয়ে মাত্।”

তখন পশ্চিমা পাহাড়ের গা গড়িয়ে পাটে নামছে সূর্য।  বেলা শেষের হলুদ আভা ছড়িয়ে আছে উপত্যকায় বিছানো টিয়া-সবুজ ধানক্ষেতে, সরু সরু বাঁশের গা বেয়ে চুঁইয়ে পড়ছে পড়ন্ত বিকেল, কলাগাছগুলোর ঘোমটা টানা পাতায় পিছলে পড়ে ঝিমিয়ে পড়া রোদ লুটোপুটি খাচ্ছে ঘাসে, রাস্তায়। চোরাচাঁদপুর আর বেশী দূরে নয়। সামনে দেখতে পাচ্ছি গির্জার চুড়োর ক্রুশ । আমাদের গাড়ি গতি না কমিয়ে একই ভাবে ছুটে চলেছে। ধীরে ধীরে জেগে উঠছে গির্জার চুড়ো। পূর্বদিকের টিলায় সাদা গির্জা ধীরে ধীরে চোখের সামনে জেগে উঠছে। গোধূলির আলোয় চাদর হঠাৎ করেই মুড়িয়ে দিল গির্জাসহ গোটা পাহাড়কে।  ঝুপ করে রাতের অন্ধকার নেমে এল আকাশের সীমানা পেরিয়ে এই ছোট্ট  পাহাড়ী শহরে। আমাদের গাড়ি এসে যখন থামলো গির্জার গেটের সামনে। তখন গির্জার চুড়োর ক্রুশের ওপরে সন্ধ্যাতারা শান্তভাবে চোখ মেলেছে। গেট খুলে মোরাম বিছানো রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গেলাম। শুক্লাচতুর্দশীর চাঁদ গির্জার গা ধুইয়ে টিলা থেকে গড়িয়ে বানভাসি জোৎস্নায় উপত্যকা প্লাবিত করছে। বারান্দায় ঝোলানো বড়ঘন্টার দড়ি ধরে টান দিলো রঘু। জোৎস্নায় সাথে উপত্যকা জুড়ে শান্তির প্রতিধ্বনি ঢং… ঢং… ঢং …!!!

Related Posts

Irrfan-Khan-passes-away
Art & Culture

Irrfan Khan had craving to act right from his childhood

April 29, 2020
Twinkling-but-faded-Star
Art & Culture

Springtime story: In quest of twinkling, yet faded star

March 4, 2020
এক অলীক প্রেমিক প্রেমিকার কথোপকথন ( A Bengali short story: Imaginary dialogues of a young couple)
Art & Culture

এক অলীক প্রেমিক প্রেমিকার কথোপকথন ( A Bengali short story: Imaginary dialogues of a young couple)

November 15, 2019 - Updated on March 28, 2020
Tripura
Art & Culture

Omnipotent Maa Kali Temples in Tripura

October 26, 2019
Reinterpreter of Mythologies
Art & Culture

Reinterpreter of Mythologies

October 22, 2019
Uncle walsh: Photo courtesy: iterlyfen.gq
Art & Culture

Ancient tales, take me home

October 12, 2019
ADVERTISEMENT
ADVERTISEMENT
ADVERTISEMENT
D-2050 D-2050 D-2050
ADVERTISEMENT
ADVERTISEMENT
ADVERTISEMENT

About us

Enewstime.in is run by an individual – a Journalist by profession of Tripura with the active help of several journos including senior journalists of the State. On top of that, Enewstime.in being a subscriber of IANS news agency, we have plenty of multi-choice topics to offer to our esteemed readers. Enewstime.in is a venture reach global audience from a tiny State Tripura.

Latest News

Bangladesh’s trajectory not conducive to welfare of all: Tripura Food Minister

Woman dies in Tripura after delivering still born baby

Joblessness rate in Tripura falling, says CM Dr Manik Saha

Rath Yatra celebrated with devotion and grandeur in Odisha’s Angul

Iran postpones full airspace reopening till Saturday

AIU provisionally suspends Twinkle Chaudhary for use of prohibited substance

Contact us

19, Old Thana Road. Banamalipur. PO. Agartala. Pin code 799001. Tripura (West), India.

Email: enewstime2017@gmail.com

Wa: 8794548041

  • Contact us
  • Advertising Policy
  • Cookie Policy
  • Disclaimer
  • Privacy Policy
  • Terms of Use

© 2025 Designed & Developed with ❤️ by Provibe Media LLP

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
No Result
View All Result
  • Home
  • News
    • Northeast
    • National
    • International
    • Tripura News
  • Sports
  • Business
  • Entertainment
  • Health
  • Features
  • Tenders

© 2025 Designed & Developed with ❤️ by Provibe Media LLP