ProMASS Feature: Kolkata: Paramita Gharai: Sep 09, 2016: সারা রাঢ় বাংলায় এখন চলছে ভাদু পরব। ভাদ্রমাসের প্রথম দিনেই ভাদু উৎসবের সূচনা। ঘরে ঘরে বানানো হয় নৃত্যরতা মেয়ের মূর্তি যে হল ভাদু । রাঢ় অঞ্চলের সামাজিক উৎসব ভাদু।
প্রচলিত গল্প অনেকটা এই রকম:- পঞ্চকোটের রাজা ছিলেন নীলমনি সিং দেব। তাঁর রাজ্যের একটি গ্রাম হল লাদা। এই গ্রামের মোড়লের মেয়ে হল ভদ্রেশ্বরী, সবাই ডাকে ভাদু। খুব মিশুকে, হাসিখুশি, গ্রামের সবাই ভালবাসে ভাদুকে। গ্রামের লোকের সাথে মিলেমিশে চাষের কাজে হাত লাগায় সে। সোনা ফলে মাঠে। রাজা খবর পেয়ে দেখতে আসেন ফসল। সঙ্গে মন্ত্রী ধ্রুবচাঁদ। ভাদুকে দেখে মুগ্ধ হন রাজা। ভাদু হল গ্রামের কৃষিলক্ষী। রাজা ভাদুকে দত্তক নিতে চান কন্যা হিসেবে। মোড়ল রাজী হন না। তখন রাজা নীলমনি সিং দেব মন্ত্রী ধ্রুবচাঁদকে ভাদুর শিক্ষাদীক্ষা ও দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। রাজকন্যার মতো সম্মান পেয়েও ভাদু গ্রামের মানুষের জন্য আগের মতোই কাজ করত। কিশোরী ভাদুর সঙ্গে পরিচয় হল প্রতিবেশী গ্রামের কবিরাজের ছেলে অঞ্জনের। পরিচয় ক্রমে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসায় পরিণত হল।
ইতিমধ্যে ১৮৫৭ সালে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সারা ভারতবর্ষ গর্জে উঠল। ধ্রুবচাঁদও তাতে সামিল হলেন এবং ইংরেজদের হাতে বন্দী হলেন। বেশ কিছুদিন পরে তিনি মুক্তি পান। ফিরে এসে জানতে পারেন ভাদুর সাথে কবিরাজপুত্রের সম্পর্কের কথা। ক্রুদ্ধ ধ্রুবচাঁদের আদেশে কারাগারে বন্দী করা হল অঞ্জনকে। ভারাক্রান্ত মনে ভাদু কারাগারের আশেপাশের পথেঘাটে ঘুরেঘুরে গান গায় আর কাঁদে, যদি একটু দেখা মেলে তার প্রিয়তমের! মন নরম হয় ধ্রুবচাঁদের। মুক্ত হয় অঞ্জন। কিন্তু ভাদু হারিয়ে যায় চিরতরে। আত্মহননের পথ বেছে নেয় সে।
সমৃদ্ধি, জমির ঊর্বায়ন ও শস্যকামনার উৎসব ভাদু। তার সাথে মিশে গেছে সমাজের অন্তজ শ্রেণীর চাওয়া পাওয়া, সুখদুঃখ, তাদের জীবনকথা ও জীবনবোধ ভাদুর গানের মধ্য দিয়ে। ভাদুর ব্রতের কোনো মন্ত্র নেই। নেই কোনো শাস্ত্রীয় বিধি বা আচার। ভাদুগান ও নাচই এই উৎসবের মূল বিষয়। ভাদু ছিল অবিবাহিত। তাই অবিবাহিত কৃষিকন্যারা অংশ নেয় এই নাচগানে।
ভাদ্রমাসের শুক্লা–দ্বাদশী তিথিতে ইন্দ্রধ্বজ পূজার সঙ্গে ভাদু উৎসব পালিত হয়। একটি ছেলে বা মেয়ে শাড়ি পরে ভাদুর মূর্তি কোলে নিয়ে নাচে। সঙ্গে বাজে ঢোল, পাখোয়াজ আর বাঁশী। জায়গাভেদে, লোকভেদে অনেক গান প্রচলিত আছে। তবে কথা আলাদা হলেও গানগুলোর সুর মোটামুটি একইরকম। লৌকিক দেবীর আসনে আসীন হলেও ভাদু রাঢ়বাংলার ঘরে কন্যাসম। পঞ্চকোটের রাজপরিবার এই উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এতে তাঁদের কন্যা সবার কন্যা হয়ে বেঁচে থাকে। শুধু ভালবাসা দিয়েই বেঁচে থাকুক কন্যাসন্তানের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গলকামনার উৎসব ভাদু।