Paramita Gharai
February 20, 2019:
ইছামতীতে পরাণ মাঝি নৌকা বায়। রোজই বেলা যখন পড়ন্ত, মাঝ নদীতে নৌকা নিয়ে যায় পরাণ। নৌকো থামিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে আবছা সবুজেটে ওপারের তীরে। সঙ্গে থাকে ওর ভাইপো বিশু। ওপারে তাদের দেশ, ঠিক ওপারেই, ইছামতী পেরিয়ে আর একটু। কিন্তু সে তো কবেই ছেড়ে এসেছে ওরা। ”তাহলে খুড়া পেত্যিকদিন কি দ্যাহে?” আজ জিজ্ঞেস করেই বসল বিশু, ”পেত্যিকদিন কি দ্যাহো বলো তো খুড়া?”
পরাণ বলে, ”একটো ঠাহর করি, ভিটাটা দ্যাহন যায় যদি…”। বলেই হুঁশ ফেরে পরাণের। ঝুপ করে দাঁড়টা জলে ফেলে তাড়া লাগায়, ”চল্ চল্, বেলা পড়ি এলো।”
বিশুর আবছা মনে পড়ে মাটির ঘর, উঠোন, গোলা, পুকুর, ধবলী গাই, বাগান …। ঠাকুর্মা-ঠাকুর্দা সব ছেড়ে আসার সময় খুব কেঁদেছিল। সে কোন ছেলেবেলার কথা। ওর বয়স তখন চার। রাতের অন্ধকারে ভিটে ছেড়েছিল ওরা। বিশ বছর হয়ে হল দ্যাশছাড়া। জোরে জোরে দাঁড় টানতে লাগল বিশু। ইছামতীতে জলে আধভাঙা চাঁদের ছায়া। মাথার ওপরে তারা বিছানো আকাশ।
পরাণমাঝি গেয়ে চলেছে –
”ও পারে কামরাঙার গাছ
ঝিকিমিকি করে তাজ
ওটা আমার বাপু মায়ের দ্যাশ
পরাণডা রে…” !!!