Manabendra Nag: Agartala: Oct 5, 2016: অতীতের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের দু:স্বপ্নের দিনগুলিতে সন্ত্রাসবাদীদের বিরোদ্ধে লড়াইয়ে এন. এল. এফ. টি বাহিনীর তপ্ত বুলেটে নিহত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বা্হিনীর জওয়ানদের রক্তস্নাত ধলাই জেলার ছামনু ব্লকের সংরক্ষিত বনাঞ্চল জুড়ে সবুজ প্রকৃতির সম্পূর্ণ ভিন্ন চেহারা।
এখানকার কান্তমণিপাড়ার জাতি-উপজাতি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সব অংশের মানুষেরা আজ আতঙ্ক বর্জিত, আপন খেয়ালে চলে প্রকৃতির কোলে জীবনযাপন করছে। প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় পাকা রাস্তা, পাকা সেতু, পানীয় জল, বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ, ইন্দোজার্মান প্রকল্প – সব কিছু মিলিয়ে ধলাই জেলায় এখন তৈরি হয়েছে নানা সুযোগ সুবিধা। উত্তরপূর্বাঞ্চলের ডোনার মন্ত্রকের সহযোগিতায় গ্রামটি সত্যিই আজ অন্য চেহারা পেয়েছে।
সন্ত্রাসবাদীদের বুলেটে বীর শহিদ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের রক্ত ব্যর্থ হয়নি, বরং ব্যর্থ হয়েছে সন্ত্রাসবাদী দৌরাত্ম, বললেন কান্তমণিপাড়ার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সুখমণি দেববর্মা। সন্ত্রাসবাদী আতংক কেটে যাওয়ার পর গত কয়েক বছরে ধলাই জেলার ছামনুর প্রত্যন্ত এলাকার চিত্রপট দ্রুত বদলে গেছে।
আজ থেকে দশ বছর আগেকার কথা। রাজ্যের আরক্ষা প্রশাসনের মানচিত্রে অতি স্পর্শকাতর এলাকা হিসাবে চিহ্নিত ছিল ধলাই জেলার ছামনু ব্লক এলাকা। সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ার সুবাদে সন্ত্রাসবাদীরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে হত্যা বা অপহরণ করার পর ছামনুর প্রত্যন্ত এলাকাগুলিকে জঙ্গীরা গোপন ডেরা হিসাবে ব্যবহার করত। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬-এই সময় কাল পর্যন্ত-সন্ত্রাসবাদীরা রাজ্যের যে কোন স্থানে খুন, সন্ত্রাস, অপহরন চালিয়ে নিরাপদ আশ্রয় স্থল হিসাবে ছামনু ব্লকের ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের নিশাহতে পাড়া, ওয়াখীরাম পাড়াগুলি জঙ্গীদের আস্তানা হয়ে উঠেছিল। সেসময়ে সরকারী সব রকম উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের কাজ স্তব্ধ হয়েগিয়েছিল।শিক্ষা ব্যাবস্থা, স্বাস্থ্যপরিসেবা, পানীয় জল ও বিদ্যুৎ সম্প্রসারন যোগাযোগ ব্যবস্থা – সবকিছুর ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ প্রধান প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।
ঐসময় ধলাই জেলার প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকাগুলিতে কাঁটা তারের বেড়া ছিল না। ফলে যে কোন সন্ত্রাসী হামলার পর এন.এল.এফ.টি জঙ্গীরা অতিসহজেই সীমান্তের ওপারে গা-ঢাকা দিতে পারত। সেসময়ে সীমান্তের ঐ পারে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও খাগরীছড়িতে ছিল জঙ্গীদের বেস ক্যাম্প । ঐখানেই সন্ত্রাসবাদীরা নুতন নুতন জঙ্গীদের প্রশিক্ষন দিত, অপহরন করে মুক্তিপনেরও অর্থ এবং জুলুমবাজি করে সংগৃহীত টাকা পয়সা – সমস্ত কিছুই জঙ্গীরা তাদের বেস ক্যাম্পে জমা দিত। এসব কথা পরবর্তী সময়ে আত্মসমর্পনকারী জঙ্গীদের বিবৃতি থেকে জানা গিয়েছে।
