Paramita Gharai
February 25, 2019:
শীতের শেষ। বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে রোদে। সোনালী রোদে চকচক করে সবুজ পাতা। আমের বোলের গন্ধে মাতাল হয়ে ভোমরার দল আনাগোনা করে। একদিন সকালে শালিক দম্পতি ঘুমভাঙা চোখে দেখলো দুটো চড়াই চাএর দোকানের টিনের শেডের নীচে খাঁজকাটা ইটের দেওয়ালের ওপরে একজোড়া চড়াই পাখি জোরদার বাসা বানাচ্ছে । খড়-ঘাস-সুতো নিয়ে চড়াই দম্পতি খুব ব্যস্ত । শালিক গিন্নি উড়ে এসে ভাব জমালো চড়াই গিন্নির সাথে।
-কি ভাই?বাসা বাঁধছো? ডিম পাড়বে বুঝি?
-হ্যাঁ। লজ্জায় মাথা নীচু করে চড়াই গিন্নি উত্তর দিল।
-ভালো জায়গা বেছেছো। কোনো অসুবিধে হলে খবর দিও। আমরা তোমার প্রতিবেশী।
কয়েক দিন পরেই ডিম পাড়ল চড়াই গিন্নি । চারটে ডিম। গিন্নি দিনরাত ডিমগুলোর ওপর বসে তা দেয়। কর্তা এদিক সেদিক ঘুরে খাবার নিয়ে আসে । শালিক গিন্নি নিয়ম করে সকাল বিকেল গল্প করে আসে চড়াই গিন্নির সাথে। একদিন সকাল বেলা উঠে দেখে একটা দুষ্টু কাক চক্কর দিচ্ছে মাথার ওপরে। তার মানে ডিমগুলোর হদিস পেয়েছে শয়তান কাকটা। শালিক-গিন্নি চড়াই গিন্নি কে সাবধান করে দিল। চড়াই গিন্নি তো ভয়েই সাদা। ”বাছারা আমার ! এখনো ডিমগুলো ফুটে বেরই হল না, তার আগেই… ” টপটপ করে দু’ফোঁটা জল চোখ থেকে গড়িয়ে একটা ডিমের ওপর পড়ল। পেটের নরম পালক দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মুছে দিল চড়াই কর্তা ।
একদিন সকালে কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙল শালিক দম্পতির। খুশী মনে দেখে এল চড়ুই ছানাদের। চোখ না ফুটলে কি হয়েছে, নরম নরম ছানাগুলো খাবার জন্য ব্যতিব্যস্ত করে দিচ্ছে । শালিক গিন্নি ডানা বুলিয়ে আদর করে কি যেন একটা বলতে যাচ্ছিল, সেসময় মাথার ওপর দিয়ে কালো যমের মতো কাকটা বিটকেল শব্দে ‘কা কা’ করে ডেকে উড়ে গেল।
চড়ুই কর্তা আর গিন্নি দিনরাত বসে পাহারা দেয়। কর্তা চড়াই কাছে পিঠে থেকেই খাবার নিয়ে আসে। ওদের জন্য শালিক দম্পতি ও বেশী দূরে যায় না। বিটকেল কাকটা সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি চায়ের দোকানের সামনে রাস্তায় বা আশেপাশের গাছে ঘোরাঘুরি করে। চাএর দোকান থেকে বিস্কুট পাউরুটি খায়। আবার চুরি করতে গিয়ে তাড়াও খায়।
এদিকে ছানাগুলো ক্রমাগত বড়ো হয়ে উঠেছে। ডানাগুলো উড়বার মতো শক্ত হয়ে উঠেছে। এবার ওড়া শেখানোর পালা।
সেদিন চড়াই কর্তা আশপাশ উড়ে এসে দেখে বলল,”আজ আর শয়তান কাকটাকে দেখছি না। আজ তাহলে ছানাদের বের করি।” শালিক-কর্তা কে ডেকে বলল, ”দাদাভাই আপনারাও আসুন।”
চড়াই গিন্নি বাচ্চাদের প্রথমে নির্দেশ দিলেন, ”বাছারা উড়ে গিয়ে দোকানের চালের ওপরের ডালটায় বোসো তো। ” ছানারা সুন্দর উড়ে গিয়ে বসল। এবার চড়াই গিন্নি বলল,”এবার চাএর দোকানের চালে গিয়ে বোসো।” ছানার এবারও পাশ করল ওড়ার পরীক্ষায়।
আজ প্রথমদিন। তাই আর নয়। চড়াই গিন্নি ভাবল,’ এবার ফিরতে বলি ওদের’। ঠিক এমন সময়ে ই শালিক কর্তা চেঁচিয়ে উঠল,’চি-চি-চি।” শালিক গিন্নি চেঁচিয়ে উঠল, ”সাবধান” । চড়াই গিন্নি আর চড়াই কর্তা উড়ে এল ছানার দিকে। ততক্ষণে বদমাশ কাকটা বিশ্রী হাসি হাসতে হাসতে ”ক্যাঁ ক্যাঁ”করে পৌঁছে গেছে চালের ওপর। সবার সামনে থাকা ছানাটাকে ঠোক্কর দেবে এবার। হঠাৎই চোখের নিমেষে একটা কান্ড ঘটে গেল। বদমাশটা ছিটকে পড়লো একেবারে মাটির ওপর ,দোকানের সামনে । কি হল?
চড়াই দম্পতি ততক্ষণে ছানাদের নিয়ে বাসায় পৌঁছে গেছে। শালিক গিন্নি দেখল, চায়ের দোকানের মালিকের ছেলের হাতে একটা গুলতি। সে ডানা ভাঙা কাকটাকে দেখছে আর বলছে,”বেশ হয়েছ। খালি বিস্কুট চুরি ? হাত থেকেও ছোঁ মেরে নেওয়া । তোকে এমনি দিই সেটা ভালো লাগে না । দেখি এবার কি করে নিস।”
কয়েকদিন পর ছানারা উড়ে গেল বাসা ছেড়ে । চড়াই দম্পতিও শালিক কর্তাকে ডেকে বলল,”আমরাও চললাম। আপনাদের মনে থাকবে ।”
শালিক-গিন্নি বলল,” সামনের বছর এখানেই এসো। আবার দেখা হবে।”