ভারত-পাক যুদ্ধের বছরে, ১৯৭১ সালে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বেস ক্যাম্পটি স্থাপন হয়েছিল ধলাই জেলার ছামনু এলাকায়। ছামনু বাজারের খানিকটা দূরে পাহাড়ের মাথায়। অতীতে বহুক্ষেত্রে এই বি.এস.এফ. বেস ক্যাম্প সন্ত্রাসবাদ দমনে ও সীমান্ত এলাকায় সুনিশ্চিত নিরাপত্তা বিধানে বি.এ.এফ.-এর বেস ক্যাম্পটি বারবারই বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। ছামনু এলাকার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় জঙ্গীদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল বি এস এফ-এর অসমসাহসী জওয়ানরা। কিন্তু দু:স্বপ্নের দিন ঘনিয়ে এল ২০০৪ সালের মে মাসের এক তপ্ত দুপুরে। জঙ্গীদের আচমকা গোপন অ্যাম্বুস-এ বি এস এফ-এর ২২নং ব্যাটেলিয়ানের জি-কোম্পানির ১ জন এসিসটেন্ট কমান্ডেন্ট সহ ৫জন জওয়ান শহীদ হয়েছিল। কাপুরুষ জঙ্গীদের গোপন বুলেটের শিকার হন এসিসটেন্ট কমান্ডেন্ট কে কে যাদব এবং জওয়ান কৃপাল সিং, সামসের সিং, কিষাণ লাল, নেথা রাম, এ কে মিনাজ।
ঐ সময় সন্ত্রাসবাদীরা দিন দুপুরে ছামনু বাজারে কতিপয় ব্যবসায়ীকে তুলে নেয়। কিন্তু রুখে দাঁড়ায় বি এস এফ-এর জওয়ানরা। ব্যবসায়ীদের সীমান্তের ওপারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল জঙ্গীরা। কিন্তু বি এস এফ-এর জওয়ানরা সন্ত্রাসবাদীদের পিছু ধাওয়া করলে অপহৃত ব্যবসায়ীদের ছেড়ে পালিয়ে যায় কাপুরুষের দল, সীমান্তের ওপারে গা-ঢাকা দেয় এন.এল.এফ.টি সন্ত্রাসীরা। পরিস্থিতি সাময়িকভাবে থমথম হয়ে পড়ে। এরপর বেস ক্যাম্প থেকে ছামনু বাজারের ২ কিমি পূর্ব দিকের এলাকায় সন্ত্রাসবাদীদের গোপন ডেরায় হানা দেয় বি এস এফ-এর বাহিনী। জওয়ানদের প্রবল পরাক্রমের সামনে পড়ে বিহ্বল হয়ে পড়ে জঙ্গীরা। বি এস এফ-র গুলিতে দুজন সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছিল, উদ্ধার করা হয়েছিল একে 47 রাইফেল।
সন্ত্রাসবাদীদের কোনঠাসা করতে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উদ্যোগে সীমান্ত এলাকার কাঁটাতারের বেড়া নির্মানের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফলে অতীতের মত সাবলীলভাবে সন্ত্রাসবাদীরা সীমান্ত পেরিয়ে আসতে পারতো না। একদিকে কাঁটা তারের বেড়া ও অন্য দিকে ভারতীয় রক্ষীবাহিনীর সীমান্তের বিওপি-র কঠোর টহলদারী, পাশাপাশি টি এস আর বাহিনীর আরওপি ডিউটি – সব মিলিয়ে ঐ সময় থেকে ছামনুর অতি স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে সন্ত্রাসবাদীদের দৌরাত্ম হ্রাস পেতে থাকে। কেননা গোটা ধলাই জেলা ছিল তখন আতঙ্কের এলাকা। কিন্ত ত্রিপুরার সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেওয়ার ফলেই ছামনুর অতিস্পর্শ কাতর এলাকা হিসাবে চিহ্নিত। ৩২ মাইল কান্তমনিপাড়া, বিজু, আনন্দহরি পাড়া বুদ্ধিজয়পাড়া ইত্যাদি সীমান্ত গুলিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর BO.P –স্থাপনের ফলে সন্ত্রাসবাদীরা ওপারের সীমান্ত আতিক্রম করে রাজ্যে প্রবেশ করে সন্ত্রাস চালানোর কার্যকলাপ চালাতে দিনেদিনে কোনঠাসা হয়ে পড়ে। যদিও সন্ত্রাসবাদীদের সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ দমন করতে অতীতের দু:স্বপ্নের দিনগুলিতে কেন্দ্রীয় সামরিক ও অসামরিক বাহিনীর বহু জোয়ান, সরকারের আধীকারীক সহ রাজ্য আরক্ষাবাহিনীর বহু জোয়ান সন্ত্রাসবাদীদের বুলেটে শহীদের রক্ত ঝরেছে- শহীদজোয়ানদের রক্ত ব্যার্থ হয়নি। ফলে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। বদলেগেছে এলাকার চেহারা।নুতনভাবে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় সংযোজিত পাকা রাস্তা ,সেতু, শেক্ষার ক্ষেত্রে সংযোজিত হয়েছে গ্রামীন এলাকা গুলিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, চাষাবাদের ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।